মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ফটোল্যাব ব্যবহারকারীদের তথ্য নিচ্ছে!

প্রযু্ক্তি ডেস্ক: সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকেরা শঙ্কা প্রকাশ করে বলছেন, ফেসবুকসহ ইন্টারনেট দুনিয়ায় চলমান ট্রেন্ড ‘ফটোল্যাব’ ব্যবহারকারীদের তথ্য মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো হাতিয়ে নিচ্ছে। তাদের মতে, ছবি পাওয়ার বিনিময়ে যেসব তথ্য অ্যাপটির সঙ্গে গ্রাহকেরা শেয়ার করছেন, সেগুলো গোয়েন্দা সংস্থার কাছে চলে যেতে পারে।

জানা গেছে, টেক জায়ান্ট আইবিএম মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কাছে মানুষের মুখমণ্ডল চিনতে পারা (ফেস রিকগনিশন) এবং বিশ্লেষণী সফটওয়্যার বিক্রি করতো। কিন্তু সম্প্রতি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে এসব প্রযুক্তি আর বিক্রি করবে না বলে মার্কিন কংগ্রেসকে চিঠিতে জানান আইবিএমের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা অরভিন্দ কৃষ্ণা। আর সেই সময়ের জন্ম নেয়া ফটোল্যাব এখন ট্রেন্ড।

প্রযুক্তিভিত্তিক মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ভার্জের তথ্যমতে, ২০১০ সালে লিনারক ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড প্রতিষ্ঠিত হয়। এখন তাদের মালিকানায় ১৪ টি অ্যাপ রয়েছে। ২০১০ সালেই তৈরি করা অ্যাপগুলোর বেশির ভাগ ছবি সংক্রান্ত এবং ফটোল্যাব অ্যাপটিও তৈরি হয়। এতো বছর অ্যাপটি আলোচনায় না থাকলেও আইবিএম ফেস রিকগনিশন বন্ধ করার কিছুদিনের মধ্যেই অ্যাপটি দুনিয়ায় ভাইরাল হয়ে যায়। আর প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের সন্দেহ ঠিক এ জায়গাতে।

সাইবার-৭১ এর পরিচালক আব্দুল্লাহ আল জাবের হৃদয় বলেন, আইবিএম ফেস রিকগনিশন বন্ধ করার পরপরই বহুদিন আগে প্রতিষ্ঠিত ফটোল্যাব অ্যাপ হঠাৎ ভাইরাল হওয়া সন্দেহজনক। আপলোডের সময় ফটোল্যাবকে হাই রেজ্যুলেশনে ছবি দিতে হচ্ছে। যা তারা স্টোর করছে। ফেসবুক, গুগলের কাছেও ছবি রয়েছে। কিন্তু সেগুলো হাই রেজ্যুলেশনের নয়। তাই হাই রেজ্যুলেশনে ছবি আপলোডের জন্য ফেসবুক ইনস্টাগ্রামে সবাইকে উৎসাহ দিচ্ছে।

হাই রেজ্যুলেশনে থাকা ছবিগুলোকে ‘ডাটা’ হিসেবে সংরক্ষণ করছে ফটোল্যাব। সেগুলোতে ফেস রিকগনিশন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার প্রযুক্তি ব্যবহার করছে। এসব ব্যবহার করে সেগুলো থেকে আরো তথ্য পাচ্ছে তারা। আর এসব তথ্যই বিশ্লেষণের জন্য ব্যবহার করা হয়।

তিনি আরো বলেন, প্রযুক্তি জগতে আগে থেকেই অস্তিত্ব রয়েছে এমন একটি প্ল্যাটফর্মকে নিজেদের প্রয়োজনে ব্যবহার করে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো। প্রতিষ্ঠার পর পরিচিতি না পেলেও গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর অন্তর্ভুক্তিতে রাতারাতি আলোড়ন সৃষ্টি হয়। একই কাজ ফটোল্যাবের সঙ্গে করা হয়েছে। খেয়াল করলে দেখবেন অনেকদিন পর গত ১৫ জুন অ্যাপটিকে হালনাগাদ করা হয়েছে। এটাকে ‘ট্রেন্ড’ হিসেবে বিশ্বে ছড়িয়ে দিতে নতুন নতুন ফিচার যুক্ত করা হয়েছে। এতে বিপুল পরিমাণ তথ্য তাদের সার্ভারে জমা হচ্ছে। সেগুলো গোয়েন্দাদের কাছে ‘গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ’। এগুলো বিশ্লেষণ করে যে তথ্য বের হবে, সেগুলো হবে আরো গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সাইবার ওয়ার্ল্ডে তথ্যই সম্পদ।

আরেক সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষক তানভীর হাসান জোহা বলেন, ফটোল্যাব অ্যাপটি ডিভাইসে কাজ করতে যেসব বিষয় চায় তার দিকে একটু খেয়াল করতে হবে। অ্যাপটি ব্যবহারকারীর ডিভাইসের স্টোরেজের এক্সেস চায়। এতে স্টোরেজ থেকে যেকোনো ফাইল সে রিড করতে পারবে, চাইলে মুছেও দিতে পারে।

এমনকি আপনার ফোনে থাকা সব কনট্যাক্টস অর্থাৎ যেসব মানুষের নাম, নম্বর এবং ই-মেইল এড্রেস সংরক্ষণ রয়েছে তা এক্সেস নিয়ে পড়তে বা মুছে ফেলতে পারবে। এছাড়া আরো অনেক বিষয়ে এক্সেস নিতে পারে অ্যাপটি। এক্সেস থেকে প্রাপ্ত তথ্যগুলো সংরক্ষণ করে রাখবে তারা। এটি সবার জন্য নিরাপত্তার চরম ঝুঁকি।

উদাহারণ হিসেবে তিনি বলেন, আপনার ডিভাইসে যদি এটিএম কার্ডের পিন নম্বর রাখেন। তাহলে সেই তথ্য হাতিয়ে নিতে সময় লাগছে না। এ জন্য বেশি বেশি স্ক্যামের খবর পাওয়া যাচ্ছে।

আইএনবি/বি.ভূঁইয়া