জুই এখন কি করবে বলতে পারো কেউ?

তারিক মাহমুদ:
মাঝে মাঝে নিজকে খুব অসহায় লাগে।আমি কারো জন্য কিছু করতে না পারলে এই অসহায়ত্ব আরো বেড়ে যায়।নিজে নিজে কষ্ট পাই।ঘুম আসে না।দীর্ঘ সময় জেগে থাকি।গান শুনি।তার কথা ভাবি।
তার কথা তোমাদের বলা হয়নি।আজ আর নিজের কথা লিখবো না।বার বার নিজের কথা লিখতে ইচ্ছে করে না।
আজ তার কথা তোমাদের জানাবো।অমর এক প্রেমকাহিনী।হয়তো ইতিহাসের পাতায় এই কাহিনী কোনদিন স্হান হবে না।কিন্তু আজ যারা জানবে,তারা তো এই প্রেম কাহিনীর কথা একবার হলেও মনে করবে।একবার হলেও তার জন্য মন খারাপ করবে।একবার হলেও মনে মনে দুঃখ পাবে,আহারে মেয়েটা জীবনে ভালো বেসে সুখ পেলো না।

আসলেই মেয়েটা ছিল ভালোবাসার কাঙাল। ভালোবাসার অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল মেয়েটার।এমন ভালোবাসা পাগল মেয়ে আমি জীবনে কোনদিন দেখিনি।

আমি তাকে চিনি আমার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের শেষ বছরে। সামান্য ক’দিন কথা হয়েছিল। ঝাকরা চুলের ছোটখাটো একটা মেয়ে। মেয়েটার এবার একটা নাম দেওয়া যাক ।ফুলের নামেই তাকে ডাকি। নাম তার জুই।
আমি বিশ্ববিদ্যালয় ছেড়ে আসার পরেও দুয়েকটা চিঠি জুই আমাকে লিখে ছিল।তারপর আর যোগাযোগ হয়নি।জীবনের তাগিদে দুজনই দুজনকে হারিয়ে ফেলেছি।চলে গেছে ২৮ বসন্ত।তারপর একদিন ফেসবুক থেকে জুই আমাকে খুঁজে বের করে।যোগাযোগ করে।কথা বলে।দেখা করে। প্রথম দেখার দিন আমি তো অবাক।এই সেই ঝাকরা চুলের মেয়েটি।চেনাই যায় না।চুলে পাক ধরেছে।ঘন কালো চুল পাতলা হয়ে গেছে।চেহারাও ফেকাসে হয়ে গেছে।বুঝলাম জীবনের উপর দিয়ে ভীষণ ঝড় বয়ে গেছে।

তারপর একদিন কি মনে করে।জুই তার জীবনের কাহিনী আমাকে জানালো।শুনে আমার বুক কষ্টে ভারি হয়ে গেলো।বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালে ক্লাস মেট কে ভালোবেসে বিয়ে করেছিল।বাবা মার বাধা থাকার পরেও। কিন্ত সুখী হতে পারেনি।প্রতিদিনই কোন না কোন ঝামেলা নিয়ে সংসার করেছিল জুই।ভালোবাসা পাগল জুই ভালোবাসার মানুষের সব নির্যাতন সহ্য করেই সংসারে টিকে ছিল।এই সংসারে তার দুটো ছেলে মেয়ে। ২০১৪ সালে সেই ভালোবাসার মানুষ টা বিনা নোটিশে ওপারের টিকেট কেটে জুইকে একা রেখে চলে গেলো।সেই জুই একা একা এই নশ্বর পৃথিবীতে বেঁচে রইলো কেবল তার স্মৃতি চারন করে।তার এক বছর পরে তার স্বামীর এক কলিগ তাকে আবার ভালোবাসার স্বপ্ন দেখালো।জুই আবার ভালোবাসার স্বপ্নে বিভোর হয়ে ভালোবাসলো।সংসার সাজালো।কটা বছর ভালোই ছিল।

আবার জুই এর কপাল ভাঙলো।সেও আর আসে না।জুই প্রতিদিন, প্রতিরাত তার জন্য অপেক্ষায় বসে থাকে। সে আর আসে না।খবর ও নেয় না।ফোনও ধরে না।

এখন জুই প্রতিরাতে একবার করে ভালোবাসার কষ্টে মরে যায়।
দিনে মরে যায় পারিপার্শ্বিক সামাজিক অবস্থার কারনে।
না নিজে সইতে পারে,না কাইকে বলতে পারে?
বন্ধুরা, তোমরা কি কেউ বলতে পারো জুই এখন কি করবে?