১১৯ বছরের যোবেদ আলীর সঙ্গে দেখা করলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব

কুড়িগ্রাম প্রতিনিধি: কুড়িগ্রামের রাজারহাটে যোবেদ আলী (১১৯) এক বৃদ্ধের সাথে দেখা করেছেন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সমন্বয় ও সংস্কার) জনাব শেখ মুজিবুর রহমান এনডিসি।

তিনি উপজেলার রাজারহাট ইউনিয়নের মেকুরটারী তেলীপাড়া গ্রামের মৃত হাসান আলীর পুত্র। তাঁর স্ত্রী ফয়জুন নেছা (৮৭), ৩ পুত্র ও ৪ কন্যা, নাতি-নাতিনী সহ বহু বন্ধু-বান্ধব ও গুনগ্রাহী রয়েছে।

জানা যায়, যোবেদ আলী নিয়মিত ফজরের নামাজ আদায় করে থাকনে। এখন পর্যন্ত তিনি কোন রকম ওষুধ না খেয়েই সুস্থ্য আছেন। যার কারনে যোবেদ আলী এলাকায় খুব আলোচিত।

সচিব এর সাথে উপস্থিত ছিলেন কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসক মোছাঃ সুলতানা পারভীন, জেলা তথ্য অফিসার নুরুনবী সরকার বাদল, পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন, বিশিষ্ট মুক্তিযোদ্ধা হারুন অর রশিদ লাল, কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাব সভাপতি আহসান হাবিব নীলু, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহঃ রাশেদুল হক প্রধানসহ জেলা ও উপজেলা কর্মকর্তাবৃন্দ।

শুক্রবার সন্ধ্যায় বাড়ী থেকে ইউএনও এর গাড়ী যোগে নিয়ে এসে রাজারহাট উপজেলা পরিষদ চত্বরে এক অনাড়ম্বর আয়োজনে অতিথিগণ তাঁর সাথে সাক্ষাৎ করেন। চলতি বছরের জানুয়ারীর শুরুতেই সাংবাদিক প্রহলাদ মন্ডল সৈকত এর প্রবীন যোবেদ আলীর সাক্ষাৎকার লেখাটি বিভিন্ন জাতীয় ও স্থানীয় প্রিন্ট মিডিয়া ও নিউজ পোর্টাল অনলাইনের মাধ্যমে ভাইরাল হয়। এতে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি হয়।

আন্তরিক মুহুর্তে এই প্রবীণ মানুষটির হাতে নানা উপহার সামগ্রী তুলে দিয়ে সচিব বলেন- ‘ব্যক্তি জীবনে আমি, আমরা নানা কাজে ব্যস্ত থাকি এগিয়ে যাওয়ার প্রতিযোগিতায়। প্রবীণ এই মানুষগুলোকে আমরা হর-হামেশাই গুরুত্ব দেইনা। কিন্তু এমন এক সময় ছিলো এই প্রবীণ মানুষগুলি ছিলো কারও সমস্ত আবদার পুরণকারী বাবা কিংবা অভিভাবক। জীবন স্রোতে টগবগে ভালোবাসা, খাবার উৎপাদনকারী এই মানুষগুলোই একসময় হয়ে যায় বড় একা! গল্প করার জন্য খুজে বেড়ায় কাছের মানুষগুলোকে। কিন্তু তার যে বয়স হয়েছে। পারিবারিক মুল্যবোধ তৈরী, সামাজিক নীতি নৈতিকতা, মানবিক আচরণই পারে নবীন ও প্রবীণ এর এই ফাঁকা সম্পর্ককে পূরণ করতে।

তিনি আরো বলেন, পরিবারের বাইরে প্রবীণ হৈত্যেষী ক্লাব তৈরী করে সমমনা ও সমবয়সের এই মানুষগুলোকে রাখা যেতে পারে স্বস্তিতে, শান্তিতে। বিনিময়ে তাদের কাছ থেকে পাওয়া যেতে পারে জীবনলব্ধ দামী পরামর্শ, অফুরন্ত মমতা। বয়স থেমে থাকে না, আমি আমরা প্রবীণ হবো, তাই ভাবতে দেরী কেন?’ মূল্যবান কথাগলো শুনে প্রবীন যোবেদ আলী আবেগাপ্লুত হয়ে বলেন- ‘আমি সাংবাদিকদের কাছে কৃতজ্ঞ। তাদের কারণে আমার এ পাওয়া। আজ আমি ধন্য। আমি সাংবাদিকদের মূল্যায়ন করি, তাদেরকে ভালবাসি। আমি ভাল আছি।’

প্রতিনিধির প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মোর ঠিক বয়স মনে নেই, তবে আইডি কার্ডে যা আছে তার চেয়ে বেশী হবে।

ছোট বেলা থেকে যুবক বয়সে তিনি নিজের দিঘীর মাছ, মাংস, দুধ, ডিম, আবাদি বিতরী ধানের ভাত, খাঁটি ঘি, সরিষার তৈল, রাসায়নিক সার বিহীন শাক-সবজি নিয়মিত খেতেন।

এই বয়সে তাঁর ছোট খাট জ্বর-সর্দি ছাড়া বড় ধরনের কোন রোগ ব্যাধি হয় নাই। শরীর এখনও তাঁর ভাল আছে। তিনি একশ বছর আগে পঞ্চম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশুনা করেছেন। তাই তিনি নিয়মিত পবিত্র কুরআন-মাজিদ, পত্রিকা ও বই পড়তে পারেন। রাতে তিনি কুপি জ্বালিয়ে পবিত্র কোরআন-মাজিদ পড়েন। তিনি আরো বলেন, কোনদিন ফজরের নামাজ আমি ক্বাজা করি নাই এবং ফজরের নামাজের পর কোরআন তেলোয়াত করি। তাই হয়তো আল্লাহ্ পাক আমাকে সুস্থ্য রেখেছেন। এজন্য আল্লাহ্’র কাছে লাখো শুকরিয়া। এছাড়া পত্রিকা পড়াই তার এখন প্রধান নেশা বলে জানান।

আইএনবি/এম এ/ সম্পাদনা-বিভূঁইয়া