আইএনবি ডেস্ক: ব্রাহ্মণবাড়িয়ার অহংকার গিরীন চক্রবর্তীকে কেউ মনে রাখেনি। আজ ২২ শে ডিসেম্বর, কথা ও ইন্দ্রজালিক সুরস্রষ্টার মহাপ্রয়াণ দিবস। তাঁর জীবনের অজানা তথ্যচিত্র দক্ষ কলমের খোঁচায় ফুটিয়ে তুলেছেন এস এম শাহনূর। “উনার সম্পর্কে ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসীকে একটু স্মরণ করিয়ে দেন।”
উপরোক্ত লাইনটি লিখে আমাকে একটি বার্তা পাঠালেন গত শতকের নব্বইয়ের দশক থেকে ইতালি প্রবাসী জনাব এম এ সালেহ। ইতালির রাজধানী রোমস্থ এম এ সালেহের বাড়ি কাইতলা (উঃ) ইউপির নারুই গ্রামে। আজ বিখ্যাত সংগীত শিল্পী, সংগীত লেখক ও সুর স্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তীর মহা প্রয়াণ দিবস। আমি যেন উনার সম্পর্কে কিছু লেখি সালেহ সাহেবের এক বিনয়ী আবদার। একজন লেখকের কাছে একজন পাঠকের এমন আবদারে লেখক অবশ্যই অনুপ্রাণিত হন। তখন লেখার প্রতি আগ্রহ ও দায়িত্ববোধ জাগ্রত হয়। আমি প্রচুর লেখালেখি করি। লেখি গান,লেখি কবিতা। লেখি স্বপ্নের কথা। বাস্তবতার কথা,চেতনার কথা। আরো লেখি আমার জন্ম জেলা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মাটি ও মানুষের অলিখিত কথা।
দুঃখের বিষয় ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার প্রখ্যাত ও গুণীজনদের তালিকায় নেই এই বিখ্যাত ব্যক্তিটির নাম। অথচ তার গানের কথা এখনো মানুষের মনে দোলা দেয়,গানের সুর মনে আন্দোলিত করে।ব্রাহ্মণবাড়িয়াবাসী নয়, পুরো বাঙালিই যেন ভুলতে বসেছে প্রখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী ও সুর স্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তীর নাম। বিখ্যাত লোকসংগীত শিল্পী ও ঐন্দ্রজালিক সুরস্রষ্টা গিরীন চক্রবর্তীকে অনেকে জানলেও তার পূর্বপুরুষের বসতভিটা ও জন্মস্থান ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কালিকচ্ছ গ্রামে তা হয়তো অনেকেরই অজানা। গিরীন চক্রবর্তীর একমাত্র মেয়ে চন্দা চট্টোপাধ্যায় চক্রবর্তী। জন্ম কলকাতা টালিগঞ্জের বাড়ীতে।পরে মার চাকরির জন্য বর্ধমান। College of Art &Design এ কাজ করেন। শ্বশুরবাড়ির আদি নিবাস খুলনা। বর্তমানে বর্ধমান। সাঙ্গীতিক পরিবার। মা– সাধনা চক্রবর্তী। ওনার বাবার জন্মগ্রাম কোথায় এতদ বিষয়ে মেসেঞ্জারে কথা হয় চন্দা চক্রবর্তীর সঙ্গে। আমি বাংলাদেশের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার লেখক ওনার বাবার জীবন ও কর্মের উপর আর্টিকেল লিখতে তথ্য চাইছি, বিষয়টি বুঝতে পেরে তিনি আবেগাপ্লুত হয়ে পড়েন। অনেকক্ষণ ধরে অত্যন্ত সৌহার্দপূর্ণ আবেশে দুজনের মধ্যে অনেক কথা হয়। আলাপচারিতায় আমাকে নিশ্চিত করেছেন যে, তাঁর পিতার গ্রামের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কালিকচ্ছ গ্রামেই ছিল। গিরীন চক্রবর্তীর পিতা–গৌরাঙ্গ চক্রবর্তী, মাতা–ব্রজসুন্দরী চক্রবর্তী। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কালিকচ্ছ গ্রামে আদি বাড়ি। পরবর্তী সময়ে ঢাকা শহরে লক্ষ্মীবাজারে নিজ বাড়িতে বসবাস করেন। ৪৭ এর আগেই সপরিবারে কলকাতা চলে যান। তবে মাঝে মধ্যে ঢাকা-কলকাতা আসা যাওয়া করতেন। তিনি বলেন,”আমার পিতা যখন পরলোকে যান তখন আমার বয়স চার বছরের কিছুটা কম।আমার মা ২০১০ সালের অক্টোবরে পরলোকে যান।মায়ের কাছ থেকে,সকল আত্মীয় স্বজন ও বাবার বন্ধু বান্ধবদের কাছ থেকেও শুনেছি আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাড়ি সরাইলের কালিকচ্ছ গ্রামে। ” প্রবাদপ্রতিম গানের গুরু,কিংবদন্তী লোকসংগীত ও নজরুলগীতির গায়ক, গীতিকার, সুরকার, সংগীত গবেষক গিরীন চক্রবর্তী ১৯১৮ সালের ৫ মে (২২ বৈশাখ, ১৩২৫ বঙ্গাব্দ) অবিভক্ত বাংলার ব্রাহ্মণবাড়িয়া র কালিকচ্ছ গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ ও ওস্তাদ আফতাবউদ্দিন খানের সুযোগ্য শিষ্য অজস্র গানের কারিগর গিরীন চক্রবর্তী।তাঁর সৃষ্টির ভাণ্ডার ছিল মণিমাণিক্যে পরিপূর্ণ।তিনি কখনও স্বনামে, কখনও বা ‘সুজন মাঝি’, ‘রতন মাঝি’, ‘দ্বিজ মহেন্দ্র’ কিংবা ‘সোনা মিঞা’ ছদ্মনামে অসংখ্য লোকগান, শ্যামাসংগীত, দেশাত্মবোধক গান, আধুনিক গান থেকে ছায়াছবির গানও–রচনা করেছেন। বড় পরিতাপের বিষয় তাঁর রচিত ও সুরারোপিত গানের কোনও সংরক্ষণ কিংবা কোনও সম্পূর্ণ সংকলনও এপার বাংলায় প্রকাশিত হয়নি।