করোনায় আক্রান্তে ফ্রান্সে ফের লকডাউন ঘোষণা

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:  করোনা সংক্রমণ আশঙ্কাজনক হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় দ্বিতীয় দফায় লকডাউন ঘোষণা করেছেন প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রন। কমপক্ষে নভেম্বরের শেষ নাগাদ তা স্থায়ী হবে। এ ঘোষণা দিয়ে ম্যাক্রন বলেছেন, শুক্রবার (৩০ অক্টোবর) থেকে শুরু হওয়া এই লকডাউনে জনগণ শুধু চিকিৎসার প্রয়োজন ও অত্যাবশ্যকীয় কারণ ছাড়া বাইরে যেতে পারবে না। অত্যাবশ্যকীয় বাণিজ্য, যেমন রেস্তোরাঁ বার বন্ধ থাকবে। খোলা থাকবে স্কুল ও কলকারখানা।

অনলাইন বিবিসি বলছে, এপ্রিলের পর ফ্রান্সে করোনায় মৃত্যু রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। মঙ্গলবার নতুন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩৩ হাজার মানুষ।

ফ্রান্সের নতুন বিধি-নিষেধের মধ্যে রয়েছে, কর্মক্ষেত্র, স্কুল, চিকিৎসাসংক্রান্ত কাজ ও এক ঘণ্টা শরীরচর্চা করার জন্য বাইরে বের হওয়া যাবে, বাইরে বের হলে অবশ্যই অনুমতিপত্র দেখাতে হবে, এক অঞ্চলের মানুষ আরেক অঞ্চলে যেতে পারবে না, পানশালা, রেস্তোরাঁসহ বিভিন্ন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে, সুযোগ থাকলে অবশ্যই ঘরে বসে কাজ করতে হবে, বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা সংক্রান্ত ক্লাস অনলাইনে করতে হবে, আন্তর্জাতিক সীমানা বন্ধ থাকবে।

এ ছাড়াও বলা হয়েছে, স্কুল ও গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে, বেশিরভাগ সরকারি পরিষেবা সংক্রান্ত কাজ চলবে, খামার কারখানা ও নির্মাণকাজ চলমান থাকবে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সীমানাগুলো খোলা থাকবে, বাইরের দেশে ভ্রমণে থাকা ফ্রান্সের নাগরিকরা ফিরতে পারবেন এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার কার্যক্রম চলবে।

লকডাউন ঘোষণার সময় ম্যাক্রোঁ বলেন, করোনা সংক্রমণ যে হারে বাড়ছে, তা দেখে আমরা অবাক হয়েছি। এটি একটি কঠিন সময়। আমাদের অবশ্যই ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। এই অগ্নিপরীক্ষা কাটিয়ে ওঠার জন্য নিজেদের প্রতি, আপনাদের প্রতি, আমাদের সামর্থ্যের প্রতি আমার ভরসা রয়েছে।

গত এপ্রিল থেকেই ফ্রান্সে দৈনিক সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়তে শুরু করেছে। বুধবার দেশটিতে নতুন করে ৩০ হাজারের বেশি সংক্রমণ নিশ্চিত হয়েছে। তবে এবারের লকডাউন প্রথম দফার মতো কঠোর হবে না বলে জানানো হয়েছে।

ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যান বলছে, ফ্রান্সে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ১২ লাখ ৩৫ হাজার ১৩২। এর মধ্যে মারা গেছে ৩৫ হাজার ৭৮৫ জন।

দ্বিতীয় দফায় মহামারি করোনা সংক্রমণ নিয়ে ভয়াবহ বিপর্যয়ের মধ্যে পড়েছে ফ্রান্স সরকার। প্রতিদিন অর্ধ লক্ষাধিক নতুন রোগী শনাক্ত হচ্ছে। এই সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

অন্যদিকে জার্মানিও জরুরি লকডাউন দিতে যাচ্ছে। তবে তা ফ্রান্সের মতো কঠোর হবে না। এর অধীনে সেখানে রেস্তোরাঁ, জিম এবং থিয়েটার বন্ধ থাকবে। শুধু ফ্রান্স বা জার্মানি নয়, পুরো ইউরোপেই করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বুধবার বৃটেনে নতুন করে ৩১০ জন মারা যাওয়ার ঘোষণা দেয়া হয়েছে সরকারিভাবে। এদিন আক্রান্ত হয়েছেন কমপক্ষে ২৪ হাজার ৭০১ জন।

অন্যদিকে ইংল্যান্ডে নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতি দিন সেখানে প্রকৃতপক্ষে এক লাখ মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। গবেষকরা বলেছেন, এই ধারার পরিবর্তন আনতে হবে। বেশ কিছু দেশে জারি রয়েছে রাত্রিকালীন কারফিউ। এর আওতায় রয়েছেন ফ্রান্সের ৪ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। নতুন নতুন সংক্রমণের খবরে ইউরোপের অর্থনীতির দ্রুত অবনমন হয়েছে। বুধবার সেখানকার শেয়ার বাজারের মারাত্মক পতন হয়েছে। বৃটেনের এফটিএসই ১০০ তার ব্যবসা বন্ধ করেছে শতকরা ২.৬ ভাগ কম দামে। জার্মানির ড্যাক্স-এর শেয়ার পড়ে গেছে শতকরা ৪.২ ভাগে। যুক্তরাষ্ট্রের বড় বড় সূচকেরও বড় পরিবর্তন হয়েছে। এগুলোর দাম শতকরা ৩.৪ ভাগ বা তারও বেশি পতন হয়েছে।

ইউরোপীয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লিয়েন বলেছেন, আমরা দ্বিতীয় দফা সংক্রমণের একেবারে গভীরে আছি। মনে হচ্ছে এ বছরের বড়দিনও পালিত হবে ভিন্নভাবে।

আইএনবি/বি.ভূঁইয়া