জ্বালানি তেলের দাম বাড়ল টানা ছয় সপ্তাহ

আইএনবি ডেস্ক: বিশ্ববাজারে জ্বালানি সংকটে  বাড়ছে তেলের চাহিদা ও দাম। করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে নতুন চাহিদা তৈরি হলেও সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। এতে গত শুক্রবারও তেলের দাম বেড়ে হয়েছে প্রতি ব্যারেল ৮৫ ডলার। যা কয়েক বছরে সর্বোচ্চ।

এদিন লন্ডনের বাজারে অপরিশোধিত ব্রেন্ট তেলের দাম ১ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয় ৮৪.৮৬ ডলার, যা ২০১৮ সালের অক্টোবরের পর থেকে সর্বোচ্চ। ওই মাসে তেলের দাম বেড়ে হয়েছিল ৮৫.১০ ডলার। গত এক সপ্তাহে ব্রেন্ট তেলের দাম বেড়েছে ৩ শতাংশ। যা টানা ছয় সপ্তাহ বেড়েছে। গত শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের অপরিশোধিত ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট তেলের দাম ১.২ শতাংশ বেড়ে প্রতি ব্যারেল হয় ৮২.২৮ ডলার। এক সপ্তাহে বেড়েছে ৩.৫ শতাংশ এবং টানা আট সপ্তাহ বাড়ল দাম।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, করোনা-পরবর্তী সময়ে বিশ্বজুড়ে শিল্প কর্মকাণ্ড বেড়ে যাওয়ায় বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়াতে হচ্ছে। কিন্তু প্রাকৃতিক গ্যাস ও কয়লার সংকট ও রেকর্ড দাম বাড়ায় অনেকেই তেল ও ডিজেলনির্ভর হচ্ছে। এতে সরবরাহ ঘাটতি তৈরি হওয়ায় তেলের দামও বাড়ছে। এরই মধ্যে রপ্তানিকারক দেশগুলোর সংগঠন ওপেক ও যুক্তরাষ্ট্রের তেলের মজুদও ব্যাপকভাবে কমে গেছে।

গোল্ডম্যান স্যাচসের জ্বালানি গবেষণা প্রধান ও সিনিয়র পণ্য স্ট্র্যাটেজিস্ট ড্যামিয়েন করভ্যালিন বলেন, ‘ব্যাপক চাহিদা তৈরি হলেও সরবরাহ ঘাটতি থাকায় আগামী কয়েক বছরই জ্বালানি তেলের দাম উচ্চ পর্যায়ে থাকতে পারে।’ তিনি বলেন, ‘শীত আসছে, এ জন্যই শুধু দাম বাড়ছে না, বরং এটা তেলের বাড়তি মূল্যের নতুন শুরু।’ তাঁর মতে, ব্রেন্ট তেলের দাম এ বছরের শেষ নাগাদ ৯০ ডলার হতে পারে।

সম্প্রতি এক প্রতিবেদনে আন্তর্জাতিক জ্বালানি সংস্থা (আইইএ) জানায়, করোনা-পরবর্তী অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারে জ্বালানির ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে; কিন্তু সরবরাহ পর্যাপ্ত নয়। জ্বালানি তেলের চাহিদা বেড়ে দৈনিক পাঁচ লাখ ব্যারেল হতে পারে। এতে মূল্যস্ফীতি বাড়বে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধারও বিলম্বিত হতে পারে।

আইইএ মাসিক প্রতিবেদনে আরো জানায়, কয়লা ও গ্যাসের রেকর্ড দামের ফলে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ও ব্যাপক জ্বালানিনির্ভর শিল্প তেলের ওপর নির্ভরতা বাড়িয়ে দেয়। এতে তেলের চাহিদাও দ্রুত বাড়ছে।’

প্যারিসভিত্তিক সংস্থাটি জানায়, এর ফলে বিশ্বে তেলের চাহিদা আগামী বছরই করোনা-পূর্ববর্তী অবস্থায় ফিরে যাবে। চীন, জাপান, পাকিস্তান, জার্মানি, ফ্রান্স, ব্রাজিলসহ বেশ কিছু দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেলের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। সংস্থার মতে, ২০২১ সালের শেষ সময় পর্যন্ত জ্বালানি তেলের চাহিদা ওপেক ও অন্যান্য দেশের সরবরাহের চেয়ে বেশি থাকবে।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এক বছরের ব্যবধানে বিশ্ববাজারে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) দাম ৫০০ শতাংশ বেড়েছে। আর এক মাসে বেড়েছে দ্বিগুণ। এতে দাম নিয়ে দ্বিধায় পড়া এশিয়ার ক্রেতারা অর্ডার কমিয়ে দিচ্ছেন। বিশ্বে এলএনজির ৭০ শতাংশই আমদানি করে এশিয়া। এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশ মিলে নেয় এশিয়ার আমদানির ২০ শতাংশ। ফলে এলএনজির দাম বাড়ায় বিপাকে দেশগুলো। এসঅ্যান্ডপি গ্লোবালের তথ্য অনুযায়ী, সম্প্রতি এশিয়ায় এলএনজির দাম প্রতি মিলিয়ন ব্রিটিশ থার্মাল ইউনিট (এমএমবিটিইউ) বেড়ে হয় ৫৬.৩৩ ডলার, যা রেকর্ড সর্বোচ্চ। এক দিনেই দাম বেড়েছে ১৬.৬৫ শতাংশ।

সূত্র : রয়টার্স, সিএনবিসি

আইএনবি/বিভূঁইয়া