একক নির্ভরশীলতা কমাতে ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত: প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

আন্তর্জাতিক একক কোনো সংগঠনের ওপর নির্ভরশীলতা কমাতে ব্রিকসে যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, এ সংগঠন প্রস্তুত হওয়ার বা শুরুর দিকে আমরা ছিলাম। কিন্তু প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হতে পারিনি। এখন যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

বুধবার (২১ জুন) গণভবনে সুইজারল্যান্ড সফর পরবর্তী সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধে কারণে বিকল্প মুদ্রা চালুর করার কোনো প্রস্তাব আছে কি না– জানতে চাইলে শেখ হাসিনা বলেন, আদার ব্যাপারি হয়ে জাহাজের খবর নিয়ে লাভ কি? ব্রিকস সংগঠন যখন প্রস্তুতি নেয় তখন থেকেই আমরা যোগ দেব– এমন কথা ছিল। তারপর হয়নি। আমরা প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য হতে পারিনি। এখন যোগ দেব। আমরা চাচ্ছি, কোনো আন্তর্জাতিক সংগঠনের ওপর যেন একক নির্ভরশীল না হতে হয়। প্রয়োজনীয় বা আপদকালীন সময়ে আমরা যেন প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কিনতে পারি। সে সমস্ত বিষয় বিবেচনা করেই কিন্তু ব্রিকসে যোগ দেওয়া সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

 

প্রধানমন্ত্রী বলেন, কেউ যদি বিকল্প আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে অর্থ ব্যবহারের ব্যবস্থা নেয়, আমরা সেখানে আছি। কয়েকটি দেশের সঙ্গে এ ব্যাপারে আলোচনা করছি। নিজস্ব অর্থের বিনিময়ে যেন আমরা ক্রয়-বিক্রয় করতে পারে। সেজন্য পদক্ষেপ নিয়েছি। ডলারের ওপর নির্ভর না হয়ে যেন অর্থ বিনিময় করতে পারি, সেজন্য পদক্ষেপ নিচ্ছি। কার্যক্রম হলে আপনারা দেখতে পাবেন। দেশের জন্য যেটা কল্যাণকর সেটাই করব।

তিনি বলেন, বাজারে কালোবাজারি, সিন্ডিকেট রুখতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছে সরকার। বৈশ্বিক খাদ্যমন্দা ঠেকাতে আমাদের খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে হবে। এজন্য নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য উৎপাদন করতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, যেসব পণ্য সিজনাল, তা সংরক্ষণ করে যেন আপদকালীন সময়ে সরবরাহ করা যায় সেজন্য বিভাগীয় পর্যায়ে ফ্রিজিং গুদাম করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

সরকার প্রধান বলেন, উৎপাদন পরিবহন ব্যয় বেড়ে গেছে, কানাডা থেকে ২০০ ডলারের পণ্য ৬০০ ডলার দিয়ে কিনেছি। ৮০০ ডলারের জাহাজ ভাড়া ৪ হাজার ডলার দিয়ে আনতে হয়েছে। এর মধ্যেও দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা করছি। এটা ঠিক দাম বাড়লে মধ্যবিত্তদের সমস্যায় পড়তে হয়। সেক্ষেত্রে উন্নত দেশে মূল্যস্ফীতি কমাতে যেসব পদক্ষেপ নিয়েছে, আমরা তার চেয়ে বেশি করছি। ব্যাংকিং সেক্টরসহ অন্যান্য সেক্টরে নানা পদক্ষেপ নিয়েছি। এক কোটি মানুষকে স্বল্পমূল্যে খাদ্যপণ্য দেওয়ার জন্য টিসিবির মাধ্যমে বিক্রি করা হচ্ছে। বেশি দামে কিনে কম মূল্যে দিচ্ছি।

শেখ হাসিনা বলেন, এবার ইফতার পার্টি না করে সেই টাকা দিয়ে জনগণকে খাদ্য সাহায্য দেওয়ার জন্য বলা হয়। সে মোতাবেক দলের লোকজন কাজ করেছে। এজন্য আমার দলকে ধন্যবাদ জানাই।  বিত্তশালীরাও কাজ করেছে। এজন্য রমজানে দাম বাড়েনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে উৎপাদন বাড়াতে হবে। অন্যের ওপর নির্ভর কমাতে হবে। যখন কোনো পণ্যের দাম বেড়ে যায়, তখন একটি গোষ্ঠী কালোবাজারি, সিন্ডিকেট করে দাম বাড়ায়। তখন আমাদের বিকল্প পদ্ধতি নিতে হয়।

পেঁয়াজের দাম বাড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি জানি পেঁয়াজ আছে, কিন্তু কেউ কেউ বাজারে পেঁয়াজ ছাড়ছে না। পেঁয়াজ পচাবে, ফেলে দেবে তবু বেশি দাম ছাড়া বাজারে ছাড়বে না। এরপর আমদানি শুরু করলাম। ১০-১২ টন আমদানির পর দাম কমে গেল। যারা এরকম কালোবাজারি করে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে, নিচ্ছি। সাংবাদিকদেরও এসব কালোবাজারিদের খুঁজে বের করে তথ্য দেওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

এনএ/জেএস