আজ জাতীয় শিশু দিবস ও বঙ্গবন্ধুর ১০৪তম জন্মবার্ষিকী

ড. এস এম শাহনূর :

আজ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০৪তম জন্মবার্ষিকী’ এবং ‘জাতীয় শিশু দিবস। জাতীয় শিশু দিবসে এবছরের প্রতিপাদ্য- ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে’। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের রূপকার, কিংবদন্তি নেতা শেখ মুজিবুর রহমান ১৭ মার্চ ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে গোপালগঞ্জ জেলার ছোট্ট একটি গ্রাম টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যদি ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট সপরিবারে ঘাতকের নিষ্ঠুর বুলেটে প্রাণ না হারাতেন তবে আজ ১৭ মার্চ তাঁর বয়স হতো ১০৪ বছর। বাল্যকাল থেকেই তিনি ছিলেন নির্ভীক, দয়ালু এবং পরোপকারী। স্কুলে পড়ার সময়েই তাঁর নেতৃত্বের গুণাবলি বিকাশ লাভ করে। শিশুদের প্রতি অপরিসীম মমতা ছিল তাঁর। তিনি বিশ্বাস করতেন আজকের শিশুই আগামী দিনের সক্ষম নাগরিক। শিশুরা আগামী দিনের ভবিষ্যৎ; শিশুরাই একদিন স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলবে। তাই শিশুদের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করতে হবে সবার আগে- এই ভাবনা থেকেই জাতিসংঘ শিশুসনদ ঘোষণার ১৫ বছর আগে ১৯৭৪ সালে তিনি শিশু আইন প্রণয়ন করেন। শিশু শিক্ষার বিকাশ নিশ্চিত করতে প্রাথমিক শিক্ষাকে জাতীয়করণ করেন। শিশুদের প্রতি বঙ্গবন্ধুর দরদ ছিল অপরিসীম। শিশুদের খুবই ভালোবাসতেন তিনি। তাঁর জন্মদিনে তিনি শিশুদের সঙ্গে কাটাতে পছন্দ করতেন। ওইদিন শিশুরা দল বেঁধে তাঁকে শুভেচ্ছা জানাতে যেতো।বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক বা বিশ্ব শিশু দিবস পালন হলেও জাতীয় শিশু দিবস ছিল না। এ সকল বিষয়গুলো সার্বিক বিবেচনা করে জাতির পিতার জন্মদিনটাকে জাতীয় শিশু দিবস হিসেবে পালন করার সিদ্ধান্ত হয়। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর রাষ্ট্রীয় ‘খ’ শ্রেণিভুক্ত দিবস হিসেবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর জন্মদিন ১৭ মার্চকে জাতীয় শিশু দিবস ঘোষণা করে ওই সময়য়ের মন্ত্রিসভা। ১৯৯৭ সাল থেকেই দিবসটি পালন শুরু হয়। পরবর্তী সময়ে এ দিনটিকে সাধারণ ছুটিও ঘোষণা করা হয়।  প্রিয় বাংলাদেশকে শিশুদের জন্য নিরাপদ আবাসভূমিতে পরিণত করার নতুন শপথ নিতেই বঙ্গবন্ধুর জন্মদিনে ডিজিটাল বাংলাদেশে পালিত হয় জাতীয় শিশু দিবস।

শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন অসামান্য গৌরবের। বাঙ্গালি জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান, আপামর জনতার ভালবাসা তাঁকে শুধু জাতির পিতাই করেনি করেছে বন্ধু, বাংলার বন্ধু, বাংলার মানুষের বন্ধু, তিনি আমাদের বঙ্গবন্ধু। আজ বিশ্ববন্ধু। যাঁর প্রেরণায় বিনা অস্ত্রে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সাথে সমুখ সমরে নেমেছিল বাঙলার আমজনতা। সাথে ছিল শুধু একবুক সাহস, আর এই সাহস জুগিয়েছিলেন বাংলার বন্ধু আমাদের জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর ঋণ কেউ শোধ করতে পারবে না। যাঁর চিন্তা চেতনায় সবার আগে এসেছে দেশ, দেশের মানুষ, দেশের মানুষের মুখে হাসি ফোটানো, পেট ভরে ভাত খেতে পাবে, দুর্নীতিমুক্ত সমাজে বাস করবে, দেশের মানুষ শিক্ষা দীক্ষায় উন্নত হবে। বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়ানো একটা দেশ উপহার দিতে চেয়েছে, সেই লক্ষ্যে কাজ করছিলেন তিনি, একটা যুদ্ধ বিধ্বস্ত দেশেকে উনি সাড়ে তিন বছরে সোজা করে দাঁড় করিয়েছিলেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কর্ম ও রাজনৈতিক জীবন অসামান্য গৌরবের। হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ এই বাঙালিকে জাতি হিসেবে আমরা মাত্র ৫৫ বছর ৪ মাস বাঁচতে দিয়েছি। স্বাভাবিক মৃত্যু হলে শতায়ু তিনি হতেন না, তা কে বলতে পারে! যদি তিনি তাঁর অতি প্রিয় বাংলার মাটিতে আজও বেঁচে থাকতেন তবে এই দিনটি জাতি তখন কীভাবে পালন করত, তা ভাবলে মনেপ্রাণে শিহরণ জাগে। তাঁর এ গৌরবের ইতিহাস থেকে প্রতিটি শিশুর মাঝে চারিত্রিক দৃঢ়তার ভিত্তি গড়ে উঠুক এটাই জাতীয় শিশু দিবসের মূল প্রতিপাদ্য হওয়া চাই। শিশু-কিশোরদের চারিত্রিক দৃঢ়তার পাশাপাশি স্বাস্থ্য-পুষ্টির দিকে নজর দিয়ে তাদের শারীরিক ও মানসিক বিকাশ নিশ্চিত হোক ‘বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ধরে, আনব হাসি সবার ঘরে’ এ হোক আমাদের শিশু দিবসের প্রত্যয়।

আইএনবি নিউজ/বিভূঁইয়া