১৩ বছর নৌকায় থাকা গোলাপী পেলেন পাকা ঘর

আসাদুজ্জামান আজম
অবশেষে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে নৌকায় বসবাস করা গোলাপী বেগমকে (৯০) পেলেন জমিসহ পাকা ঘর। এতে ডামুড্যার জয়ন্তী নদীতে নৌকায় বসবাস করা উদ্বাস্তু জীবন ছেড়ে ডাঙায় বসবাসের সুযোগ হয়েছে তার। রবিবার (২০ জুন) দুপুরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (অতিরিক্ত দায়িত্ব) আলমগীর হুসাইন তাকে নতুন ঘরের চাবি ও জমির দলিল বুঝিয়ে দেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারের পাকা ঘরে দুই-একদিনের মধ্যেই উঠবেন তিনি। অথচ দু’দিন আগেও নৌকাতেই ছিলো তার ঘরবাড়ি- নৌকাতেই সব।

গত ১৪ বছর গোলাপী বেগম বসবাস করেছেন ছোট্ট একটি নৌকায়। এখন তার বয়স ৯০ বছর। কখনো ভাবেননি আবার নিজের ঘর হবে। জীবনের শেষ সময়টুকু নদীতে ভেসে ভেসে কাটানোকে নিয়তি ধরে নিয়েছিলেন। এখন পাকা বাড়িতে নিজের সংসার সাজাবেন গোলাপী বেগম।

স্থানীয় সূত্র মতে, ৯০ বছর বয়সী গোলাপী বেগমের বাড়ি শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার পূর্ব ডামুড্যা ইউনিয়নে। তিনি ওই ইউনিয়নের মৃত মো. আশ্রাফ আলীর স্ত্রী। তার অসহায় জীবনের গল্প নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রচার হলে শরীয়তপুর জেলা প্রশাসক পারভেজ হাসান ও ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নজরে আসে। পরে প্রশাসনের উদ্যোগে তার বয়স্কভাতার কার্ডের ব্যবস্থা করা হয়। নগদ অর্থও পেয়েছিলেন এবং তাকে প্রতিশ্র“তি দেওয়া হয়েছিল শিগগিরই একটি পাকা ঘর উপহার দেওয়া হবে। সেই প্রতিশ্র“তি হিসেবেপাকা ঘর ও জমির কাগজপত্র এবং চাবি বুঝে পেয়েছেন তিনি।

ডামুড্যা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আলমগীর হুসাইন জানান, ওনার (গোলাপীর) সম্পর্কে আগে কিছু জানতাম না। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায় সংবাদ প্রচার হওয়ার পর জেলা প্রশাসক স্যার ও আমাদের নজরে আসে। এরপর তাকে বয়স্ক ভাতার কার্ড ও নগদ কিছু অর্থ দিয়েছি উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। আজ তাকে নতুন ঘরের চাবি ও জমির দলিল বুঝিয়ে দেওয়া হলো। রঙের কাজ বাকি আছে, রঙের কাজ শেষ হলে দুই-একদিনের মধ্যেই তিনি ঘরে উঠতে পারবেন।

জানা যায়, স্ত্রীর সঙ্গে বনিবনা না হওয়ায় প্রায় ১৩ বছর ধরে মা গোলাপী বেগমের সঙ্গে নৌকায় বসবাস করছেন ছেলে নুরু মিয়া (৫৩)। গ্রামে একাধিক সালিশ-দরবার করেও স্ত্রীর সঙ্গে সমস্যার সমাধান হয়নি। নুরু মিয়া জয়ন্তী নদীতে মাছ ধরেন। এতে যা রোজগার হয় তা দিয়েই মা-ছেলের চলে যায়।

তবে মা-ছেলের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন ছিল ছোট্ট একটা ঘরে দু’জনে একসঙ্গে থাকবেন। এরজন্য চেয়ারম্যান, মেম্বার, গণ্যমান্যদের কাছে কম ঘোরেননি নুরু মিয়া। কিন্তু কিছুই পাননি।
বৃদ্ধ গোলাপী বেগম বলেন, আমার কষ্ট দেখে সাংবাদিকরা আমাকে নিয়ে নিউজ করার পর স্যারেরা আমাকে বয়স্ক ভাতা কার্ড ও নগদ টাকা দিয়েছিলেন। আজ ঘরের চাবি ও জমির দলিল পেয়েছি। নৌকা ছেড়ে নতুন ঘরে উঠবো, এতে আমি অনেক খুশি। তিনি ঘর ও জমি পেয়ে প্রধান মন্ত্রী জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন।

নুরু মিয়া বলেন, মায়ের বয়স্ক ভাতা, সরকারি সুযোগ সুবিধা আর থাকার একটি ঘরের জন্য চেয়ারম্যান, মেম্বার আর গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কাছে অনেকবার গেছি। কোনও সুযোগ-সুবিধা পাইনি।

জেলা প্রশাসক মো. পারভেজ হাসান বলেন , গোলাপী বেগমের জন্য ঘরের ব্যবস্থা করা হয়েছে। তিনি দারুল আমান ইউনিয়নে ঘর চেয়েছিল, সেখানেই দিয়েছি। মুজিব শতবর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে ঘর দিচ্ছেন, সেই ঘর আজ তাকে বুঝিয়ে দিতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আজ তিনি দুই শতাংশ জমি ও একটি ঘরের মালিক হলেন। তিনি তার ছেলে নিয়ে সে ঘরে দুই-একদিনের মধ্যেই উঠতে পারবেন।

এএ/বিইউ