প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশ বিমা নিয়ে হয়রানি বন্ধের

আইএনবি ডেস্ক: বিমা করার বিষয়ে মানুষকে আরও আগ্রহী করার পাশাপাশি হয়রানি ছাড়া গ্রাহকদের প্রাপ্য বুঝিয়ে দিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। একইসঙ্গে এ খাতে স্বচ্ছতা নিশ্চিতে নজরদারি বাড়াতে বলেছেন তিনি।

রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে  অংশ নিয়ে মঙ্গলবার (০১ মার্চ) ‘জাতীয় বিমা দিবস-২০২২’-উদযাপন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানেএ কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

 

শেখ হাসিনা বলেন, ‘বিমা মানে হলো আমানত। আমি একটা আমানত রাখছি। সেই আমানত যেন সময়মতো মানুষ পেতে পারে। আবার এটা পেতে গিয়ে যেন কোনো ঝামেলা পোহাতে না হয়। যেটা গ্রাহকের প্রাপ্য সেটা যেন সহজে পাওয়া যায়, সে ব্যবস্থাও করতে হবে। ’

‘পাশাপাশি কেউ যেন দুই নম্বরি করতে না পারে সেটাও দেখতে হবে। কিন্তু তার টাকাটা যেন সে পায়, কোন হয়রানির শিকার যেন না হয়। ’

সরকারি-বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উন্নত বিশ্বের মতো বিমা ব্যবস্থা আমাদের দেশেও চালু হোক সেটাই আমরা চাই। ’সেবাটা যদি মানুষ হাতের কাছে পায় তাহলে অনেকে কিন্তু তার জীবনে নিশ্চিন্ত হতে পারবে। সেজন্য সরকারি-বেসরকারি বিমা কোম্পানিগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে হবে। ’

বিমা সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘বিমা নিয়ে মানুষের আস্থা বা গ্রাহকের স্বার্থকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সেবা দিতে হবে। মানুষকে বিমা বিষয়ে আগ্রহী করতে যথাযথ পদ্ধতি কাজে লাগাতে হবে। জনগণকে আরও উৎসাহিত করতে হবে। এটাই আমার একটা অনুরোধ থাকবে। ’

‘সততার সঙ্গে কাজ করলে সবাই লাভবান হবে। আর মানুষকে উৎসাহিত করা। ’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার আসার পর আমরা কিন্তু বেসরকারি খাতে অনেকগুলো বিমা কোম্পানি দিয়েছি। তাতে অনেকের ব্যবসা করার সুযোগ হয়েছে। সেই বিমা ব্যবসায় যেমন মানুষ সম্পৃক্ত হয়েছে, পাশাপাশি আমাদের দেশের অনেক মানুষের কর্মসংস্থানেরও ব্যবস্থা হয়েছে। ’

বিমা সংশ্লিষ্টদের দু্টি বিষয়ে নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশ দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখানে দুইটা বিষয়- একটা হলো মানুষের অনীহা, ওই যে টাকা দিতে হবে সে দিতে চায় না, সেখানে একটা ফাঁকি দেওয়া। আরেকটা হচ্ছে- এই যে মিথ্যা ঘটনা রটিয়ে সেখান থেকে টাকা নেওয়া। এই দুইটা বিষয়ে আমি মনে করি খুব বেশি নজর দেওয়া দরকার। ’

‘যারা দুই নম্বরি করে টাকা নিতে চায় সেগুলোও ভালো নিরীক্ষা করতে হবে। এ বিষয়ে আমি মনে করি আপনারা আরও বেশি সর্তক থাকবেন। ’

মিথ্যা ঘটনা রটিয়ে বিমা কোম্পানি থেকে টাকা নিতে চাওয়া প্রতারকদের সর্তক করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখানে আমি একটা বিষয় বলবো যেটা আমার নিজের অবজারভেশন। এটা ছোটবেলা থেকে দেখেছি। একটা ঘটনা বলি পাটের গুদামে হঠাৎ আগুন লেগে যেত, আগুন লাগার সঙ্গে সঙ্গে সব পাট নাকি পুড়ে যেত। তখন বিমা থেকে বিরাট অঙ্কের টাকা নিত। তো একবার এটা খোঁজ করে দেখা গেল আসলে মালিক পাট বিক্রি করে আগুন লাগিয়ে দিত। এরপরে একটা বিশাল অঙ্কের টাকা দাবি করে বসতো। একই ঘটনা আমি পেয়েছি গার্মেন্টস সেক্টরেও। ’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমার সন্দেহ হলো, আমি নাম বলে কাউকে বিব্রত করবো না। কিন্তু এটা আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলছি। তারপর নজরদারি শুরু করলাম। ঠিক দেখা গেল যে ঘটনা তাই। … সেটা আমি এক পর্যায়ে আটকালাম। ভালোভাবে তথ্য নিলাম। তো এ ধরনেরও ঘটনা কিন্তু ঘটে। ’

থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স বন্ধ করে দেওয়ার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এই থার্ড পার্টি ইনস্যুরেন্স বন্ধ করে দিতে বলেছি, এটা বন্ধই করে দিতে হবে। এটা একেবারে ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছুই না। ’

বিমা খাতকে সম্পূর্ণ ডিজিটালাইজড করার নির্দেশনা দিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘এখন তো আমাদের দেশটা আমরা ডিজিটাল করে ফেলেছি। সবকিছু এখন ডিজিটালি হয়। বিশেষ করে করোনাকালীন সময়ে, আমরা ডিজিটাল করেছিলাম বলেই অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে পেরেছি, মানুষের জীবিকা সচল থেকেছে। কাজেই আমি মনে করি বিমা খাতটা ডিজিটালাইজড এবং অটোমেশনে আনতে হবে। ’

অনুষ্ঠানে ভিডিও আরও বক্তব্য রাখেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে উপস্থিত থেকে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বিমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন, বাংলাদেশ ইনস্যুরেন্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিআইএ) সভাপতি শেখ কবির হোসেন।

 

আইএনবি/বিভূঁইয়া