ইসরায়েলি বিমান হামলায় হামাসের শীর্ষ কমান্ডার নিহতের কথা জানালো যুক্তরাষ্ট্র

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: হামাসের অন্যতম শীর্ষ সামরিক নেতা মারওয়ান ইসা ইসরায়েলি বিমান হামলায় মারা গেছেন বলে জানিয়েছেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তা জ্যাক সুলিভান। গত সাতই অক্টোবর থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইসরায়েলি হামলায় হামাসের যে সব নেতা মারা গেছেন তার মধ্যে মি. ইসাই সবচেয়ে জ্যেষ্ঠ।

তবে, আনুষ্ঠানিকভাবে বিষয়টি এখনো নিশ্চিত করেনি গাজা নিয়ন্ত্রণকারী ফিলিস্তিনি গোষ্ঠীটি। খবর বিবিসি।

সোমবার, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সাথে টেলিফোনে কথা বলেন।

ইসরায়েলি মিডিয়ার দাবি, মধ্য গাজার নুসেইরাত শরণার্থী শিবিরের নিচে একটি টানেল কমপ্লেক্স লক্ষ্য করে ইসরায়েলি বিমান হামলায় হয় গত সপ্তাহে। ঐ হামলায় নিহত হন মারওয়ান ইসা।

হামাসের সামরিক শাখা ইজেদিন আল-কাসাম ব্রিগেডের ডেপুটি কমান্ডার মি. ইসা ছিলেন ইসরায়েলের কাছে মোস্ট ওয়ান্টেড। আগে থেকেই এই হামাস নেতাকে ইউরোপীয় ইউনিয়নও কালো তালিকাভুক্ত হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

গত ৭ অক্টোবরের হামলার পেছনে তাকে অন্যতম হোতা হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। যে হামলায় প্রায় ১২০০ ইসরায়েলির মারা যায়। ঐ হামলার জের ধরেই শুরু হয় এই যুদ্ধ।

মি. ইসা প্রথম ফিলিস্তিনি ইন্তিফাদার সময় পাঁচ বছর ইসরায়েলের কারাগারে বন্দি ছিলেন।

ইসরায়েল হামাস যুদ্ধ ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়ার পর থেকে হামাসের অনেক সিনিয়র নেতাকে হত্যা করেছে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী। এর আগে হামাসের রাজনৈতিক নেতা সালিহ আল-আরৌরি বৈরুতের দক্ষিণ উপকণ্ঠ দাহিয়েতে বিস্ফোরণে মারা যান। ওই হামলার জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করা হয়।

হোয়াইট হাউসের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মি. সুলিভান জানান, হামাসের অন্য নেতারা গাজার হামাসের টানেল নেটওয়ার্কের গভীরে লুকিয়ে রয়েছেন বলে তারা ধারণা করছেন।

তিনি জানান, হামাসের শীর্ষ নেতাদের খুঁজে বের করতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহায়তা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল এবং তারাও ন্যায় বিচার পাবে।

ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরুর পর ইসরায়েল তাদের সামরিক বাহিনীর অনেক সফলতার কথা বললেও, এতে অনেক বেসামরিক মানুষের মারা যায়। এতে শঙ্কার কথা জানিয়ে নেতানিয়াহুকে টেলিফোন করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন।

মি. সুলিভানের মতে, হামাসের অপরাধীদের খুঁজে বের করতে যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলকে সহযোগিতার কথা বলেছে, তবে রাফাহ শহরে হামলা চালানো ইসরায়েলের জন্য ভুল হবে বলেও হুঁশিয়ারি করেছিলেন প্রেসিডেন্ট বাইডেন। দক্ষিণ গাজার রাফাহ শহরে আনুমানিক এক মিলিয়ন শরণার্থী যুদ্ধের সময় আশ্রয় নিয়েছে।

মার্কিন এই জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, এই আগ্রাসন আরও নিরপরাধ বেসামরিক মানুষকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দিবে। এরই মধ্যে ভয়াবহ মানবিক সংকট দেখা দিয়েছে। এমন অবস্থায় হামলা পরিস্থিতি আরো খারাপ করবে। যা আন্তর্জাতিকভাবে ইসরাইলকে আরও বিচ্ছিন্ন করে ফেলবে।

৭ অক্টোবর যুদ্ধ শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত ৩১ হাজারের বেশি ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক ইসরায়েলি হামলায় মারা গেছে বলে জানিয়েছে হামাসের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। হামলায় বেসামরিক লোকের মৃত্যুর ঘটনায় সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় উঠেছে। যা আন্তর্জাতিকভাবে ইসরায়েলকে তাদের মিত্রদের কাছ থেকে দূরে ঠেলে দিচ্ছে।

মি. সুলিভান বলেছেন, রাষ্ট্রপতি বাইডেন আগে যখন নেতানিয়াহুর সাথে ফোনে কথা বলেছেন; তখন তিনি ইসরায়েলকে এই যুদ্ধ বন্ধের চাপ দিয়েছিলেন।

তিনি বলেন, প্রেসিডেন্ট বাইডেন আজ আবারও প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহুকে বলেছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রও হামাসকে পরাজিত করতে সহযোগিতা করবে। তবে এমনভাবে যুদ্ধ করে নয়, সেটি করতে হবে সুসংগত এবং টেকসই কৌশল নিয়ে।

একই সময়ে মি. বাইডেন ইসরায়েলি নেতাকে রাফাহ আক্রমণের বিষয়ে মার্কিন উদ্বেগের কথাও জানান। সেই সাথে এ নিয়ে আলোচনা করতে আগামীতে ওয়াশিংটনে ইসরায়েলি সামরিক, গোয়েন্দা এবং অন্য কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত একটি আন্তঃসংস্থা দল পাঠাতে ইসরায়েলকে রাজি করিয়েছিলেন তিনি।

মি. সুলিভান বলেছেন, আশা করছি সেই বৈঠকটি না হওয়া পর্যন্ত ইসরায়েল তাদের আক্রমণ স্থগিত রাখবে।

মি. নেতানিয়াহু এক্সে (সাবেক টুইটার) বাইডেনের ফোনের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং বলেছেন যে তারা দু’জন সর্বশেষ অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করেছেন। পাশাপাশি এই যুদ্ধে ইসরায়েলের মূল লক্ষ্য নিয়েও।

ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, তাদের উদ্দেশ্য হামাসকে নির্মূল করা, জিম্মিদের মুক্ত করা এবং নিশ্চিত করা যে গাজা কখনই ইসরায়েলের জন্য হুমকি হয়ে উঠবে না।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের ফোনের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সিনিয়র ডেমোক্র্যাটরা মি. নেতানিয়াহুকে ফোন দিয়ে এই যুদ্ধ নিয়ে কঠোর সমালোচনা করেছিলেন।

বৃহস্পতিবার, সিনেটের শীর্ষ ডেমোক্র্যাট চাক শুমার ইসরায়েলে নতুন নির্বাচনের আহবান জানিয়ে বলেছেন যে, মি. নেতানিয়াহু দেশের প্রয়োজনের চেয়ে নিজে রাজনৈতিকভাবে বেঁচে থাকার ওপর বেশি গুরুত্ব দিচ্ছেন।

শুক্রবার বাইডেন তার ওভাল অফিসে সাংবাদিকদের বলেন, তিনি মি. শুমারের এমন বক্তব্য সম্পর্কে আগে থেকেই জানতেন। সে সময় বাইডেন বলেছিলেন, এটি শুধু শুমারের একার বক্তব্য নয় অনেক আমেরিকানেরই একই ধরনের উদ্বেগ রয়েছে।

 

আইএনবি/বিভূঁইয়া