আর্ন্তজাতিক ডেস্ক: ভারতে লকডাউনের কারণে প্রবল ভাবে বেড়েছে মানবপাচার। শুধু মেয়েরাই নয়, বিপদে পড়েছে ছেলারাও এবং তাদের অধিকাংশই নাবালক। যৌনপেশায় নামানোর জন্য হোক বা ভিক্ষাবৃত্তি, জোর করে বিয়ে দেওয়া হোক বা বন্ডেড লেবার দেশজুড়েই বাড়ছে এই প্রবণতা। সে জন্য সব রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলের মুখ্যসচিব ও ডিজিকে ৬ জুলাই একটি নির্দেশিকা পাঠিয়েছে কেন্দ্র। লক্ষ্য, সবাই মিলে মানবপাচার মোকাবেলা ও এর সংখ্যা কমানো।
এই নির্দেশিকায় কয়েকটি বিষয়ের উপর জোর দেওয়া হয়েছে। প্রথমেই বলা হয়েছে, যে এএইচটিইউ (অ্যান্টি হিউম্যান ট্র্যাফিকিং ইউনিট) আছে, সেগুলোর শক্তি বাড়াতে। আন্তর্দেশীয় পাচার বন্ধ করার জন্য জন্য বিএসএফ ও এসএসবির ক্ষেত্রেও এএইচটিইউ তৈরির কথা বলা হয়েছে। পাশাপাশি এসেছে পুলিশকে আরও প্রশিক্ষণ করার প্রসঙ্গ।
তবে সব থেকে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে সরকারি দফতরগুলির সমন্বয়ের উপরে। রাজ্যের স্বরাষ্ট্র, পুলিশ, শ্রম, নারী ও শিশুবিকাশ, সমাজকল্যাণ, স্বাস্থ্য-সহ গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধন করে পাচারের বিরুদ্ধে মোকাবিলা করার কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে শ্রম দপ্তর যাতে বিশেষ ব্যবস্থা নেয়, সে কথাও উল্লেখ আছে। কারণ এখন শিশু শ্রমিকের চাহিদা অনেক বাড়ছে।
প্রবল গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে সচেতনতামূলক প্রচারের উপর। সেটা ব্যক্তি ও গোষ্ঠী- দু’টি ক্ষেত্রেই করতে হবে বলে উল্লেখ আছে নির্দেশিকায়। নারী ও শিশুবিকাশ এবং সমাজকল্যাণ দপ্তরের সচিব সঙ্ঘমিত্রা জানান, পঞ্চায়েতকে আমরা আগে থেকেই কাজে লাগিয়েছি। এ ছাড়া গ্রাম স্তরে ও ব্লক স্তরে নজরদারির জন্য শিশু নিরাপত্তা কমিটি রয়েছে। সচেতনতামূলক প্রচারের ক্ষেত্রে তিনি বলেন,আমাদের এখানে নানা প্রচারমূলক কাজ গত কয়েক বছর ধরেই হচ্ছে। তাতে ফলও পাওয়া গিয়েছে। এ ক্ষেত্রে কন্যাশ্রী ক্লাবেরও ভূমিকা রয়েছে।
কেন্দ্রীয় নির্দেশিকায় এ বার বিশেষ ভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, রেল ও সড়ক পরিবহনকে পাচার প্রতিরোধে কাজে লাগাতে। এর কারণ হল, অধিকাংশ সময়ই পাচারকারীরা দূরপাল্লার ট্রেন ও বাসেই এই পাচারের কাজ করে। যেহেতু গ্রামের দিকে পাচার প্রবণতা অনেকটাই বেশি, তাই পঞ্চায়েতগুলিকে সংশ্লিষ্ট গ্রামের মানুষজনের চলাফেরার উপর নজরদারি করার জন্য একটি রেজিস্টার রাখার কথা বলা হয়েছে।
পুলিশের সঙ্গে অবশ্য ভিন্নমত রাজ্যের শিশু সুরক্ষা আয়োগের চেয়ারপার্সন অনন্যা চক্রবর্তী। তার কথায়, বাংলা একমাত্র রাজ্য যেখানে পাচার প্রতিরোধে ডিরেক্টরেট রয়েছে। তা ছাড়া আছে টাস্ক ফোর্স। তৃণমূল স্তর থেকেই তারা কাজ করছে। তিনি জানালেন, এই নির্দেশিকার পরিপ্রেক্ষিতে কমিশনও জেলাভিত্তিক ভাবে একেকটি গ্রুপ তৈরি করবে, যাতে সব দপ্তরের প্রতিনিধিত্ব থাকবে।
সমাজকর্মী ঋষিকান্ত বলছেন,সরকারি সংস্থা ও এনজিও-র মধ্যে কাজ করার রোডম্যাপ এই নির্দেশিকা। আন্তঃরাজ্য সমন্বয় ও পঞ্চায়েতের ভূমিকাকে আরও জোরদার করতে হবে। এছাড়া চাইল্ড হেল্পলাইন নম্বর ১০৯৮ ও ইমার্জেন্সি নম্বর ১১২ সবার কাছে পৌঁছে দিতে হবে, মহিলা ও শিশুদের জন্য শেল্টার হোম রাখতে হবে, টেলিফোনে কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
আইএনবি/বি.ভূঁইয়া