আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বজায় রাখতে সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা

উত্তপ্ত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে সব জেলা প্রশাসককে নির্দেশনা
২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলাগুলোতে যেসব উন্নয়ন হয়েছে সেগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরবেন প্রত্যেক জেলার জেলা প্রশাসক। পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ জনহিতকর কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে বলা হয়েছে। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে দেশের সব জেলা প্রশাসককে বিশেষ নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ।

রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ডের ফলে জনসাধারণ ও রাষ্ট্রের জানমালের যাতে ক্ষয়ক্ষতি না হয়, সেজন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সকল পক্ষকে নিয়ে কৌশল নির্ধারণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

গত মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিব মাহবুব হোসেন দেশের সকল জেলা প্রশাসকদের সঙ্গে মাসিক মতবিনিময় সভা করেন। ওই সভায় এ নির্দেশনা দেওয়া হয়।

প্রতি মাসেই জেলা প্রশাসকদের সাথে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগের সচিবের মতবিনিময় সভা হয়। এই সভায় সাধারণত সংশ্লিষ্ট মাসের জাতীয় কার্যক্রম এবং চলমান ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে ডিসিদের করণীয় সম্পর্কে নির্দেশনা দিয়ে থাকে মন্ত্রীপরিষদ।

তবে এবারের সভায় চলমান রাজনৈতিক ঘটনাবলীর প্রেক্ষাপটে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখার ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে বলে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ সুত্রে জানা গেছে।

সম্প্রতি বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল রাজধানীসহ সারাদেশে সভা, সমাবেশ, বিক্ষোভ প্রদর্শনসহ নানা কর্মসূচি পালন করছে। এতে কোনো কোনো জায়গায় গাড়িতে আগুন দেওয়াসহ অন্যান্য সহিংসতার ঘটনাও ইতোমধ্যে দেখা গেছে সরকারবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আগামীতে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে।

এমন প্রেক্ষাপটে সারাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্থিতিশীল রাখতে মাঠ প্রশাসনকে প্রস্তুত রাখার জন্যই এ নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানা গেছে।

জানা গেছে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখার পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন, জনহিতকর কর্মকাণ্ড প্রচারের ব্যবস্থা করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ২০০৯ সালে বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর জেলাগুলোতে যেসব উন্নয়ন হয়েছে সেগুলো জনগণের কাছে তুলে ধরবেন প্রত্যেক জেলার জেলা প্রশাসক।

পাশাপাশি সরকারের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিসহ জনহিতকর কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে বলা হয়েছে। বর্তমান সরকারের সাফল্য, বিশেষ করে খাদ্য উৎপাদনসহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ড তুলে ধরতে বলা হয়েছে।

জাতীয় শোক দিবস পালনের জন্য পূর্বপ্রস্ততি এবং ব্যাপকভাবে আয়োজনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। শোক র‌্যালি, মিলাদ, দোয়া মাহফিল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর ওপর নির্মিত নাটক বা সমজাতীয় বিষয় প্রদর্শনী, আলোচনাসভার আয়োজনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এজন্য জেলা সংস্কৃতি বিষয়ক দপ্তরকে সম্পৃক্ত করতে বলা হয়েছে।

উপজেলা প্রশাসন যাতে সমান গুরুত্ব দিয়ে দিবসটি পালন করে তা নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে জেলা প্রশাসকদের।

এছাড়া, আগামী ১৭ আগষ্ট থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার বিষয়ে বিশেষ গুরুত্ব দিতে বলা হয়েছে।

দক্ষ কর্মকর্তাদের বিভিন্ন পরীক্ষা কেন্দ্রের দায়িত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পরীক্ষা কেন্দ্রের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে বাস্তব অবস্থার প্রেক্ষিতে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশ ফোর্স নিয়োগ করতে বলা হয়েছে। পরীক্ষা উপলক্ষ্যে জেলায় একটি রিজার্ভ ফোর্স রাখারও নির্দেশনা দিয়েছে মন্ত্রীপরিষদ বিভাগ।

এছাড়া ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে সচেতনতা বাড়ানো, হাসপাতালগুলো যাতে রোগীদের সময়মত প্রয়োজনীয় সেবা দেয় সেই ব্যবস্থা করার নির্দেশনাও দিয়েছেন মন্ত্রীপরিষদ সচিব। যেসব জেলায় বন্যা হয়েছে সেখানে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করা, বন্যা নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেওয়ার নির্দেশনাও দেওয়া হয়েছে। সরকারি সহায়তা যাতে সময়মত উপকারভোগীর কাছে পৌঁছে, সেটি নিশ্চিতে জোর দিতে বলা হয়েছে।

টিবিএসের পক্ষ থেকে কয়েকটি জেলার জেলা প্রশাসকের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা জানিয়েছেন, মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নির্দেশনাগুলো বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন সংশ্লিষ্ট সকল পক্ষকে সাথে কাজ করছে।

দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের একটি জেলার জেলা প্রশাসক বলেন, “আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সব সময় গুরুত্ব দেওয়া হয়। এখন বিশেষ পরিস্থিতিতে যাতে হঠাৎ করে কোনো খারাপ কিছু না ঘটে সেজন্য জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রসাশন সতর্ক রয়েছে।”

“রাজনৈতিক দলগুলোর কর্মকাণ্ড মনিটরিং করা হচ্ছে। সভা, সমাবেশের অনুমোদন দেওয়ার ক্ষেত্রে জেলা প্রশাসন যথেষ্ট যাচাই বাছাই করেই সিদ্ধান্ত নেবে,” বলেন তিনি।

আরেকজন জেলা প্রশাসক বলেন, “এখন সবচেয়ে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে জাতীয় শোক দিবস পালনে। এছাড়া সরকারের উন্নয়ন ও জনহিতকর কর্মকাণ্ড প্রচারণারও গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। আর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার প্রয়োজনীয় উদ্যোগ তো আছেই