আজ মৃত্যু আরও ৩ জনের, দেশে করোনা আক্রান্ত বেড়ে ১০৭১

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ভারতের গোটা দেশ ‘তালাবন্দি’। এরই মধ্যে ভিন্ন রাজ্য থেকে কাতারে কাতারে শ্রমিকেরা ফিরছেন নিজের-নিজের বাড়িতে। এই পরিস্থিতিতে গোষ্ঠী সংক্রমণ ঠেকাতে মরিয়া কেন্দ্র। আজ দেশ জুড়ে সব রাজ্যের সব জেলার সীমানা বন্ধ করার নির্দেশ দিল। স্পষ্ট বলা হয়েছে, শ্রমিকদের পথে নামা যে ভাবেই হোক, আটকাতে হবে। এই নির্দেশ অমান্য করলেই ১৪ দিনের কোয়রান্টিন! অথচ আজও হাজার হাজার শ্রমিককে দেখা গিয়েছে রাস্তায়। অধিকাংশই ফিরছেন হেঁটে, অনেকে আবার ট্রাকে গাদাগাদি করে। এ দিকে দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে করোনা-আক্রান্তের সংখ্যা আজ বেড়ে ১০২৪ হল বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। যদিও রাজ্যগুলির দেওয়া হিসেব যোগ করলে মোট সংক্রমণের সংখ্যা প্রায় ১০০ বেশি হয়। মন্ত্রক জানিয়েছে, দেশে মোট মৃত্যু হয়েছে ২৭ জনের।

গত ২৪ ঘণ্টায় দেশে ১০৬ জনের শরীরে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে। শুধু আজই মারা গিয়েছেন ছ’জন। দিল্লি সরকারের দাবি, এক ধাক্কায় আজ সে রাজ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ২৩ জনের। মোট আক্রান্ত ৭৪ জন। স্বাস্থ্য মন্ত্রক যদিও বলছে, সংখ্যাটা ৪৯। কেরলে নতুন করে সংক্রমণ ধরা পড়েছে ২০ জনের। মোট আক্রান্ত ২০২ জন। কিন্তু স্বাস্থ্য মন্ত্রক বলছে, ১৮২। যে সব রাজ্যে সংক্রমণের হার বাড়ছে, এলাকা ধরে-ধরে সেই সব ‘হটস্পট’ চিহ্নিত করতে চাইছে স্বাস্থ্য মন্ত্রক। গোষ্ঠী-সংক্রমণের কথা এখনও না-মানলেও করোনা মোকাবিলায় আজই প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয় ১১টি উচ্চস্তরীয় কমিটি গড়ার কথা জানিয়েছে। এই সব কমিটিই এ বার রাজ্যগুলির সঙ্গে সমন্বয় করবে। পৃথক হাসপাতাল গড়া না-গেলেও, রাজ্যগুলি যাতে হাসপাতালের আলাদা ব্লকে করোনা-রোগীদের রাখে, আজ তারও নির্দেশ দিয়েছে কেন্দ্র।

করোনা-সঙ্কট

• এক দিনে সংক্রমিত ১০৬

• দিল্লি, গুজরাত, কর্নাটক, কেরল, মহারাষ্ট্র ও তেলঙ্গানা থেকে এক জন করে মৃত্যু আরও ছ’জনের

• আপ সরকারের দাবি, দিল্লিতে এক দিনেই আক্রান্ত ২৩ জন

• সংক্রমণ শীর্ষে মহারাষ্ট্র, রাজ্যের হিসেবে ২০৩

কিছু মৃত্যু নিয়ে তৈরি হয়েছে ধোঁয়াশাও। করোনা-সংক্রমিত সন্দেহে গোয়া মেডিক্যাল কলেজে ৬৮ বছরের এক বৃদ্ধাকে আইসোলেশনে রাখা হয়েছিল। আজ ভোরে তিনি মারা যান। কিন্তু রিপোর্ট না-আসায় একে এখনই করোনা-মৃত্যু বলতে চাইছে না স্বাস্থ্য মন্ত্রক। কেরলের কান্নুরে সদ্য শারজা থেকে ফেরা বছর পঁয়ষট্টির এক বৃদ্ধ আজ হৃদ্‌রোগে মারা যান। তাঁরও করোনা-পরীক্ষার রিপোর্ট আসা বাকি।

মহারাষ্ট্রেও বাড়ছে সংক্রমণ। আজ সেখানে নতুন সাত জনের পজ়িটিভ রিপোর্ট ধরে মোট আক্রান্তের সংখ্যা পৌঁছল ২০৩-এ। স্বাস্থ্য মন্ত্রকের হিসেবে যদিও সংখ্যাটা ১৮৬। তবে এ রাজ্যে সুস্থও হয়েছেন ৩৪ জন। গোষ্ঠী-সংক্রমণের আশঙ্কা উড়িয়ে উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পওয়ার বলেন, মুম্বই-ঠাণে এবং পুণের বেশির ভাগ সংক্রমণের পিছনেই বিদেশ যোগ রয়েছে, পরে যা কিছুটা ছড়িয়েছে পরিবারের মধ্যে।

পরিবারের মধ্যে এ ভাবে বাড়তে থাকা সংক্রমণের খবর মিলেছে মধ্যপ্রদেশ থেকেও। ইনদওরের একটি পরিবারের তিন জনের মধ্যে সংক্রমণ ধরা পড়েছিল আগেই। সম্প্রতি করোনায় তাঁদের এক জন (৬৫ বছরের বৃদ্ধা) মারা গিয়েছেন। আজ সংক্রমণ ধরা পড়ল ওই পরিবারেরই বছর সতেরোর এক তরুণীর।

উত্তরপ্রদেশের গৌতম বুদ্ধ নগরে আজ সংক্রমণ ধরা পড়েছে পাঁচ জনের। যাঁদের গড় বয়স তিরিশের কোঠায়। জেলায় মোট আক্রান্ত ৩১। নতুন পাঁচটি সংক্রমণের নেপথ্যেই লন্ডন থেকে নয়ডার একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে অডিট করতে আসা এক ব্যক্তির প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ যোগ রয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ১৪ থেকে ১৬ মার্চের মধ্যে নয়ডায় কাজ করে যাওয়া ওই ব্রিটিশ অডিটরের তথ্য গোপন রাখার অভিযোগে, এই বেসরকারি সংস্থাটির বিরুদ্ধে গত কালই এফআইআর করেছে উত্তরপ্রদেশ পুলিশ। এই পরিস্থিতিতে লকডাউনকেই হাতিয়ার করতে চাইছে কেন্দ্র ও রাজ্যগুলি। লকডাউন ভঙ্গের দায়ে দেদার ধরপাকড়ও চলছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে বিশেষ নজর দেওয়া হচ্ছে করোনা-পরীক্ষা ইত্যাদি চিকিৎসা পরিষেবা খাতেও। ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিক্যাল রিসার্চ (আইসিএমআর) জানিয়েছে, এখনও পর্যন্ত গোটা দেশে ৩৫,০০০-এর করোনা-পরীক্ষা করা হয়েছে। এই মুহূর্তে ১১৩টি ল্যাবে এই পরীক্ষা হচ্ছে। করোনা-পরীক্ষার অনুমতি দেওয়া হয়েছে বেসরকারি আরও ৪৭টি ল্যাবকে। বেসরকারি হাসপাতাল চেন ফর্টিস হেলথকেয়ার আজই জানিয়েছে, দেশ জুড়ে ২৮টি হাসপাতালে তারা আইসোলেশন ওয়ার্ড খুলবে।

সেনাবাহিনীতে আরও দু’টি সংক্রমণ ধরা পড়েছে। এক জন কলকাতার কম্যান্ড হাসপাতালের চিকিৎসক। অন্য জন দেহরাদূনের এক জুনিয়র কমিশনড অফিসার। লকডাউনের আগেই তিনি দিল্লি থেকে ফেরেন। সংক্রমণ ঠেকাতে মাঠে নেমেছে আধাসেনাও। সম্প্রতি তাদের যে ৪৫০ জন ডাক্তারকে নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছে, অবিলম্বে তাঁদের কাজে যোগ দিতে বলা হয়েছে। প্রয়োজনে তৈরি থাকতে বলা হয়েছে আধাসেনার অবসরপ্রাপ্ত ডাক্তারদেরও।
আনন্দবাজার

আইএনবি/বিভূঁইয়া