এসডিজি অর্জনে অগ্রগতির শীর্ষ তিনে বাংলাদেশ

জাতিসংঘের প্রতিবেদন

মো: শাহজালাল:

জাতিসংঘের টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে সঠিক পথে রয়েছে বাংলাদেশ। এসডিজি উত্তরণে বিশ্বের যে তিনটি দেশ সবচেয়ে এগিয়ে আছে, তার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ। বাকি দুটি দেশ হলো আফগানিস্তান ও আইভরি কোস্ট।

জাতিসংঘের সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট সলিউশনস নেটওয়ার্কের এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। ‘সাসটেইনেবল ডেভেলপমেন্ট রিপোর্ট-২০২১’ শীর্ষক প্রতিবেদনটি সোমবার প্রকাশ করা হয়। এবারের এসডিজি সূচকে বিশ্বের ১৬৫টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান ১০৯তম। এক্ষেত্রে ভারত (১২০তম) ও পাকিস্তানের (১২৯তম) চেয়ে এগিয়ে আছে বাংলাদেশ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১০ সালের পর থেকে পূর্ব ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোই এসব লক্ষ্য পূরণের পথে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে। আর ২০১৫ সালের পর থেকে এসডিজি সূচকে স্কোরের দিক দিয়ে সবচেয়ে বেশি এগিয়েছে বাংলাদেশ, আইভরি কোস্ট ও আফগানিস্তান।

চার বছর আগে ২০১৭ সালের সূচকে ১৫৭টি দেশের মধ্যে ১২০তম অবস্থানে ছিল বাংলাদেশ। এবারের সূচকে বাংলাদেশের সার্বিক স্কোর ৬৩ দশমিক ৫ শতাংশ। গত বছর এ স্কোর ছিল ৬৩ দশমিক ২৬ শতাংশ। ২০১৫ সালে যখন এসডিজি গৃহীত হয়, তখন বাংলাদেশের স্কোর ছিল ৫৯ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ। আর ভিত্তিবছর ২০০০ সালে স্কোর ছিল ৫৩ দশমিক ৪৯।

অপরদিকে আইভরি কোস্ট ৫৭ দশমিক ৫৬ স্কোর নিয়ে এবারের সূচকে ১৩১তম অবস্থানে রয়েছে। ২০১৫ সালে দেশটির স্কোর ছিল ৫৩ দশমিক ৩৫। আর ৫৩ দশমিক ৯৩ স্কোর নিয়ে আফগানিস্তান এবার আছে সূচকের ১৩৭তম অবস্থানে। এসডিজির শুরুর বছরে দেশটির স্কোর ৪৯ দশমিক ৬৩ ছিল।

২০১৫ সালে জাতিসংঘে গৃহীত এসডিজিতে ২০৩০ সালের মধ্যে পূরণের জন্য মোট ১৭টি লক্ষ্য স্থির করা হয়। সেসব ক্ষেত্রে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর অগ্রগতি বিচার করেই এ প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। তবে পর্যাপ্ত তথ্য না থাকায় জাতিসংঘের ১৯৩টি দেশের মধ্যে ১৫৭টির তথ্য এবারের প্রতিবেদনে এসেছে।

এসডিজির ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে ১২ নম্বরে পরিমিত ভোগ ও টেকসই উৎপাদন ধরন নিশ্চিত করা আর ১৩ নম্বরে জলবায়ু পরিবর্তন ও এর প্রভাব মোকাবিলায় জরুরি কর্মব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্য বাংলাদেশ ইতোমধ্যে পূরণ করে ফেলেছে। সূচকের এ দুটি অবস্থানে তাই বাংলাদেশের রং সবুজ। এসডিজির ১ নম্বরে সব ধরনের দারিদ্র্যের অবসান এবং ৪ নম্বরে সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক ও সমতাভিত্তিক গুণগত শিক্ষা নিশ্চিতকরণ এবং জীবনব্যাপী শিক্ষা লাভের সুযোগ সৃষ্টির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ লক্ষ্য পূরণের পথেই রয়েছে।

এর মধ্যে এসডিজি-৪-এ বাংলাদেশকে সূচকের হলুদ তালিকায় রাখা হয়েছে। এর অর্থ হলো, এসব ক্ষেত্রে লক্ষ্য অর্জনে আরও অনেক কাজ করতে হবে। আর এসডিজি-১-এ দারিদ্র্য হ্রাস, এসডিজি-২-এ ক্ষুধামুক্তি, এসডিজি-৫-এ লিঙ্গসমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন, এসডিজি-৭-এ সাশ্রয়ী, টেকসই জ্বালানি সহজলভ্য করা, এসডিজি-৮-এ শোভন কর্মসুযোগ সৃষ্টি এবং অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং এসডিজি-১০-এ আন্তঃ ও আন্তঃদেশীয় অসমতা কমিয়ে আনার ক্ষেত্রে বাংলাদেশকে রাখা হয়েছে কমলা তালিকায়। অর্থাৎ এই ছয় লক্ষ্য অর্জনের পথে বাংলাদেশের সামনে উল্লেখযোগ্য মাত্রায় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। এছাড়া এসডিজি-৩ স্বাস্থ্য ও কল্যাণ, এসডিজি-৬-এ পানি ও স্যানিটেশন, এসডিজি-৯-এ অবকাঠামো ও টেকসই শিল্পায়ন, এসডিজি-১১তে নিরাপদ ও টেকসই নগর গড়ে তোলা, এসডিজি-১৪তে সামুদ্রিক সম্পদের সংরক্ষণ ও টেকসই ব্যবহার, এসডিজি-১৫তে বাস্তুতন্ত্র ও জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, ভূমির অবক্ষয় রোধ, এসডিজি-১৬তে অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ, ন্যায়বিচার, প্রাতিষ্ঠানিক জবাবদিহিতা এবং এসডিজি-১৭তে বৈশ্বিক অংশীদারত্ব উজ্জীবিতকরণে বাংলাদেশকে লাল তালিকায় রাখা হয়েছে। অর্থাৎ এই আটটি ক্ষেত্রে লক্ষ্য পূরণ করতে গেলে বাংলাদেশকে বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। এই ১৭টি লক্ষ্যের মধ্যে কেবল এসডিজি-১৫তে বাংলাদেশের অবস্থার অবনতির তথ্য দেওয়া হয়েছে এবারের সূচকে।

এবারের তালিকায় সবচেয়ে ভালো অবস্থানে আছে ফিনল্যান্ড। দেশটির স্কোর ৮৫ দশমিক ৯ শতাংশ। এর পরের চার দেশ হলো সুইডেন (৮৫.৬ শতাশ), ডেনমার্ক (৮৪.৯ শতাংশ), জার্মানি (৮২.৫ শতাংশ) ও বেলজিয়াম (৮২.২ শতাংশ)। আর সবচেয়ে পিছিয়ে থাকা মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্রের স্কোর ৩৮ দশমিক ২৭ শতাংশ। এর আগে আছে দক্ষিণ সুদান ও চাদ। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, স্কোরের দিক দিয়ে যে তিন দেশের অবনমন ঘটেছে, সেগুলো হলো-ভেনিজুয়েলা, টুভালু ও ব্রাজিল। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে ৭০তম স্থানে আছে ভুটান। এরপর আছে মালদ্বীপ, শ্রীলংকা ও নেপাল। তাদের অবস্থান যথাক্রমে ৭৯, ৮৭ ও ৯৬তম।