প্রধান বিরোধী দল হতে পারে স্বতন্ত্র জোট

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ

আইএনবি ডেস্ক: বাংলাদেশের ইতিহাসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদে সবচেয়ে বেশি স্বতন্ত্র প্রার্থী জয়লাভ করেছেন। এর পরই বর্তমান সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টির অবস্থান। ফলে সর্বত্র আলোচনা, সংসদে প্রধান বিরোধী দলের আসনে কারা বসবেন- জাতীয় পার্টি নাকি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে বিরোধী দল হতে পারবেন। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আইনত এটা ‘সম্ভব’। সংসদে বিরোধী দল কিংবা বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচনের বিষয়ে সংবিধানে স্পষ্ট কিছু বলা নেই। আর স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় পাওয়া একাধিক আওয়ামী লীগ নেতা ইতোমধ্যে বলেছেন, তারা আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করবেন। তবে জোটোর বিষয়ে গাইডলাইনের অপেক্ষা করবেন।

গাজীপুর-৫ আসনের সংসদ সদস্য (স্বতন্ত্র) আখতারুজ্জামান বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের কর্মী। আমি এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেত্রীর সফলতার কথা বলেছি। আমার প্রতিপক্ষ দলীয় মনোনয়নপ্রাপ্ত হলেও আমরা (স্বতন্ত্র প্রার্থীরা) ছিলাম অনুমোদিত প্রার্থী। নেত্রী আমাদের বলেছেন- কোনো এমপি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় যেন জয়ী না হয়। মানুষের অংশগ্রহণের জন্য কৌশল হিসেবে আমরা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছি। প্রধানমন্ত্রীর কৌশল সফল হয়েছে।

স্বতন্ত্র জোট গঠনের প্রসঙ্গে ঢাকসুর সাবেক ভিপি আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা আওয়ামী লীগের হয়েই কাজ করতে চাই। সংসদেও আমি গাইডলাইনের অপেক্ষায় আছি। দলের সংসদ সদস্যরা সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদ অনুসারে দলের বিপক্ষে কথা বলতে পারেন না। আমরা আওয়ামী লীগের হয়ে কেউ অনিয়ম করলে, দলের স্বার্থে তার বিপক্ষে বলতে পারব। তবে স্বতন্ত্র জোটের নেতৃত্ব নিয়ে তিনি কিছু বলতে চাননি।

বিধান অনুযায়ী, আসন সংখ্যায় সংসদের দ্বিতীয় বৃহত্তম দল যাকে নেতা নির্বাচিত করা হবে, তিনিই বিরোধীদলীয় নেতার আসন পাবেন। তার দলই হবে সংসদের প্রধান বিরোধী দল। গত দুটি নির্বাচনের মতো এবারও ভোটের ফলে দলীয়ভাবে দ্বিতীয় অবস্থানে আছে একাদশ সংসদের প্রধান বিরোধী দল জাতীয় পার্টি। কিন্তু তাদের চেয়ে প্রায় ছয়গুণ আসনে দলনিরপেক্ষ প্রার্থীরা জিতে আসায় আলোচনা ঘুরে গেছে।

এবার যদি স্বতন্ত্র প্রার্থীরা জোটবদ্ধ হয়ে কাউকে নেতা নির্বাচন করেন, তা হলে জাতীয় পার্টির প্রধান বিরোধী দল আর বিরোধীদলীয় নেতা পাওয়ার সুযোগ থাকবে না। সংসদের কার্যপ্রণালি বিধির ২ (১) (ট) ধারায় বলা হয়েছে, বিরোধীদলীয় নেতা অর্থ হলো, ‘স্পিকারের বিবেচনামতে যে সংসদ সদস্য সংসদে সরকারি দলের বিরোধিতাকারী সর্বোচ্চসংখ্যক সদস্য লইয়া গঠিত ক্ষেত্রমতে দল বা অধিসংঘের নেতা।’

সাবেক আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ বলেন, স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য ৬২ জন হলেও একা একা তাদের বিরোধী দল হওয়ার সুযোগ নেই। তবে তারা সংসদে থাকা অন্য কোনো দলকে সমর্থন দিতে পারে। যে দলের সমর্থন বেশি হবে, তারাই হবে বিরোধী দল। আর স্বতন্ত্র প্রার্থীরা আলাদাভাবে জোট করতে পারে, তখন ওই জোটে কতজন হবে, সেই হিসেবে তারাও বিরোধী দল হতে পারে।

স্বতন্ত্র প্রার্থীদের প্রধান বিরোধী দলের আসনে আসা প্রসঙ্গে ফরিদপুর-৪ আসন থেকে জয়ী মজিবুর রহমান চৌধুরী নিক্সন বলেছেন, আসলে আমরা তো স্বতন্ত্ররা আলাদা আলাদা সবার জায়গা থেকে (নির্বাচিত হয়েছি)। আমরা আলোচনা করে যেটা ভালো হয়, সেটাই করব।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২২২ আসন পেয়ে আওয়ামী লীগের সরকার গঠন নিশ্চিত করেছে। তবে বিরোধী দলে কারা বসবে- সেই প্রশ্নকে বড় করে তুলেছে জাতীয় পার্টির ১১, আর স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ৬২ আসন প্রাপ্তি। এই ৬২ জনের মধ্যে ৫৯ জনই আওয়ামী লীগ নেতা। বাকিদের একজন জাতীয় পার্টির মনোনয়ন না পেয়ে এবং একজন বিএনপি ছেড়ে এসে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে জিতেছেন।আমাদেরসময়

 

আইএনবি/বিভূঁইয়া