সুবিধার মধ্যেও আছে ভোগান্তি

আসাদুজ্জামান আজম :

গ্রাহকদের খরচ আর অপচয় কমানো সহ নানা সুবিধার কথা বলা হলেও গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারে স্বস্তি নেই। কার্ড ব্যবহার করেও ভোগান্তি এড়াতে পারছে না গ্রাহকরা। নিজ খরচে (ভাড়া ভিত্তিক) প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন সহজ হলেও রিচার্জ করতে হয়রানি হতে হচ্ছে। যদিও হয়রানির দায় নিচ্ছে না কেউ।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, সারা দেশে গ্যাসের আবাসিক গ্রাহক সংখ্যা ৪৩ লাখ। আগামী ২০২৪ সালের মধ্যে সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারে আনার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ইতোমধ্যে তিন লাখ ৯৩ হাজার গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারের আওতায় এসেছেন। অর্থাৎ ৯০ শতাংশ গ্রাহক প্রি-পেইড সেবার বাইরে রয়েছেন। মূলত ভোগান্তির কারণে গ্রাহকরা প্রি-পেইড মিটারে আগ্রহ দেখাচ্ছেন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

তিতাস সূত্র জানায়, সরাসরি লাইনে গ্রাহক মাসে গড়ে ৭০ ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করেন। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারী গ্রাহক মাসে গড়ে মাত্র ৩০ ঘনফুট গ্যাস ব্যবহার করেন। এতে প্রতি গ্রাহকপর্যায়ে রাষ্ট্রের অন্তত ৪০ ঘনফুট গ্যাস সাশ্রয় হয়।

মিরপুর মধ্যপাইকপাড়া এলাকার বাসিন্দা মহি ইউ খান মামুন জানান, প্রি-পেইড মিটারের চেয়ে বিল সিস্টেমই এখন ভালো মনে হচ্ছে। মিটারের টাকা রিচার্জ করতে গিয়ে বেশ কয়েকবার টাকা খোয়া গেছে। এজেন্টরা কোনো সমাধান দিতে পারছে না। তবে প্রি-পেইড মিটারে খরচ অর্ধেকের কম হয় বলে জানিয়েছেন একাধিক ব্যবহারকারী।

একাধিক আবাসিক গ্রাহক জানান, বিল সিস্টেমে দুই বার্নার চুলার জন্য মাসে ৯৭৫ টাকা ও সিঙ্গেল বার্নার চুলার জন্য ৯২৫ টাকার বিল দিতে হয়। প্রি-পেইড গ্যাস মিটারে ৫০০ টাকা রিচার্জ করে দেড় মাস ব্যবহার করা যায়। তবে রিচার্জ মিসিং হওয়ার ঘটনায় বিরক্ত গ্রাহকরা। রিচার্জ পদ্ধতি আরও সহজ করার দাবি করেছেন গ্রাহকরা।

সূত্র মতে, গ্রাহক পর্যায়ের সরকারের ছয়টি প্রতিষ্ঠান গ্যাস সরবরাহ করে থাকে। এরমধ্যে বড় অংশের গ্রাহক রয়েছে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি। প্রতিষ্ঠান গ্রাহক সংখ্যা ২৮ লাখ। ২০১১ সালে একটি পরীক্ষামূলক প্রকল্পের মাধ্যমে প্রি-পেইড মিটার বসানোর কাজ শুরু করে। এ পর্যন্ত তিন লাখ ৩৩ হাজার মিটার বসিয়েছে। প্রি-পেইড মিটার ব্যবহারকারীদের আর্থিক লেনদেন সহজ করার জন্য অর্থাৎ রিচার্জে কারিগরি সহায়তার জন্য ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের (ইউসিবি) সঙ্গে একটি চুক্তি করেছে তিতাস।

তিতাস কার্যালয় সূত্র মতে, প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন প্রকল্পটি মূলত অনুমোদন হয় ২০১৫ সালে। এরপর কয়েক দফা সংশোধন করে ঢাকা মহানগরী এলাকায় তিন লাখ দুই হাজার প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপনের জন্য ‘প্রি-পেইড গ্যাস মিটার স্থাপন (দ্বিতীয় সংশোধিত) প্রকল্পটি জিওবি, জাইকা এবং টিজিটিডিসিএলের (নিজস্ব) অর্থায়নে ৭৫৩.৮৪ কোটি টাকায় বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। জানুয়ারি ২০১৫ থেকে ডিসেম্বর ২০২২ মেয়াদে বাস্তবায়নাধীন রয়েছে।

নতুন করে আরও দুটি প্রকল্পের মাধ্যমে ১২ লাখ মিটার বসানোর কাজ হাতে নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তিতাস ছাড়াও প্রি-পেইড মিটার স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে কর্ণফুলী গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড ও জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানি চট্টগ্রামে গ্যাস সরবরাহ করে। ইতোমধ্যে ৬০ হাজার মিটার বসিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। আরও এক লাখ মিটার বসানোর জন্য নতুন একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে। কর্ণফুলী গ্যাস কোম্পানির মোট গ্রাহক পাঁচ লাখ ৫০ হাজার। জালালাবাদ গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেম লিমিটেড ৫০ হাজার মিটার বসানোর প্রকল্প চালু করেছে।

গ্রাহকদের কাছে প্রতিটি মিটারের দাম নেয়া হয় ১৪ হাজার টাকা। বিলের সঙ্গে মাসিক ৬০ টাকা হারে ২০ বছরে মিটারে পরিশোধ করতে হচ্ছে গ্রাহকদের। তবে খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে ৬০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হবে বলে তিতাস সূত্র জানিয়েছে।

জানতে চাইলে তিতাসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ্ জানান, তিতাসের সব গ্রাহককে প্রি-পেইড মিটারের আওতায় আনার চেষ্টা করছি। নতুন করে ১২ লাখ মিটার বসানোর পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে। ২০২৪ সালের মধ্যে শতভাগ না হলেও অধিকাংশ গ্রাহক প্রি-পেইড মিটারে আসবেন আশা রাখি।

রিচার্জ ভোগান্তি প্রসঙ্গে প্রকৌশলী মো. হারুনুর রশীদ মোল্লাহ বলেন, রিচার্জে ভোগান্তির বিষয়টি সামনে আসার পরপরই আমরা উদ্যোগী হয়েছি। এখন ইউসিবিএল ছাড়াও মোবাইলে থেকে রিচার্জ করা যাচ্ছে। আপাতত এনএফসি সুবিধা থাকা মোবাইলের মাধ্যমে করা যাচ্ছে। আরও সহজ করার চেষ্টা চলছে।