সেহরি ও ইফতার শব্দের ব্যুৎপত্তি, অর্থ ও প্রমিত বাংলা বানান [] এস এম শাহনূর

আইএনবি ডেস্ক:
ইসলাম ধর্মের পাঁচটি মূল ভিত্তির তৃতীয় স্তম্ভ
রোজা (সওমের) এবং আরবি হিজরি সনের নবম মাস রমজান (রামাদান) এর সঙ্গে যে দুটো শব্দ ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে তা হল সেহরি ও ইফতার।

➤সেহরি:
এটি একটি আরবি শব্দ। সেহরি অর্থ: শেষ রাত বা ঊষা। রমজানের রোজা রাখার নিয়তে শেষ রাতের পূর্ব মুহূর্তের খাবারকেই সেহরি বলে।
হাদিস অনুযায়ী শব্দটির উচ্চারণ হলো:
সাহুর ও সাহার (ْسُحُوْر/ سَحَر) [বুখারী,মুসলিম]

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
تَسَحَّرُوا فَإِنَّ فِي السَّحُورِ بَرَكَةً
“তোমরা সাহুর (সেহেরি) করো, কারণ সাহুরে (সেহেরিতে) বরকত রয়েছে।” (বুখারি ও মুসলিম)।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান মতে বাংলায় ব্যবহৃত সেহরি কোনো আরবি শব্দ নয়; বরং আরবি উৎসের বাংলা (পারিভাষিক) শব্দ। অভিধানের ১৩৫৩ পৃষ্ঠায় সেহরি শব্দের ভুক্তি রয়েছে। এতে সাহরি, সাহরী বা সেহরী বানানের কোনো শব্দ নেই। কারণ,প্রমিত বানানের নিয়মানুযায়ী বিদেশি উৎসের কোনো বাংলা শব্দে সাধারণত ‘ঈ’ কার হয়না। তাই শব্দটির বানানে ‘ই’ কার হবে।

কেউ হুবহু হাদিসের শব্দ ব্যবহার করতে চাইলে ‘সাহুর’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারে; সেহেরি বা সাহরি কোনটাই নয়। ভোর রাতের খাবার বুঝাতে ‘সাহরি’ শব্দটি শুদ্ধ নয়। কারণ হল, হাদিসে ‘সাহরি’ শব্দের অর্থ: আমার বক্ষ বা সিনা। [ উৎস: সহিহ বুখারি, হা/ ৪৪৪৯]

কেউ কেউ সেহরি অর্থ জাদু বলে প্রচার করছে। মনে রাখুন, জাদুকে আরবি ভাষায় ‘সিহির’ বলে,সেহরি নয়। আরবি শব্দমূল ‘সিহরুন’ বা ‘সাহরুন’ থেকে ‘সিহির’ শব্দের উৎপত্তি। (উৎস: আল্লামা আলুসী রহ. বর্নিত / তাফসিরে রহুল মায়ানী : খন্ড ১, পৃ. ৩৩৮)।

➤ইফতার:
এটি একটি আরবি শব্দ। সন্ধ্যায় রোজার উপবাস ভাঙা হয় যে খাবারের সঙ্গে তাই হল ইফতার।
আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে মহানবি (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দুইটি আনন্দঘন মুহূর্ত রয়েছে। একটি হলো ইফতারের সময় (এ সময় যেকোনো নেক দোয়া কবুল করা হয়)। অন্যটি হলো (কেয়ামতের দিবসে) নিজ প্রভুর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়।’ (তিরমিজি, হাদিস : ৭৬৬; বুখারি, হাদিস : ৭৪৯২; মুসলিম, হাদিস : ১১৫১)
ইফতার শব্দটি আরবি ﻓﻄﺮ ফাতর ( যার অর্থ এমন খাদ্য যা দ্বারা রোজা ভঙ্গ করা হয়) থেকে এসেছে। আরবি শব্দ ‘ইফতার’ অর্থ হলো – রোজা ত্যাগ করা।
অন্য কথায়, রোজা ত্যাগ করা বা ছাড়ার জন্য খাদ্য গ্রহণ করা।

সুনানে তিরমিজি; রোজা অধ্যায় : ৬৩২ নং হাদিস থেকে জানা যায়, “নবী (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’’ এটাই সুন্নাত।

বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধানের
১৮৪ পৃষ্ঠায় ইফতার শব্দের ভুক্তি রয়েছে। এতে ইফতার (বিশেষ্য পদ) আরবি শব্দ (খাদ্য গ্রহণ অর্থে) এবং ইফতারি (বিশেষ্য পদ) ফারসি শব্দ (খাদ্য বস্তু) দেখানো হয়েছে।

সংকলক: এস এম শাহনূর
কবি ও আঞ্চলিক ইতিহাস গবেষক।

আইএনবি/বিভূঁইয়া