বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়ছে

আইএনবি নিউজ: দেশে বেসরকারি উদ্যোগে গড়ে উঠা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার মান নিয়ে প্রশ্ন উঠলেও সুখবর দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। নানা বির্তকের মুখে গত বছর বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর ভর্তি হওয়ার সংখ্যা বেড়েছে। বিষয়টি ভালভাবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা। শিক্ষার মান বাড়িয়ে এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে সেদিকে নজর দেয়ার জন্য সংশ্লিষ্টদের পরার্মশ শিক্ষাবিদদের। এর ফলে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপর চাপ কমার পাশাপাশি বিদেশে উচ্চ শিক্ষার নেয়ার প্রবনতা কমবে। সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো আচার্য ও রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের কাছে তুলে দেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের ৪৫তম বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে এসব তথ্য জানা গেছে।

মঞ্জুরি কমিশনের বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, ২০১৭ সালে দেশে ৯০টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে। সেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ৩ লাখ ৫৪ হাজার ৩৩৩। সেখান থেকে বেড়ে ২০১৮ সালে ৯১টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ লাখ ৬১ হাজার ৭৯২। এ হিসাবে এক বছরের ব্যবধানে দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে ৭ হাজার ৪৫৯। বার্ষিক প্রতিবেদন থেকে জানা গেছে, ২০০৬ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বাড়তে থাকে। ২০১৫ সালে প্রথমবারের মত এ সংখ্যা সাড়ে তিন লাখ ছাড়ায়। এরপর ২০১৬ সালে এ শিক্ষার্থী বাড়ার ধারাবাহিকতায় ছেদ পড়ে। এরপর আবার গত দুই বছর শিক্ষার্থীর সংখ্যা ক্রমে বেড়েছে।

প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৮ সালে শিক্ষাার্থী সংখ্যায় সবচেয়ে এগিয়ে ছিল ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি। গত বছর ড্যাফোডিলের মোট শিক্ষাার্থী ছিল ২১ হাজার ৭৮১। নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী ছিল ২০ হাজার ১৯৭ জন, যা বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ইস্ট ওয়েস্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১২ হাজার ৪৩৮। আর সবচেয়ে কম শিক্ষার্থী ছিল ফরিদপুরের টাইমস ইউনিভার্সিটির। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষাার্থী ছিল মাত্র ৭৩ জন।

ইউজিসির প্রতিবেদনে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নে বেশকিছু সুপারিশ করা হয়েছে। প্রতিবেদনে বলা হয়, সংশ্লিষ্ট সব মহলে গ্রহণযোগ্য ও আন্তর্জাতিক মানের র‌্যাংকিং পদ্ধতি প্রচলনের বিষয়টি সামনে এসেছে। এ বিষয়ে ইউজিসি বাংলাদেশ অ্যাক্রেডিটেশন কাউন্সিলের সঙ্গে একত্রে কাজ করতে পারে। এছাড়া র‌্যাংকিং চালুর জন্য সূচক নির্ধারণের প্রয়োজনীয়তার কথা বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।এক্ষেত্রে মানসম্পন্ন শিক্ষক নিয়োগ, উচ্চতর গবেষণায় শিক্ষকদের নিযুক্তি, শিক্ষকদের গবেষণালব্ধ ফলাফল আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন জার্নালে প্রকাশ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট ও ডাটাবেজের তথ্য হালনাগাদ রাখা, গ্র্যাজুয়েটদের চাকরির বাজারে গ্রহণযোগ্যতা তৈরি এবং গবেষক ও শিক্ষকদের বিদেশী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কার্যকর সহযোগিতা বজায় রাখার বিষয়গুলো এতে অন্তর্ভুক্ত করার কথা বলা হয়েছে। একই সঙ্গে প্রতিবেদনে গবেষণায় বরাদ্দ বাড়ানো, আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষক প্রশিক্ষণ একাডেমি প্রতিষ্ঠা এবং পাবলিক ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সান্ধ্য কোর্স বন্ধের সুপারিশ করা হয়।

বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থী বাড়ার বিষয়টি খুবই ভাল হিসেবে দেখছেন ইউজিসি চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. কাজী শহীদুল্লাহ। তিনি বলেন, নানা কারণে সন্তানদের বেসরকারি বিশ্বদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চাইতো না অভিভাবকরা। সেই পরিস্থিতির পরিবর্তন হয়েছে। প্রতি বছরই দেশে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়ছে। এটা খুবই ভাল দিক। এতে উচ্চ শিক্ষায় বিদেশগামী কমবে। শিক্ষার্থী বাড়লে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শিক্ষার মানোন্নয়ন করতে পারবে এবং সংশ্লিষ্টদের এ ব্যাপারে নজর দিতে হবে।

আইএনবি/এনএম