জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব: বাড়ছে পানি, ভাঙছে মাটি

মোহাম্মাদ সাদ্দাম হোসেন: নাফ নদীর মোহনা থেকে রায়মঙ্গল-কালিন্দী নদী পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল। এর দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। উন্নত বিশ্বের অতিমাত্রায় কার্বন নির্গমনের কারণে তাপমাত্রা বাড়ছে। এর প্রভাবে বাংলাদেশের বঙ্গোপসাগরসহ উপকূলের নদ-নদীতে পানির স্তর প্রতি বছরই হু হু করে বাড়ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রতি বছর বাড়ার হার তিন সেন্টিমিটার। পানি বাড়ার কারণে তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে দেশ। বহু গ্রাম এরই মধ্যে সাগর-নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এ বছর নদীভাঙনের কবলে প্রায় ২৮ হাজার মানুষ বাস্তুহারা হতে পারে। পানিতে লবণের মাত্রাও বাড়ছে। এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দেশের অর্থনীতিতে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
উপকূলে পানি বাড়ার চিত্র: বঙ্গোপসাগরের উপকূলীয় এলাকাসহ দেশের নদ-নদীর ৫৩টি স্থানে সারাক্ষণ জোয়ার-ভাটার পানির স্তর পরিমাপ করে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআইডব্লিউটিএ)। বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দুই প্রান্তে অবস্থিত কক্সবাজার ও সুন্দরবন। মধ্যবর্তী এলাকায় পটুয়াখালীর কলাপাড়া (খেপুপাড়া) উপজেলায় অবস্থিত কুয়াকাটা সৈকত। বঙ্গোপসাগরের এই তিন উপকূলীয় অঞ্চলের গত তিন বছরে বিআইডব্লিউটিএ’র পানির সর্বোচ্চ স্তর পরিমাপের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২০১৯ সালের ৭ জুলাই দুপুর ২টা ২৪ মিনিটে কক্সবাজার এলাকায় পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল দুই দশমিক ২৪ মিটার। একই বছরের ২ জুলাই সকাল ১০টা ১০ মিনিটে খেপুপাড়ায় পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল দুই দশমিক ১১ মিটার। ওই বছরের ২ জুলাই সকাল ছয়টায় সুন্দরবনের হিরন পয়েন্টে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল তিন দশমিক ৬৬ মিটার। গত বছরের ২০ আগস্ট বেলা ১১টা ৪০ মিনিটে কক্সবাজারে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল দুই দশমিক ৩৬ মিটার। ২০২০ সালের ২০ আগস্ট বেলা ১১টা ১৫ মিনিটে খেপুপাড়ায় পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল দুই দশমিক ৪৬ মিটার। একই বছরের ২০ আগস্ট দুপুর ২টা ৩৬ মিনিটে সুন্দরবনের হিরন পয়েন্টে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল তিন দশমিক ৫৬ মিটার। চলতি বছরের ২৬ এপ্রিল সকাল ১০টা ২০ মিনিটে কক্সবাজারে পানির সর্বোচ্চ উচ্চতা ছিল দুই দশমিক ৪৯ মিটার। গত ২৫ এপ্রিল রাত ১০টা ৪৫ মিনিটে খেপুপাড়ায় সর্বোচ্চ পানির উচ্চতা ছিল দুই দশমিক ৬৮ মিটার। গত ২৫ জুন বেলা ১১টা ১০ মিনিটে সুন্দরবনের হিরন পয়েন্টে সর্বোচ্চ পানির উচ্চতা ছিল তিন দশমিক ৫৬ মিটার। ডিজিটাল পদ্ধতিতে বিআইডব্লিউটিএ’র নির্দিষ্ট এই সময়ভিত্তিক রেকর্ড করা পানির উচ্চতাই বলে দিচ্ছে বাংলাদেশর নদ-নদীর পানি কীভাবে বাড়ছে। পানির উচ্চতা বাড়ায় সাগর, নদ, নদীর তান্ডবে উপকূলজুড়ে তীব্র ভাঙন দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন।
জানতে চাইলে বিআইডব্লিউটিএ’র হাইড্রোগ্রাফি বিভাগের যুগ্ম (টাইড) পরিচালক মো. আলফাজ উদ্দিন আজকালের খবরকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাবে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ছে। উত্তরগোলার্ধের এন্টার্কটিকা, সাইবেরিয়াসহ শীত প্রধান অঞ্চলের সাগর, পাহাড়ের বরফ গলে পানিতে পরিণত হচ্ছে। যে কারণে পৃথিবীর পানির স্তর আগের চেয়ে অনেক বেড়েছে। এর প্রভাবে আমাদের দেশের সাগর, নদ, নদীর পানি বেড়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমরা অত্যাধুনিক প্রযুক্তির মাধ্যমে সার্বক্ষণিক পানি পরিমাপ করি।
বঙ্গোপসাগরের পানির উচ্চতা বাড়ার কারণে হুমকির মুখে পড়েছে দেশের অন্যতম সমুদ্র সৈকত সাগরকন্যাখাত কুয়াকাটা। প্রতিদিনই ঢেউয়ের তান্ডবে বালু ক্ষয়ে সৈকতের আয়তন কমছে। এরই মধ্যে বিশাল এলাকা বঙ্গোপসাগরে বিলীন হয়ে গেছে।
কুয়াকাটা পৌরসভার মেয়র আনোয়ার হাওলাদার বলেন, বঙ্গোপসাগরের স্রোতের ও পানির উচ্চতা আগের চেয় অনেক বেড়েছে। জোয়ারের সময়ে স্রোতের তীব্র টানে সৈকতের বালু সাগরে ভাসিয়ে নিয়ে যায়। এভাবে বালু ক্ষয়ে সৈকতের বিশাল এলাকা সাগরে পরিণত হয়েছে। এক যুগ আগেও কুয়াকাটা সৈকত এভাবে ভাঙতো না। জুলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এমনটা হচ্ছে বলে তিনি মনে করেন।
পরিবেশ নিয়ে কাজ করা বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতি’র (বেলা) কুয়াকাটার নেটওয়ার্কিং সদস্য ও কুয়াকাটা খানাবাদ কলেজের সহকারী অধ্যাপক খান এ রাজ্জাক আজকালের খবরকে বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গত এক দশকে অন্তত তিন কিলোমিটার বিচ সাগরে ভেঙে গেছে। কুয়াকাটার নান্দনিক নারিকেল, ঝাউ বাগানসহ পাঁচটি মৌজা সাগরের মিশে গেছে। মানচিত্র থেকে তিনটি গ্রাম হারিয়ে গেছে।
তিনি আরো বলেন, জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে ক্ষণে ক্ষণে সাগরে নিম্নচাপ সৃষ্টি হয়। প্রতি বছরই ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের সংখ্যা ও তান্ডব বেড়েছে। কুয়াকাটাসহ কলাপাড়া উপজেলার লালুয়া, মহিপুর, লতাচাপলী, চম্পাপুর, ধানখালী, নীলগঞ্জ ইউনিয়নের অনেক গ্রাম নদীভাঙনে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। নদীভাঙনের কারণে এলাকার বহু মানুষ এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। তারা পেশা পরিবর্তন করতে বাধ্য হয়েছেন। পানির স্তর বেড়ে কৃষি জমিতে লবণ পানি প্রবেশ করায় জমির উর্বরতা নষ্ট হচ্ছে।
তথ্যমতে, টেকনাফের নাফ নদীর মোহনা থেকে সাতক্ষীরা জেলার সীমান্ত নদী রায়মঙ্গল-কালিন্দী পর্যন্ত বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলের দৈর্ঘ্য ৭১০ কিলোমিটার। এর মধ্যে সুন্দরবন ১২৫ কিলোমিটার। সুন্দরবন ছাড়াও উপকূলে রয়েছে নদীর মোহনা ও ছোট-বড় দ্বীপমালা ২৭৫ কিলোমিটার, সমতল ও সমুদ্র সৈকত ৩১০ কিলোমিটার উপকূলীয় অঞ্চল। উপকূলেই দেশের প্রধান তিনটি সমুদ্রবন্দর চট্টগ্রাম, মোংলা ও পায়রা। দেশের ২৫ শতাংশ মানুষ উপকূল অঞ্চলে বসবাস করে। জাতীয় অর্থনীতিতে জিডিপির প্রায় ২৫ শতাংশ অবদানও উপকূলীয় এ অঞ্চলের। দেশের এক-দশমাংশ এলাকা উপকূল। এখানে প্রতি বর্গকিলোমিটারে বসবাস করেন গড়ে ৭৪৩ জন। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রতিনিয়ত দুর্যোগের আঘাতে উপকূলের কোটি কোটি মানুষের জীবন, সম্পদ বিপন্ন হয়ে পড়ে। বিশ্বমানচিত্রে বঙ্গোপসাগরের ফানেল আকৃতির উপকূলে বাংলাদেশের অবস্থান হওয়ায় প্রতিবছর ঘূর্ণিঝড় ‘চ্যানেল’ হিসেবে বেছে নেয়। বৈশ্বিক আবহাওয়া বিপর্যয়ের কারণে বাংলাদেশে বিগত ৪৯ বছরে ১৫৪টি  ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের ঘটনা ঘটেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, শুধু পটুয়াখালীর কলাপাড়া-কুয়াকাটা সাগর, নদীতে ভাঙছে না। পুরো উপকূল তীব্র ভাঙনের কবলে পড়েছে। কক্সবাজার থেকে সুন্দরবন পর্যন্ত বিশাল উপকূলীয় এলাকার অনেক গ্রাম সাগর নদীতে ভেঙে মানচিত্র থেকে হারিয়ে গেছে। দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ভাঙনের তীব্রতা দেখা দিয়েছে। সরকারের ট্রাস্টি প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর এনভায়রনমেন্টাল অ্যান্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (সিইজিআইএস) সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৯৭৩ সাল থেকে প্রায় পৌনে দুই হাজার বর্গকিলোমিটার এলাকা নদীতে বিলীন হয়েছে। এতে প্রায় ১৭ লাখ ১৫ হাজার মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, বঙ্গোপসাগরে হু হু করে পানি বাড়ায় এবং বর্ষা মৌসুম শেষে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের পানি বঙ্গোপসাগরে পতিত হওয়ায় নদীর তীরে তীব্র ভাঙন দেখা দেয়। মেঘনার তান্ডবে চাঁদপুর, ভোলা, নোয়াখালী ও লক্ষ্মীপুুর, সন্ধ্যা ও সুগন্ধা নদীর কারণে বরিশালের তেঁতুলিয়া, আগুনমুখা, রামনাবাদ চ্যানেলের প্রবাহে পটুয়াখালীর বলেশ্বর ও পায়রার প্রবাহে বরগুনা পিরোজপুর, ঝালকাঠি, বাগেরহাট এলাকায় ভাঙন দেখা দেয়। এছাড়া কচা, ভৈরব ও ময়ূর নদ ও রূপসা চ্যানেলের কারণে খুলনা, সাতক্ষীরায় ভাঙন দেখা দেয়। পাহাড়ি ঢল, কর্ণফুলী, সন্দ্বীপ চ্যানেলের তান্ডবে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারসহ চট্টগ্রাম বিভাগে ভাঙন দেখা দেয়। এছাড়া পদ্মা, যমুনা, বহ্মপুত্র, কুশিয়ারার স্রোতে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলে ভাঙনের সৃষ্টি হয়।
সিইজিআইএস তথ্যানুযায়ী, গত বছর প্রায় ৩৪ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিলীন হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ কয়েক দফা বন্যায় এ ক্ষতি হয়েছে। চলতি বর্ষা মৌসুমে দেশের উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের ১৩ জেলা ভয়াবহ নদীভাঙনের কবলে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। জেলাগুলো হলো- কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ী, রাজশাহী, পাবনা, কুষ্টিয়া, ফরিদপুর ও মাদারীপুর। পদ্মা, গঙ্গা ও যমুনা নদীর ভাঙনে প্রায় ২৮ বর্গকিলোমিটার এলাকা বিলীন হতে পারে। এছাড়া নদীতে পৌনে চার কিলোমিটার বেড়িবাঁধ, ২৪১ মিটার মহাসড়ক, সাড়ে তিন কিলোমিটার জেলা ও দেড় কিলোমিটার গ্রামীণ সড়ক হারিয়ে যেতে পারে। ভাঙনে দোকানপাট, বসতবাড়ি, শিক্ষা ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, হাটবাজার এমনকি হাসপাতালও বিলীন হতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা জানান, দেশে মূলত মে-জুন থেকে নদীভাঙন শুরু হয়ে অক্টোবর পর্যন্ত চলে। ২০০৪ সাল থেকে সিইজিআইএস ভাঙন পূর্বাভাস দিচ্ছে। ২০২০ সালে স্যাটেলাইট চিত্র থেকে তৈরি ভাঙন পূর্বাভাস দেওয়া হয়। সিইজিআইএসের ‘নদীভাঙন পূর্বাভাস-২০২১’ এ বলা হয়েছে, এ বছর দেশের প্রধান দুই নদী অববাহিকা ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মার ২০টি স্থান ভাঙনের ঝুঁকিতে আছে। সংস্থাটি বলছে, এবারের মৌসুমে ডিসেম্বর পর্যন্ত পদ্মা-গঙ্গা এবং ব্রহ্মপুত্র-যমুনা পাড়ে ভাঙন চলতে পারে। এতে ৩৪২টি বসতবাড়ি, ৪০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, একটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র, ২৬টি মসজিদ-মন্দির, পাঁচটি হাটবাজার, দুটি সরকারি ও দুটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আছে। বিশেষজ্ঞরা আরো জানান, সাধারণত এক বর্গকিলোমিটার এলাকায় এক হাজার মানুষের বসবাস আছে। সেই হিসাবে এ বছরে নদীভাঙনের কারণে বাস্তুহারা হতে পারেন প্রায় ২৮ হাজার মানুষ।
জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক পানিসম্পদ ও জলবায়ু বিশেষজ্ঞ ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য প্রফেসর ড. আইনুন নিশাত আজকালের খবরকে বলেন, আমাদের উপকূলে পানির স্তর বাড়ছে এটি প্রমাণিত। প্রতি বছর গড়ে তিন সেন্টিমিটার পানির স্তর বাড়ছে। সুন্দরবন অঞ্চলের চেয়ে কক্সবাজার এলাকায় পানি বেশি বাড়ছে। গত এক দশকে ২০ সেন্টিমিটার পানি বেড়েছে। ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাড়ছে।  উপকূলের নদীতে লবণের মাত্রা বাড়ায় কৃষিজমি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অর্থনীতিতে প্রভাব পড়েছে। মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। শিল্পায়াতি দেশগুলোর অতিমাত্রায় কার্বন নিঃসরণের কারণে সারা পৃথিবীতে এ ঘটনা ঘটছে।
তিনি আরো বলেন, ২০১৫ সালে প্যারিসে জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত বিশ্বের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমেনি। আমাদের দেশে অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা হয়। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এখন থেকে ভবিষ্যতে কী ঘটতে পারে সেটি ভেবে পরিকল্পনা করতে হবে। উপকূল রক্ষায় আরো উঁচু ও টেকসই বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। লবণসহিষ্ণু ফসলের জাত আবিষ্কার করতে হবে।
বঙ্গোপসাগরে পানির স্তর বাড়ায় স্রাোতের তান্ডবে লন্ডভন্ড কুয়াকাটা সাগর সৈকত- -ছবি আজকালের খবর
বঙ্গোপসাগরে পানির স্তর বাড়ায় স্রাোতের তান্ডবে লন্ডভন্ড কুয়াকাটা সাগর সৈকত- -ছবি আজকালের খবর

বর্তমানে ভাঙছে যেসব এলাকা: পটুয়াখালী, বরগুনা, ভোলা, সাতক্ষীরা, নোয়খালীসহ উপকূলের ১৯ জেলার বিভিন্ন পয়েন্টে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

কুড়িগ্রামে ধরলা, তিস্তা, ব্রহ্মপুত্র, দুধকুমারসহ ১৬টি নদ-নদীর ২৫ জায়গায় এখন ভাঙন চলছে। জেলার বিদ্যানন্দ, বজড়া, বেগমগঞ্জ, কালীগঞ্জসহ ১৭টি জায়গায় জরুরি ভিত্তিতে ভাঙনরোধে কাজ করছে পাউবো। গাইবান্ধার ৩৩টি পয়েন্ট দিয়ে পানি প্রবেশ করছে লোকালয়ে। তিস্তার পানিতে ডুবেছে জেলার সুন্দরগঞ্জের হরিপুর, কাপাসিয়া। ব্রহ্মপুত্রের স্রোতে বিলীন হচ্ছে সদরের কামারজানির কয়েক জায়গা। ফুলছড়ি ও সাঘাটার পাঁচ ইউনিয়নের বসতবাড়ি ভেসে যাচ্ছে স্রোতে। টাঙ্গাইলের সদর, গোপালপুর, ভূঞাপুর, কালিহাতী ও নাগরপুরে শুরু হয়েছে ভাঙন। যমুনার প্রবল স্রোতের মুখে টাঙ্গাইলের এক হাজার ২৬৩ হেক্টর জমি-বসতবাড়ি রয়েছে ঝুঁকির মুখে। গত বছর সদরের কাকুয়া ইউনিয়নের চরপৌলি ও কাকুয়া গ্রামে ব্যাপক ভাঙনের পর এবারও ভাঙছে। যমুনার ভাঙনে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরের পাঁচিল ইউনিয়নের হাট পাঁচিল গ্রামের অর্ধেক বিলীন হয়ে গেছে এরই মধ্যে। ফরিদপুর সদরের গোলডাঙ্গি, হাজীডাঙ্গী ও ভাঙ্গার মাথা এলাকায় ভাঙন অব্যাহত আছে। কম-বেশি ভাঙছে জামালপুর, রাজবাড়ী, কুষ্টিয়ায়ও।
জানতে চাইলে ঢাকা ইউনিভার্সিটি অফ ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজির (ডুয়েট) জলবায়ু পরিবর্তন ও স্থায়ী কেন্দ্রীয় গবেষণা ইনস্টিটিউটের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আকরামুল আলম আজকালের খবরকে বলেন, অতিমাত্রায় কার্বন নির্গমনের কারণে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই পানির স্তর উত্তপ্ত। পানির স্তর বেড়ে যাওয়ার কারণে নদী ভাঙনের সৃষ্টি হচ্ছে। পানিতে মাত্রাতিরিক্ত লবণের কারণে উপকূলের মানুষ কৃষিজমিতে ফসল চাষ বাদ দিয়ে এখন চিংড়ির ঘের করছে। মিঠাপানির প্রবাহে লবণ পানি প্রবেশ করায় জীববৈচিত্র্য ধ্বংস হচ্ছে। আমাদের সুপেয় পানির উৎস কমে যাচ্ছে। তিনি আরো বলেন, তাপমাত্রা বাড়ার কারণে অনেক প্রাণী সহ্য করতে না পেরে বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (জলবায়ু পরিবর্তন অনুবিভাগ) মো. মিজানুল হক চৌধুরী বলেন, শুধু বাংলাদেশের নয়, সারা বিশ্বের সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে। উন্নত বিশ্বের অতিমাত্রায় কার্বন নির্গমনের ক্ষতির শিকার হচ্ছি আমরা। বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। বিশ্বের তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আমাদের সাগর-নদীর পানির উচ্চতা বাড়ছে। জলবায়ুর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত এলডিসিভুক্ত দেশগুলোর মাধ্যমে আমরা বৈশ্বিক কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমিয়ে আনার চেষ্টা করছি। এছাড়া আমরা মিউটিগেশন ও অ্যাডাপটেশন দুইভাবেই কাজ করছি। কার্বন নির্গমনের মাত্রা কমলে তামপাত্রা কমে বরফগলা কমে যাবে। তখন ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস কমবে।