গড়ে উঠছে সমৃদ্ধ শরীয়তপুর, নেতৃত্বে উপমন্ত্রী শামীম

নিজস্ব প্রতিবেদক
এক সময়ের সবচেয়ে পিছিয়ে পড়া জেলা হিসেবে পরিচিত ছিলো শরীয়তপুর। সময়ের ব্যবধানে দেশের অন্যতম সমৃদ্ধ জেলা হিসেবে গড়ে উঠতে শুরু করেছে শরীয়তপুর। স্বপ্নের পদ্মা সেতুর স্বাগতিক জেলা, বঙ্গবন্ধু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, চার লেন, শত বছরের ভাঙন মুক্ত নড়িয়া, জাজিরা, সখিপুর, অর্থনৈতিক জোন, তাঁতপল্লী, কৃষি স্বনির্ভর, পর্যটন জেলা হিসেবে সম্ভাবনার নতুন হাতছানি ঘিরে শরীয়তপুর এখন সমৃদ্ধ। তরুন নেতৃত্ব নির্ভর জেলাটি এখন সারাদেশের মানুষের নজরে। দূর্বার এগিয়ে চলার সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন সরকারের পানি সম্পদ উপমন্ত্রী, সাবেক ছাত্রনেতা একেএম এনামুল হক শামীম এমপি। জেলার অপর দুটি আসনের সাংসদ ইকবাল হোসেন অপু, নাহিম রাজ্জাকও উন্নয়নে সমানতালে ভূমিকা রাখছেন। তিন সাংসদ এবং জেলা আওয়ামী লীগ একসঙ্গে জেলার উন্নয়নের কাজ করছেন।
একসময় গনমাধ্যমগুলোতে নড়িয়া-সখিপুরে মানুষের বসতভিটা হারানোর আহাজারি ছবির সংবাদ থাকতো বড় আকারে। সেখানে এখন শোভা পাচ্ছে নড়িয়া এখন পর্যটন এলাকা হিসেবে। জাজিরা হতে সখিপুর পর্যন্ত কয়েকটি প্রকল্পের মাধ্যমে পদ্মা নদীর তীর এখন পর্যটন আকর্ষনীয় স্পট। করোনা সংকটেও উপমন্ত্রী শামীমের নেতৃত্বে ভাঙন কাজ এগিয়ে নেয়া হয়। নড়িয়া-সখিপুরসহ সমগ্র শরীয়তপুরকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষাকল্পে জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের ৩ হাজার কোটি টাকার কাজ চলমান ও ১১৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
মরণ ঘাতক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে গোটা দেশ অবরুদ্ধ, আতঙ্কিত, তখন জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনের এ সাংসদ। তিনি করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চবার নিজ নির্বাচনি এলাকা সফর করেছেন এবং অবস্থানও করেছেন বেশি সময়। ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনি এলাকার ২৫টি ইউনিয়নে ৬৫ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।
নড়িয়া উপজেলা ও সখিপুর থানায় ইমাম, মুয়াজ্জিন, অস্বচ্ছল আলেম, জেলে সমপ্রদায়, চরের ভাসমান মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, দিনমজুর, প্রতিবন্ধী, মুচি, বেদে সম্পদ্রায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মানবিক সহায়তা হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক এ সাংগঠনিক সম্পাদক। ‘ডাক্তারের কাছে রোগী নয় রোগীর কাছে ডাক্তার’ কর্মসূচি সারা দেশে সাড়া জাগিয়েছেন তিনি। প্রায় ১ বছর অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে নড়িয়া ও সখিপুরের করোনা দুর্যোগে ঘরবন্দি মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। নিজস্ব তহবিল থেকে দুটি চিকিৎসক টিম গঠন করে ঘরবন্দি মানুষকে বাড়িতে গিয়েই চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছেন।
যিনি নির্বাচনি এলাকায় (নড়িয়া ও সখিপুর) প্রায় ৬ হাজার গভীর নলকূপ প্রদান স্থাপন করেছেন। সবশ্রেনী পেশার মানুষকে নলকুপ প্রদান করেছেন। যার কারণে নড়িয়া-সখিপুরে বিশুদ্ধ পানির সংকট নেই বললেই চলে।
সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নড়িয়া, সখিপুরে দুর্গম চরাঞ্চলের মানুষ ৭০ হাজার মানুষকে বিদ্যুতের আওতায় এনেছেন পানি সম্পদ উপমন্ত্রী ও বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এনামুল হক শামীম। নড়িয়া উপজেলার চর নওপাড়া ও চরআত্রায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার কাচিকাটা, উত্তর তারাবুনিয়ায় এবং জাজিরার কুন্ডেরচরের বহু মানুষ এর আগে বিদ্যুৎ সুবিধা থেকে বঞ্চিত ছিল। কুপি ছিল ভরসা। সেখানে এখন বিদ্যুতের আলো। নড়িয়া-সখিপুরে বিদ্যুতের জোনাল অফিস স্থাপন এবং সাবস্টেশনসমূহের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নতুন সাবস্টেশনের অনুমোদন করেছেন ।
নির্বাচনি এলাকায় শিক্ষা বিস্তারেও তিনি ভূমিকা রেখেছেন। প্রত্যেকটি আবেদনকৃত স্কুল-কলেজ ও মাদ্রাসা এমপিওভুক্তকরণ। ১৫টি উচ্চ বিদ্যালয়, ৮২টি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা’র ভবন ও দেয়াল নির্মাণ করেছেন। নড়িয়া সরকারী কলেজ ও হাজী শরীয়ত উল্লাহ কলেজসহ সকল কলেজকে স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আধুনিকরণ এবং সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাব স্থাপন করা হয়েছে। চরভাগা “বঙ্গবন্ধু আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় ও কলেজ”কে সরকারিকরণ। চরআত্রা আজিজিয়া উচ্চ বিদ্যালয়কে কলেজে রূপান্তর এবং রাজনগর ও কাঁচিকাটায় উচ্চ বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন। প্রায় ৮০০টি মসজিদ-মাদ্রাসা ও ২৫টি মন্দিরে নগদ অর্থ ও অনুদান প্রদান করেছেন। নড়িয়া ও সখিপুরে শেখ রাসেল স্টেডিয়াম ও সখিপুর থানা ভবন, সখিপুরে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস, এএসপি সার্কেল অফিস নির্মাণের কাজ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ভাষা সৈনিক গোলাম মাওলা উড়াল সেতু, জয় বাংলা ঘাটলা ও দক্ষিণ তারাবুনিয়াতে জয় বাংলা সেতু নির্মাণ এবং প্রায় ২০০টি বাঁশের সাকোকে কাঠের পুলে রূপান্তর করা হয়েছে। নড়িয়া ও সখিপুরে সকল গুরুত্বপূর্ণ সড়কসমূহ মেরামত ও বর্ধিতকরণ করেছেন।
নড়িয়ায় নতুন হাসপাতালের নির্মাণ কাজ চলমান এবং মুলফৎগঞ্জ হাসপাতাল আধুনিকরণ ও তারাবুনিয়ায় বন্ধ থাকা ২০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল চালু করেছেন। বেগম আশ্রাফুন্নেছা হাশেম ১০ শয্যা বিশিষ্ট মা ও শিশু হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেছেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা’র পক্ষ থেকে ১১০ জনকে ৩৫ লক্ষ টাকা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ২শ’ জনকে ২০ লক্ষ টাকা নগদ আর্থিক সহায়তা প্রদান করেছেন।
নড়িয়া ও সখিপুরের বিভিন্ন মসজিদ মাদ্রাসার আলেম-ওলামা ও হাফেজদের প্রায় ৫০০০ পবিত্র কোরআন শরীফ উপহার দিয়েছেন । চরভাগায় বঙ্গবন্ধু মডেল ভিলেজের অনুমোদন ও কাজ চলমান রয়েছে । নড়িয়াতে টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের অনুমোদন এবং নড়িয়াতে লাইব্রেরী ও মুক্তমঞ্চ করার উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন।
নড়িয়াতে পানি ভবন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের সাব-ডিভিশন, কীর্তিনাশা ডাকবাংলো ও চরআত্রায় আঃ জলিল মুন্সি ডাকবাংলো নির্মাণ এবং সখিপুরে ডাকবাংলো নির্মান করা হচ্ছে। নড়িয়া পৌরসভাকে ‘ক’ শ্রেণিতে রূপান্তরের কাজ প্রক্রিয়াধীন ও পৌরসভাকে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে অন্তর্ভূক্তকরণ, যার মাধ্যমে এ বছরই ৫০ কোটি টাকার কাজ শুরু হবে।
নড়িয়া ও সখিপুরে আওয়ামী লীগের অফিস আধুনিকরণ করা হয়েছে। ১১টি ইউনিয়নে স্থায়ী আওয়ামী লীগ কার্যালয় নির্মাণ করা হয়েছে। নড়িয়ায় উপজেলা আওয়ামী লীগের স্থায়ী কার্যালয় নির্মাণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। ৭টি সহযোগি সংগঠন ও আওয়ামী লীগের উপজেলা, পৌরসভা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড কমিটি সম্মেলনের মাধ্যমে সম্পন্ন করেছেন। দলীয় মনোনয়ন পেতে দুই উপজেলা চেয়ারম্যান, মেয়র, আওয়ামী লীগ ও সহযোগি সংগঠনগুলোর ওয়ার্ড পর্যায়ের প্রত্যক নেতারা তার জন্য একক সুপারিশ কেন্দ্রে প্রেরণ করেছেন।
নড়িয়ায় ফায়ার সার্ভিস স্টেশন স্থাপন এবং সখিপুরে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সখিপুর উপজেলা গঠনের কাজ শেষ পর্যায়ে চলমান । নড়িয়ায় উপজেলা কার্যালয়, ভূমি অফিস নির্মাণ ও মডেল মসজিদ নির্মাণ। আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় নড়িয়ায় ৯০০ এবং সখিপুরে ৬০০, সর্বমোট ১৫০০ পরিবারকে জমি ও ঘর প্রদান এবং “জমি আছে ঘর নেই” প্রকল্পের আওতায় ২০০ পরিবারকে ৩ লক্ষ টাকার দুর্যোগ সহনীয় ঘর প্রদান করা হয়েছে। আশ্রাফুন্নেছা ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মেধাবী শিক্ষার্থীদের বৃত্তি ও কম্পিউটার সামগ্রী প্রদান করেন নিয়মিত। নড়িয়া ও সখিপুরে প্রায় ১৪ হাজার বান্ডেল ঢেউটিন ও ৪২ লক্ষ টাকা প্রদান করেছেন। চরভাগায় বীর মুক্তিযোদ্ধা ইঞ্জিনিয়ার আবুল হাশেম মিয়া অত্যাধুনিক অডিটোরিয়াম নির্মাণ করা হয়েছে। সরকারি সব ধরণের ভাতা সুষম বন্টন করেছেন।
শরীয়তপুরের সড়ক যোগাযোগে বৈপ্লবিক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। গোটা শরীয়তপুর জুড়েই চলছে উন্নয়নযজ্ঞ। মেঘনা সেতু (শরীয়তপুর-চাঁদপুর) করার প্রক্রিয়া চলমান । ৫০ কোটি টাকা বিশেষ বরাদ্দ করে মেঘনা সেতু থেকে ভেদরগঞ্জ পর্যন্ত পিএমএম পদ্ধতিতে রাস্তা মেরামত করা হচ্ছে। পদ্মা সেতুর নাওডোবা অ্যাপ্রোচ সড়ক হতে শরীয়তপুর সদর পর্যন্ত এবং শরীয়তপুর হয়ে আলুবাজার ফেরীঘাট পর্যন্ত চার লেন রাস্তার জন্য ২৫০০ কোটি টাকা অনুমোদন ও কাজ চলমান রয়েছে। ইতোমধ্যে উচ্চ শিক্ষার বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিভিন্ন বিষয়ে স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণ এবং সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অগ্রগতিকল্পে এবং এ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস ইনকিউবেটরের মাধ্যমে দেশে ও বিদেশে কৃষি খাতে নতুন নতুন উদ্যোক্তা সৃষ্টি, কর্মসংস্থান সম্প্রসারণ করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যে জাতীয় সংসদে ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শরীয়তপুর কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, বিল, ২০২৩’ পাস করা হয়েছে। বিশ্ববিদল্যায়টি প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন এনামুল হক শামীম।
জানতে চাইলে একেএম এনামুল হক শামীম বলেন, বঙ্গবন্ধুর বীরকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে মানুষের জন্য রাজনীতি করি। আমার এলাকার মানুষের ভাগ্য উন্নয়নই আমার মূল লক্ষ্য। আমার চরাঞ্চলে গেলে বৃদ্ধ-বৃদ্ধারা ’বাজান’ বলে জড়িয়ে ধরে, এটাই আমার প্রাপ্তি। এজন্য মহান আল্লাহ এবং বঙ্গবন্ধু কন্যার কাছে কৃতজ্ঞ।