চাঁদার দাবিতে শিক্ষার্থীকে হলে আটকে চার ঘণ্টা নির্যাতনের অভিযোগ

যশোর প্রতিনিধি:যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) এক শিক্ষার্থীকে চার ঘণ্টা ধরে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলের একটি রুমে আটকে রেখে নির্যাতন চালানোর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

রবিবার দুপুর দুইটা থেকে সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষে এ নির্যাতন চালানো হয়।

নির্যাতিত শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন যবিপ্রবির নিউট্রিশন অ্যান্ড ফুড টেকনোলজি (এনএফটি) বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র। তার বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলা বলরামপুর গ্রামে। চাঁদার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়েরই কয়েকজন শিক্ষার্থী যারা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত, তারা ইসমাইলের ওপর এ নির্যাতন চালিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। গুরুতর অবস্থায় ইসমাইলকে বর্তমানে যশোর জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ইসমাইলের সহপাঠীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন আবাসিক শিক্ষার্থী দুপুর দুইটার দিকে ইসমাইলকে ডেকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। সেখানে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। ইসমাইল রোজা ছিলেন। ইফতারে তাকে না দেখে সহপাঠীরা তাকে খুঁজতে থাকনে। এক পর্যায়ে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষ থেকে অচেতন অবস্থায় ইসমাইলকে উদ্ধার করে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়। কিন্তু অবস্থার অবনতি হলে রাত ১০টার দিকে তাকে যশোর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যশোর জেনারেল হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার হাসিবুর রহমান বলেন, ইসমাইলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা দেওয়া হয়েছে। সেগুলো দেখার পর পরবর্তী চিকিৎসা দেওয়া হবে।

ইসমাইলের সহপাঠীরা জানান, বিশ্ববিদ্যালয়ের কমপিউটার বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সালমান এম রহমান ও একই বিভাগের সোয়েব আলী বিভিন্ন সময়ে ইসমাইলের কাছে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলেন। ইসমাইল চাঁদা দিতে অস্বীকার করার কারণেই তারা তার ওপর এভাবে নির্যাতন করে। শিক্ষার্থীরা জানান, ইসমাইল কোনো রাজনীতির সাথে জড়িত ছিল না। তবে সোয়েব ও সালমান ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত। তাদের কোন পদ-পদবী না থাকলেও তারা ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সোহেল রানার অনুসারী। তবে ছাত্রলীগ নেতা সোহেল রানা এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ব্যক্তির দায় সংগঠন নেবে না। চাঁদাবাজদের ছাত্রলীগ কখনো প্রশ্রয় দেয় না। ওরা দুইজন ছাত্রলীগের পদধারী কেউ না।

যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের প্রভোস্ট মো. আশরাফুজ্জামান জাহিদ বলেন, হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষটি রাতেই সিলগালা করে দেওয়া হয়েছে। নির্যাতনে জড়িত তিনজনের মধ্যে দুইজনকে শনাক্ত করে তাদের (সালমান এম রহমান ও সোয়েব আলী) হল থেকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। নির্যাতিত শিক্ষার্থীর লিখিত অভিযোগ পেলে স্থায়ী বহিষ্কারসহ পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। যবিপ্রবি উপাচার্য প্রফেসর ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, ঘটনা জানার পর আহত শিক্ষার্থীকে দ্রুত হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। পাশাপাশি শহীদ মসিয়ুর রহমান হলের ৫২৮ নম্বর কক্ষ সিলগালা করা হয়। একইসঙ্গে ওই কক্ষের শিক্ষার্থীদের সাময়িক বরখাস্তের নির্দেশ দেওয়া হয়। তিনি বলেন, নির্যাতিত শিক্ষার্থী লিখিত অভিযোগ দিলে মামলা হবে এবং অভিযুক্তদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হবে।

আইএনবি/বিভূঁইয়া