নবীনগরের সাংবাদিকদের নিয়ে জনমনে হতাশা, সচেতন মহলের প্রশ্ন..

আইএনবি ডেস্ক: বেশকিছুদিন যাবৎ লক্ষ করা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলোতে কতিপয় সাংবাদিকদের মধ্যে কাদা ছুড়াছুড়ি হচ্ছে। যা সাধারন এবং সচেতন মানুষ মেনে নিতে পারছে না। প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে নবীনগরের সাংবাদিকতার পেশা।

একজন আরেকজনকে বলছে ভূয়া সাংবাদিক। যদি তাই হয়ে থাকে তাহলে এর দায়ভার কি নবীনগরের গোটা সাংবাদিকদের উপর বর্তায় না? প্রশ্ন আসাটা স্বাভাবিক। তাহলে এতোদিন ধরে যারা সাংবাদিক পেশায় নিয়োজিত ছিল এবং একজন আরেকজনকে আঁকড়ে ধরে থাকতো তারা তখন কেন বলেননি ভূয়া সাংবাদিক? তাহলে কি বলবো ব্যাক্তিস্বার্থে টান পরে যাওয়ায় কি এমনটা হচ্ছে, নাকি এর ভিতরে গুরুতর কিছু অজানা সত্য লুকিয়ে আছে?

নবীনগরের কথা নামক একটি সসাপ্তাহিক পত্রিকার সম্পাদক এবং অনলাইন ফেইসবুক টকশো অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ও সঞ্চালক, দৈনিক কালেরকণ্ঠ পত্রিকার নবীনগর প্রতিনিধি গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুকে নিয়ে সম্প্রতি বিতর্কের ঝড় বইছে।

শোনা যাচ্ছে তাঁকে কোনঠাসা করে রাখার অপচেস্টায় এলাকার কতিপয় ব্যাক্তিরা উঠে পরে লেগেছে। প্রশ্ন উঠছে তার সাংবাদিকতা পেশা নিয়ে। যদিও তাঁর সাংবাদিকতা পেশায় অসততার প্রমান এখন পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

নবীনগরের কথা টকশো অনুষ্ঠানের ২৬তম পর্বকে নিয়ে সম্প্রতি সময়ের জন্য আলোচনায় চলে আসেন গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু। সে অনুষ্ঠােনের অতিথি ছিলেন নবীনগরের দুজন গর্বিত সন্তান। একজন হলেন আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় উপকমিটির সদস্য, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ এবং আরেকেজন হচ্ছেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামীলীগের যুগ্ম (প্রথম) সাধারণ সম্পাদক কাজী মোর্শেদ হোসেন কামাল। কি কথা হয়েছিল সেই টকশোতে?
নিচের লিংকটি দেখুন-

https://fb.watch/5jFcrPMx8q/

অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ২৫ এপ্রিল সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর বাসার সামনে এসে ১৫/২০ জন সন্ত্রাসী তাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে প্রাণনাশের হুমকি দেয়। সন্ত্রাসীরা যাওয়ার আগে অপুকে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলে যায়, সাংবাদিকতা করতে হলে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুলের বিরুদ্ধে কোনো নেতিবাচক লেখালেখি কিংবা টকশোতে কোনো নেতিবাচক কথা বলা যাবে না।

এ বিষয়ে গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু গত ২৫ এপ্রিল তার ফেইসবুক আইডিতে পোস্ট করা লেখা হুবুহু তোলে ধরা হলো-

এমপি’র বিরুদ্ধে লেখালেখি কিংবা টকশোতে কথা বললে, আমার হাত পা কেটে নেয়া হবে বলে এবার আমাকে হুমকী দিয়ে গেল সন্ত্রাসীরা—————!!!
নবীনগরে এমন পরিবেশ হবে, বিশ্বাস করতেও কষ্ট হচ্ছে!!!
বন্ধুগণ,
আজ রাত আনুমানিক সাড়ে দশটার দিকে মাঝিকাড়া গ্রামের ১৫/২০ টি ছেলে আমার বাসার সামনে আকস্মিকভাবে এসে আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করতে থাকে। নবীনগরে সাংবাদিকতা করতে হলে, স্থানীয় এমপি এবাদুল করিমের বিরুদ্ধে কিছু লেখা যাবে না, কোন টকশোতে এমপি’র বিরুদ্ধে কথা বলা যাবে না। ভবিষ্যতে এমপির বিরুদ্ধে যদি পত্রিকায় কিছু লেখা হয়, কিংবা টকশোতে কিছু বলা হয়, তাহলে আমার হাত পা কেটে নেয়া হবে বলে চিৎকার করে হুমকী দিতে থাকে এবং আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করতে থাকে।
এ সময় আমি নবীনগর থানার ওসি আমিনুর রশীদকে মুঠোফোনে বিষয়টি জানালে, তিনি তাৎক্ষণিকভাবে ওসি (তদন্ত) নূরে আলমের নেতৃত্বে ৫/৬ জন এস আইকে দ্রুত নবীনগর আদালত সড়কে অবস্থিত আমার বাসার সামনে পাঠান।
কিন্তু পুলিশ আসার আগেই উশৃংখল ছেলেরা পালিয়ে যায়। উল্লেখ্য, গত শুক্রবার নবীনগরের কথা আয়োজিত ‘নবীনগরের উন্নয়ন ও সামগ্রিক প্রেক্ষাপট এবং জনগণের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি’ শিরোনামের একটি টকশোতে ঢাকা মহানগর (দক্ষিণ) আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক কাজী মোরশেদ হোসেন কামাল ও জেলা আওয়ামীলীগের শিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জাকির আহাম্মদ নবীনগরের সামগ্রিক প্রেক্ষাপট নিয়ে খোলামেলা আলোচনা করেন।
এরপরই স্থানীয় এমপি’র অনুসারীরা আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। এরপর গতকাল এমপি এবাদুল করিমের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে পরিচিত উপজেলা আওয়ামীলীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম নজু’র অনুসারী মাঝিকাড়ার বাসিন্দা সুমন উদ্দিন তার ফেসবুকে আমাকে দেখে নেয়ার হুমকী দিয়ে একটি পোস্ট দেন।
ওই পোস্টের পরই আজ রাত সাড়ে দশটায় মাঝিকাড়ার ১৫/২০ জন ক্যাডার আমার বাসার সামনে এসে আমাকে হত্যার হুমকী দিয়ে গেল!
বিষয়টি আমি তাৎক্ষণিকভাবে কালের কণ্ঠের উর্ধতন কর্তৃপক্ষ, জেলার উর্ধতন পুলিশ কর্তৃপক্ষ, নবীনগরের উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, ইউএনও মহোদয়সহ আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতৃবৃন্দ এবং ঢাকা ও জেলার শীর্ষ সাংবাদিক নেতৃবৃন্দকে মুঠোফোনে অবগত করি।
বন্ধুগণ,
গত ২৬ বছরের সাংবাদিকতায় আমি এই শান্ত নবীনগরে এমন অপ্রত্যাশিত ন্যক্কারজনক ঘটনার নজির কখনও দেখিনি।
নবীনগরের পরিবেশ কখনই এমন ছিলনা। নবীনগর কেন এতটা অশান্ত হয়ে উঠছে, কারা এসব করছে, আমি জানিনা। তবে সংস্কৃতির শহর এই নবীনগরে এসব কোনভাবেই মানায় না।
তাই মাননীয় সাংসদ পরম শ্রদ্ধেয় এবাদুল করিম বুলবুল ভাইকে আমার জীবনের নিরাপত্তাসহ জঘণ্য এ ঘটনাটির কঠোর প্রতিকার করার জন্য আমি বিনয়ের সঙ্গে অনুরোধ করছি।।

সাংবাদিক অপু জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে থানায় লিখিত জিডি করেন (জিডি নং-১২৯৬)। যা বিভিন্ন জাতিয় পত্রিকা গুলোতে কালেরকন্ঠ পত্রিকার নবীনগর প্রতিনিধি সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ কে হত্যার হুমকি সহ বিভিন্ন শিরোনামে ফলাও করে নিউজ করা হয়েছে। এরপরই স্থানীয় সংসদ সদস্য এবাদুল করিম বুলবুল ঘটনায় নিন্দা প্রকাশ করে সুমন উদ্দিন কে গ্রেপ্তারের জন্য নবীনগর থানার ওসি আমিনুর রশীদকে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশ দিয়েছেন। এমনকি সাংবাদিক অপুর সাথে মুঠো কথা বলেন, যা অপুর ফেইসবুক থেকে জানা যায়।

নবীনগর অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম এর সভাপতি জাহাঙ্গীর আলম খান সিসি টিভির ফোটেজ সহ তার ফেইসবুক আইডিতে লিখেন-
নোয়াফের সাধারণ সম্পাদক সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুকে হুমকিদাতা সন্ত্রাসী গ্রুপের সিসিটিভি ফুটেজ থানা পুলিশের হাতে। আশাকরি মাননীয় সাংসদ জনাব এবাদুল করিম বুলবুল মহোদয়ের ডিরেক্ট আদেশ বাস্তবায়নে এ ফুটেজগুলো যথাযথ ভুমিকা পালন করবে।

যার পরিপ্রেক্ষিতে আত্মরক্ষা কিংবা গ্রেফতার এড়াতে আসামীদ্বয় আত্মগোপন করেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য, এ অবস্থায় গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে গ্রামের কিছু নারীরা অপুর বিরুদ্ধে একটি মিছিল বের করে। যেখানে সরকারের লকডাউনে মিছিল মিটিং বন্ধ থাকলেও, থানা গেইটে নারীরা বিভিন্ন আপত্তির শ্লোগান দিয়ে সুমন নামে ব্যাক্তিকে গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু গুম করেছেন বলে অভিযোগ তোলেন। এমনকি নবীনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক সম্পাদক নজরুল ইসলাম নজু সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর বিরুদ্ধে স্থানীয় আওয়ামীলীগ অফিসে সাংবাদিক সম্মেলন করেন।

ঝাড়ু মিছিল, সাংবাদিক সম্মেলনের কার্যকলাপ গুলো ফলাওভাবে স্থানীয় সাংবাদিকরা নিউজ করেছেন। তবে উপরেল্ল্যেখিত, অপুর হাত পা কেটে ফেলার সংবাদ তেমন একটি প্রকাশ করেননি স্থানীয় সাংবাদিকরা যা পরবর্তিতে নবীনগরে অনেক সাংবাদিকদের নিয়ে জনমনে নানান প্রশ্ন উঠছে।

কিন্তু কিছুদিন পরই সুমন উদ্দিন নিজেই তার ফেসবুক আইডি থেকে এক পোস্টে জানিয়েছেন, তিনি গুম হননি। পুলিশের ভয়ে আত্মগোপনে আছেন। বিষয়টি এখন নবীনগরে ‘টক অব দ্যা টাউন’-এ পরিণত হয়েছে। তবে অন্য কোনো ঘটনা সাজিয়ে সাংবাদিক অপুকে যেকোনো মামলায় ফাঁসানো হতে পারে বলেও এলাকায় আলোচনা আছে এমনটাই জানান গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু।

এদিকে বাড়িতে এসে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার ঘটনার ১০ দিন পরও জড়িতরা পুলিশের ধরাছোঁয়ার বাইরে থাকায় সাংবাদিক অপুর গোটা পরিবার এখনো উৎকণ্ঠায় দিন কাটাচ্ছেন। যেকোনো সময় তাঁর পরিবারের ওপর হামলা হতে পারে বলেও আশঙ্কা করা হচ্ছে।

এতো কিছুর পরও কতিপয় কয়েকজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে (ফেইসবুকে) গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুকে নিয়ে নানা রকম অকথ্য আক্রমানাত্মক লেখালেখি নবীনগরের সকল সাংবাদিকদের নিয়ে সচেতন মহলে প্রশ্ন উঠছে। এর থেকে উত্তোলন চায় সচেতন মহল।

এ বিষয়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (নবীনগর সার্কেল) মকবুল হোসেন জানান, আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। পাশাপাশি সাংবাদিক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর করা জিডিটি আদালতে পাঠানো হয়েছে। এখন আদালতের নির্দেশনা মোতাবেক যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

আইএনবি/সম্পাদনা-এমডি বাবুল ভূঁইয়া