খাতা চ্যালেঞ্জ করে ফলাফল পাল্টালেন ৩১৪০ জন শিক্ষার্থী

নুর মোহাম্মদ:
সদ্য প্রকাশিত জুনিয়র স্কুল সার্টিফিকেট (জেএসসি) ও জুনিয়র দাখিল সার্টিফিকেট (জেডিসি) পরীক্ষার ফলাফল চ্যালেঞ্জ করে ফল পেয়েছেন ৩ হাজার ১৪০ জন শিক্ষার্থী। এদেরমধ্যে নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৫৭ জন, ফেল থেকে পাস করেছে ১০ জন। বুধবার বিকালে ৯টি সাধারণ শিক্ষাবোর্ডের জেএসসি ও মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের অধীনে জেডিসির পরীক্ষার খাতা পূর্ননিরীক্ষণের ফল প্রকাশ করা হয়। বোর্ডের তথ্য যাচাই করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

শিক্ষাবোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রকরা বলছেন, পুনঃনিরীক্ষণে সব বোর্ডেই অসংখ্য ভুল ধরা পড়েছে। পরিবর্তন হয়েছে বহু পরীক্ষাার্থীর ফল। খাতা পুনঃনিরীক্ষার ফলে সব বোর্ড মিলে ৩ হাজারে বেশি শিক্ষার্থীর ফল পরিবর্তন হয়েছে। ১০ বোর্ডের মধ্যে এবারো সবচেয়ে বেশি ফল পরিবর্তন হয়েছে ঢাকা বোর্ডে। এর কারণ সম্পর্কে বলা হয়েছে, এ বোর্ডে পরীক্ষার্থী সবচেয়ে বেশি, তাই ভুলের হারও বেশি।

এর আগে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় প্রাপ্ত ফলাফলে অসন্তোষ হয়ে ফল খাতা চ্যালেঞ্জ করে এক লাখ ২৫ হাজার ৬৩টি আবেদন জমা পড়েছে। আবেদনের শীর্ষে ছিল ঢাকা শিক্ষাবোর্ড। বিষয় ভিত্তিক আবেদনের র্শীষে ছিল গণিত ও ইংরেজি। সবচেয়ে বেশি আবেদন পড়েছে ৭৮ বা ৭৯ নম্বর পাওয়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে। ১ বা ২ নম্বর পেলে পরবর্তী গ্রেড অর্থাৎ জিপিএ-৫ পাওয়া যাবে এমন আশায় কয়েক হাজার শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন। গত ৩১ ডিসেম্বর এ পরীক্ষার মূল ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ফল প্রকাশের একদিন পর থেকে ৮ই জানুয়ারি পর্যন্ত পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন নেয়া হয়।

বোর্ড সংশ্লিষ্টরা বলছেন, উত্তরপত্র চ্যালেঞ্জ করার পরিমান গত কয়েক বছর ধরে বাড়ছে। পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে প্রচুর শিক্ষার্থী তাদের কাঙ্খিত ফলাফল পেয়েছে। খাতা মূল্যায়ণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের গাফিলতির কারনে আবেদন সংখ্যা যেমন বাড়ছে তেমননি ফল পরিবর্তনের সংখ্যাও বাড়ছে।
দশটি শিক্ষাবোর্ড সূত্রে জানা গেছে, ফেল থেকে বিভিন্ন গ্রেডে পাস করা শিক্ষার্থী ৭৮৪ জন। ফেল থেকে পাস করা শিক্ষার্থীদের মধ্যে ঢাকা বোর্ডে আছে ১৯০ জন, বরিশাল বোর্ডে ৪ জন, দিনাজপুর বোর্ডে ৯২ জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৮২, ময়মনসিংহ বোর্ডে ৬৫, রাজশাহী বোর্ডে ৫১, মাদরাসা বোর্ডে ১৭০, যশোর বোর্ডে ৬২, সিলেট বোর্ডে ২৮ এবং কুমিল্লা বোর্ডে ১০৪ জন।

ফেল থেকে সরাসরি জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে আছে ২জন, চট্টগ্রাম বোর্ডে ১ জন এবং ময়মনসিংহ বোর্ডের ৭ জন। তবে এই সংখ্যা আরও বেশি হতে পারে, কারণ অন্য শিক্ষা বোর্ডগুলো এই তথ্য গোপন করে পুনঃনিরীক্ষাণের ফল তৈরি করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
নতুন করে জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর মধ্যে ঢাকা বোর্ডে ৩১৩ জন, বরিশাল বোর্ডে ৪৩, দিনাজপুর বোর্ডে ৯১, চট্টগ্রাম বোর্ডে ৫৫, ময়মনসিংহ বোর্ডে ১৫০, রাজশাহী বোর্ডে ৯৩, মাদরাসা বোর্ডে ৪০, যশোর বোর্ডে ৮, সিলেট বোর্ডে ৪৫ এবং কুমিল্লা বোর্ডে ১১৯ জন রয়েছে। গত ৩১ ডিসেম্বর প্রকাশিত প্রথম ফলে ১০টি শিক্ষা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছিল ৭৮ হাজার ৪২৯ জন।

বোর্ডওয়ারী তথ্য:  ঢাকা বোর্ডে জেএসসি পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে ৩১৩ জন পরীক্ষাার্থী নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর পাস করেছে ফেল করা ১৯০ জন, ফেল করা ২ শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়েছে। চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডে পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করে ৫৫ জন পরীক্ষার্থী নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে। আর ফেল থেকে পাস করেছে ৪২ জন, ফেল থেকে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১জন। মাদরাসা শিক্ষাবোর্ডে জেডিসিতে মোট ৩১৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। এদের মধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ১৭০ জন, জিপিএ পরিবর্তন ১০৬ জনের আর নতুন করে জিপিএ ফাইভ পেয়েছে ৪০ জন।

রাজশাহী শিক্ষাবোর্ডে মোট ২০৬ জনের ফল পরিবর্তন হয়েছে। তার মধ্যে পুনঃনিরীক্ষণে ফেল থেকে পাস করেছে ৫৪ জন, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১৯ জন শিক্ষার্থীর। ময়মনসিংহ শিক্ষাবোর্ডে মোট মোট ৮৩ জনের বিভিন্ন গ্রেডে ফল পরিবর্তন হয়েছে। তারমধ্যে ফেল থেকে পাস করেছে ৬১ শিক্ষাার্থী, নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৩ জন। দিনাজপুর শিক্ষাবোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ৯৭ শিক্ষার্থী, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯২জন, এছাড়া বিভিন্ন গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে ৯২ জনের। সিলেট শিক্ষাবোর্ডে ফেল থেকে পাস করেছে ২৮, নতুন করে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৫জন, কুমিল্লা বোর্ডে নতুন জিপিএ-৫ পেল ১১৮, ফেল থেকে পাস করেছে ১০২ জন, বরিশাল বোর্ডে নতুন জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪৩, ফেল থেকে পাস করেছে ৪জন শিক্ষার্থী।

এ ব্যাপারে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ও আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটির আহ্বায়ক অধ্যাপক মু. জিয়াউল হক বলেন, খাতা মূল্যায়নে নানা ধরণের ভুল-ভ্রান্তি হয়ে থাকে। এ ধরনের ভুল যারা করেন, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেয়ার রীতি রয়েছে। পরবর্তী পরীক্ষা সংক্রান্ত কাজে বিরত রাখাসহ ভুলের মাত্রা অনুযায়ী বোর্ড ও মন্ত্রণালয় ব্যবস্থা নেয়।
জানা গেছে, এবার জেএসসি ও জেডিসি এই দুই পরীক্ষআয় মোট পরীক্ষার্থী ছিল ২৬ লাখ ৬১ হাজার ৬৮২ জন। এর মধ্যে জেএসসি পরীক্ষার্থী ছিল ২২ লাখ ৬০ হাজার ৭১৬ জন।