মানবিক কর্মসূচি নিয়ে তৎপর যুবলীগ

সফিকুল ইসলাম: দেশজুড়ে মহামারি রোগ করোনা ভাইরাস মোকাবিলায় মানবিক কর্মসূচি নিয়ে তৎপর রয়েছেন বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। আওয়ামী লীগের ভ্যানগার্ড হিসেবে পরিচিত সহযোগী এই সংগঠনটি গত মার্চ মাস থেকেই দেশজুড়ে নানা কার্যক্রম নিয়ে মাঠে নেমেছেন। একইসাথে জেলা-উপজেলা থেকে শুরু করে পাড়া-মহল্লার শাখা কমিটিগুলোকে করোনায় মানবিক কর্মসূচিতে তৎপর রেখেছেন। কর্মহীন অসহায় দুঃস্থ শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে ত্রাণ কার্যক্রমের পাশাপাশি টেলি মেডিসিন সেবা ও ফ্রি এ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মত কর্মসূচিগুলো চলমান রয়েছে। কেন্দ্রের পাশাপাশি সংগঠনের কয়েকটি জেলা কমিটি নিয়েছে ‘ভ্রাম্যমাণ বাজার’ ও ‘ডক্টরস সেফটি চেম্বার’-এর মত ব্যতিক্রমী কর্মসূচি। যুবলীগের এসব কর্মসূচি ইতিমধ্যে সর্বমহলের প্রশংসাও কুড়িয়ে যাাচ্ছে সংগঠনটি।
দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ৮ মার্চ দেশে প্রথম করোনা রোগীর খোঁজ মেলার পরপরই যুবলীগের এসব মানবিক কর্মসূচির সূচনা ঘটে। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার নির্দেশনায় মাঠে নেমে পড়েন নেতাকর্মীরা। করোনা মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রীর ৩১ দফা নির্দেশনার আলোকে যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলে শামস্ পরশ ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিলের নেতৃত্বে দেশজুড়ে শুরু হয় ব্যাপক কার্যক্রম। এরই মধ্যে আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ হাসিনা দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে সারাদেশে ত্রাণ কমিটি গঠন করে অসহায়, দুঃস্থ ও কর্মহীন মানুষের তালিকা তৈরি ও ত্রাণ কার্যক্রম জোরদারসহ প্রশাসনকে সহযোগিতার নির্দেশও দেন। সে অনুযায়ী কর্মসূচিও হাতে নেয় সংগঠনটি।
সর্বশেষ করোনাভাইরাসের কারণে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের মধ্যে ত্রাণ সহায়তা অব্যাহত রেখেছে বাংলাদেশ যুবলীগ। এরই ধারাবাহিকতায় শনিবার ঢাকা মহানগর উত্তরের ৬৫টি ওয়ার্ডের ত্রান কমিটির কাছে প্রধানমন্ত্রীর দেয়া খাদ্য সহায়তা সামগ্রি তুলে দিয়েছে কেন্দ্রীয় যুবলীগ। ওয়ার্ডে গঠিত ত্রান কমিটি এসব সামগ্রি করোনার কারণে অসহায় হয়ে পড়া মানুষের মাঝে বিতরণ করবে। প্রধানমন্ত্রীর দেয়া এসব উপহার খাদ্য সামগ্রী হস্তান্তর করেন যুবলীগ সাধারন সম্পাদক আলহাজ্ব মো: মাইনুল হোসেন খান নিখিল। ঢাকা মহানগর উত্তর শাখার ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন ও কেন্দ্রীয় যুবলীগের দায়িত্বপ্রাপ্ত দফতর সম্পাদক মনিরুল ইসলাম হাওলাদার প্রমূখ।
এর আগে আলোচিত ‘ক্যাসিনোকান্ডে’ যুবলীগের কেন্দ্রীয় ও মহানগরের শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কিছু নেতার নাম চলে আসায় চরম বিতর্কের মধ্যে পড়ে গিয়েছিল যুবলীগ। গত বছরের সেপ্টেম্বরে ক্যাসিনো ও দুর্নীতিবিরোধী অভিযান শুরু হলে এসব শীর্ষনেতার বেশ কয়েকজন গ্রেপ্তার ও কারাগারে যান। আত্মগোপনে রয়েছেন অনেকেই। সংগঠনের পদ হারানো ও বহিস্কারের পাশাপাশি ব্যাংক হিসাব জব্দ, বিদেশভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা ও দুদকের নজরদারির আওতায় পড়েন সংগঠনের তৎকালীন চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীসহ আরো কয়েকজন নেতা। এই অবস্থায় সংগঠনের নেতৃত্ব প্রদানের বয়সসীমা ৫৫ বছর বেধে দেওয়ার পাশাপাশি গত বছরের ২৩ নভেম্বর অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ জাতীয় কংগ্রেসের মাধ্যমে যুবলীগের নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করে দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। সংগঠনটির বেশ কয়েকজন নেতা বলছেন, দায়িত্বগ্রহণের পরপর নতুন নেতৃত্ব সংগঠনের ভাবমূর্তি পুনরুদ্ধারের প্রচেষ্টা নিয়েছিলেন। এরই মধ্যে করোনা সংকট শুরু হলে এর মোকাবিলায় নেওয়া সংগঠনের মানবিক কর্মসূচিগুলো যুবলীগ সম্পর্কে পরিচ্ছন্ন ও স্বচ্ছ ভাবমূর্তি গড়ে তুলেছে জনমনে। অন্য সহযোগী-ভাতৃপ্রতীম সংগঠনের মতো যুবলীগের পূর্ণাঙ্গ কেন্দ্রীয় কমিটি এখনো ঘোষণা না হলেও পদপ্রত্যাশী অনেক নেতাকর্মী ত্রাণ কার্যক্রমসহ অন্যান্য কর্মসূচিতে শামিল হয়েছেন।
সূত্রমতে,প্রথমে দেশব্যাপী নাগরিক সচেতনতায় কাজ শুরু করে যুবলীগ। প্রথম দিকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সাবান ও ফেস মাস্ক এবং প্রচারপত্র বিতরণ করেন নেতাকর্মীরা। পরে লক ডাউন শুরু হলে কর্মহীন, ছিন্নমূল ও অসহায় মানুষের মধ্যে ত্রাণ ও খাদ্যসহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন তারা। সংগঠনের দুই শীর্ষ নেতা শেখ ফজলে শামস্্ পরশ ও মাইনুল হোসেন খান নিখিল ছাড়াও ঢাকা মহানগর উত্তরের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি জাকির হোসেন বাবুল, সাধারণ সম্পাদক ইসমাইল হোসেন, দক্ষিণের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাইনুদ্দিন রানা ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রেজাসহ কেন্দ্রীয় ও মহানগর নেতারা ত্রাণ ও খাদ্যসামগ্রী বিতরণ অব্যাহত রেখেছেন। ইতিমধ্যে রাজধানী ঢাকার সব প্রান্তের হাজার হাজার দুঃস্থ মানুষকে চাল, ডাল, তেল, পিঁয়াজ, আলু, লবণ ও সাবানসহ ত্রাণসামগ্রী এবং ক্ষেত্রবিশেষে রান্না করা খাবার দেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে রোজার মাস শুরু হওয়ায় ইফতার সামগ্রী বিতরণ করা হচ্ছে। রাজধানী ছাড়াও সারাদেশে অনুরূপ কার্যক্রম চলছে যুবলীগের উদ্যোগে।
এদিকে, করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসায় ফ্রি টেলি মেডিসিন সেবা চালু করেছে যুবলীগ। করোনা সংক্রান্ত অথবা সর্দি, জ্বর ও হাঁচি-কাশিসহ যেকোনো রোগে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা দিতে এই জরুরি টেলি মেডিসিন সার্ভিসের আওতায় সংগঠনের সাবেক উপ-স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. হেলাল উদ্দিনের নেতৃত্বে আট সদস্য বিশিষ্ট একটি সমন্বয় টিম এবং মোট ৯০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে পাঁচটি পরামর্শক টিম গঠন করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা পর্যায়ক্রমে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা মোবাইল ফোনের মাধ্যমে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। পাশাপাশি ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস ও করোনায় মৃতদের মৃতদেহ দাফন কর্মসূচিও নিয়েছে যুবলীগ। দেশের অনেক জায়গায় শ্রমিক সংকটে পড়া কৃষকদের ধান কেটে দিয়ে প্রশংসিতও হয়েছেন নেতাকর্মীরা।এছাড়াও ফরিদপুর জেলা যুবলীগের ব্যতিক্রমী উদ্যোগ ‘ভ্রাম্যমাণ বাজার’ শহরবাসীকে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে দিয়েছে। গত ৪ এপ্রিল ১০টি ট্রাকযোগে শহরের বিভিন্ন পাড়ামহল্লায় ঘুরে ঘুরে নিত্যপ্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্য স্বল্পমূল্যে বিক্রি শুরু হয়। পণ্যের মূল্য কম থাকায় ক্রেতাদের চাহিদা বাড়ায় পরে ২০টি স্থানে বসানো হয় নিত্যপণ্যের এই দোকান। করোনায় ঘরবন্দি মানুষের দোড়গোড়ায় নিত্যপণ্য সরবরাহের এই উদ্যোগ আট ধরনের পণ্য নিয়ে শুরু হলেও এরই মধ্যে পণ্যের সংখ্যা বেড়ে ৭৫-এ দাঁড়িয়েছে। চাল-ডাল-তেল-সাবানের সাথে রোজাদারদের জন্য খেজুর, তরমুজ, বেল, কদবেল ও কলাসহ বিভিন্ন ধরনের ফলও বিক্রি করা হচ্ছে। হটলাইনে অর্ডার দেওয়া হলে নামমাত্র পরিবহন খরচ নিয়ে ক্রেতার বাড়িতেও পণ্য পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে। শহরের প্রায় ৩৫ হাজার পরিবার এই ভ্রাম্যমাণ বাজারের সুবিধা নিয়েছেন। এছাড়া খুলনায় করোনা আক্রান্ত রোগী ও তাদের পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়েছে খুলনা মহানগর যুবলীগ। আর ডাক্তাররা রোগীদের থেকে নিরাপদে থেকে যাতে চিকিৎসা সেবা দিতে পারেন, সেজন্য মৌলভীবাজার ২৫০ শয্যা সদর হাসপাতালে ‘ডক্টরস সেফটি চেম্বার’ চালু করেছে মৌলভীবাজার জেলা যুবলীগ। অন্যান্য মহানগর ও জেলা কমিটিও অনুরূপ কর্মসূচি নিয়ে মাঠে রয়েছে।
এ বিষয়ে যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে অসহায় মানুষের পাশে য্বুলীগ আছে এব থাকবে। করোনা ভাইরাসের কারণে অসহায় মানুষের পাশে যুবলীগ দাঁড়িয়েছে। বৈশ্বিক এই সংকট নিরসন না হওয়া পর্যন্ত তাদের এই সহায়তা অব্যাহত থাকবে বলে জানান তিনি।