সুপেয় পানি নিশ্চিতে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য ৫৬৯ প্রতিশ্রুতি

পানি সম্মেলন ২০২৩

আসাদুজ্জামান আজম, (নিউ ইয়র্ক) যুক্তরাষ্ট্র থেকে : আগামীকাল শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময় বিকেলে শেষ হচ্ছে তিন দিনব্যাপী জাতিসংঘ পানি সম্মেলন। গতকাল ২৩ মার্চ বৃহস্পতিবার পানি সম্মেলন তার দ্বিতীয় দিন পার করেছে। এদিন স্থানীয় সময় সকাল ১০টায় সাধারণ পরিষদের সম্মেলন কক্ষে শুরু হয় চতুর্থ প্ল্যানারি সেশন। আর দুপুর আড়াইটায় সাধারণ পরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত হয়লিডারশীপ সিগম্যান্ট পার্ট-২ এবং একই কক্ষে বিকেল তিনটায় অনুষ্ঠিত হয় ৫ম ও ৬ষ্ঠ প্ল্যানারি সেশন। এর বাইরে এদিন আরও দু’টি সাইড ইভেন্ট অনুষ্ঠিত হয়। এই দু’টি ইভেন্টেই অংশ বাংলাদেশের প্রতিনিধি ঢাকা ওয়াসার এমডি তাসকিন এখান।

এর আগে সকালে অনুষ্ঠিত হওয়া চতুর্থ প্ল্যানারি সেশনে জাতিসংঘের সদস্যভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর জন্য সুপেয় পানি নিশ্চিতে মোট ৫৬৯টি প্রতিশ্রুতির কথা তুলে ধরা হয়। যার মধ্যে ৬৯টি প্রতিশ্রুতিই বাংলাদেশের পক্ষে আসে।তবে— ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোতে বিশুদ্ধ পানি নিশ্চিতে অর্থায়ন কোথা থেকে আসবে বা এই প্রতিশ্রতির বাস্তাবায়নের রূপরেখা কিভাবে হবে— আয়োজকদের পক্ষ থেকে সেই বিষয়ে সুস্পষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা এখন পর্যন্ত আসেনি।

 

সকালে সাধারণ পরিষদ কক্ষে অনুষ্ঠিত হওয়া চতুর্থ প্ল্যানারি সেশনে অংশ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন অভিযোজন তহবিলসহ টেকসই পানি ব্যবস্থাপনার জন্য আন্তর্জাতিক অর্থায়ন বৃদ্ধি ও এর প্রচেষ্টা জোরদারে বিশ্ব সম্প্রদায়ের প্রতি আহবান জানিয়েছেন। ওই সেশনে পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুকও অংশ নেন।

চতুর্থ সেশনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অধীনে ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডা বাস্তবায়নে আমরা ডেভেলপমেন্ট পার্টনার ও আন্তর্জাতিক আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রতি এই মর্মে আহ্বান জানাচ্ছি যে, যেসব দেশের সহায়তা প্রয়োজন- সেসব দেশের জন্য তারা যেন আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তা বাড়ায়। ওই সেশনে পানি সংক্রান্ত জলবায়ু অভিযোজনে সীমিত আন্তর্জাতিক অর্থায়নে উদ্বেগ প্রকাশ করেন মোমেন।

জাতিসংঘ ওয়াটার অ্যাকশন এজেন্ডার ওপর বাংলাদেশের জাতীয়নীতির কথা তুলে ধরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে, এর পানি সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিয়ে থাকে। তিনি বলেন, আমাদের সরকার ‘বাংলাদেশ ডেল্টা প্ল্যান-২১০০’ নামে একটি ১০০বছরের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে এবং সুসংহত পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনার (আইডব্লিউআরএম) মাধ্যমে একটি টেকসই ব-দ্বীপগড়ে তোলার জন্য ‘বাংলাদেশ পানি আইন ২০১৩’ প্রণয়ন করেছে।

 

এদিকে আন্তর্জাতিক পানি বিশেষজ্ঞরা ধারণা করছেন, সম্মেলনের সমাপ্তি দিনে হয়তো—এর একটি রূপরেখা এবং প্রাপ্তি পাওয়াযেতে পারে। আবার নাও আসতে পারে।

পানি নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন ওয়াটার এইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর হাসিন জাহান। তিনি মনে করেন, এইসব বড়বড় সম্মেলনে প্রত্যেকে যার যার প্রতিশ্রুতির কথা বলবে। এখান থেকে কি নিয়ে যাবে তারচেয়ে বড় কথা হলো এখানে কি দিয়ে যাবে। অর্থাৎ পরবর্তীতে ওয়াটার এ্যাকশন এজেন্ডায় কি করা হবে— তার প্রতিশ্রুতি সব দেশ দিয়ে যাবে।আমাদের সরকারও আজ (বৃহস্পতিবার) সেটা করেছে।

তিনি জানান, এই সম্মেলনে জাতিসংঘের সবকটি দেশ থেকে ৫৬৯টি প্রতিশ্রুতি এসেছে।তারমধ্যে ৬৯টি বাংলাদেশের কাছ থেকে এসেছে। অর্থাৎ আমরা বাংলাদেশ পরবর্তীতে পানি নিয়ে কিভাবে কাজ করবো তারপ্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে।

সুপেয় পানি নিশ্চিত ও লবনাক্ততা থেকে বেরিয়ে আসতে বাংলাদেশ জাতিসংঘ থেকে আর্থিক সহযোগিতার কোনো প্রতিশ্রুতি পেয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, আমি আজকে একটি সেশনে অংশ নিয়েছি। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদল সেখানে অংশনেয়। সেখানে বাংলাদেশ সরকারের পানি নিয়ে তৈরি করা ডেল্টা প্লান কিভাবে বাস্তবায়ন করবে— সে বিষয়ে জাতিসংঘের কাছেতুলে ধরা হয়েছে। তবে হাসিন জাহান মনে করেন, ডেল্টা প্লানে সুপেয় পানির সংকট কিভাবে দূর করা হবে এবং কমিউনিটিকে কিভাবে সম্পৃক্ত করা হবে- তার কোনো রূপরেখা বাংলাদেশ দিতে পারেনি। আর জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশকেসবচেয়ে বেশি খাবার পানির সংকটে পড়তে হয়। কিন্তু সেটার জন্য যে বড় ধরনের আর্থিক সহায়তা দরকার— সে বিষয়ে কোনোপ্রতিশ্রুতি এ সম্মেলনে ছিল না। অর্থাৎ পানি সম্পদ এবং স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে জোরালো কোনো দাবী উত্থাপনকরতে পারেনি, যোগ করেন হাসিন জাহান।

সম্মেলনের দ্বিতীয় দিন একটা সাইড ইভেন্টে অংশ নেন ঢাকা ওয়াসার এমডি তাসকিন এ খান। ইভেন্ট শেষে তিনি বাংলাদেশীকয়েকটি গণমাধ্যমের মুখোমুখী হয়েছেন। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি  বলেন, বাংলাদেশে পানির যে সংকট রয়েছে— সেটি সরকার সমাধান করতে পেরেছে। যে কারণে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিকভাবে বিভিন্ন জায়গা থেকে ডাকছে। কিভাবে আমরা পানির সংকট দূর করেছি। সেই স্টোরি শোনার জন্য সবাই আমাদের কে ডাকছে, সবাই আমাদের অনুসরণ করতে চায়।

এক প্রশ্নে তিনি বাংলাদেশের পানি শতকরা ৯৫ শতাংশ নিরাপদ বলে দাবী করেন। তিনি এও বলেন, বাংলাদেশের ঢাকা ওয়াসা‘ ভ্যাঙ্কুবল অরগানাইজেশন’।

তিনি বলেন, আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশকে এ কারণে নেতৃত্ব দিতে চাই। আফ্রিকান দেশগুলোপয়সা পাচ্ছে না। আমরা নিরাপদ পানি নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছি।

আয়োজকরা জানান, তাজিকিস্তান এবং নেদারল্যান্ডস সরকারের যৌথ আয়োজনে ১০০ জন মন্ত্রী এবং এক ডজন রাষ্ট্র ওসরকার প্রধানসহ প্রায় ৬,৫০০ অংশগ্রহণকারী এই শীর্ষ সম্মেলনে অংশ নেন।

এরআগে নিউ ইয়র্কের স্থানীয় সময় গত বুধবার সকাল ৯টায় জাতিসংঘের সদর দফতরে পানি সম্মেলনের উদ্বোধন করেন সংস্থাটির মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস।

আয়োজকেরা জানিয়েছেন, নিরাপদ পানি, পয়ঃনিষ্কাশন এবং পরিচ্ছন্নতা—মানুষের স্বাস্থ্য ও সুস্থতার মৌলিক চাহিদার মধ্যেপড়ে এবং জাতিসংঘ ঘোষিত মানবাধিকারের অংশ। কিন্তু এখনও বিশ্বের প্রায় ২০০ কোটি মানুষ নিরাপদ পানীয় জলের অভাবেরয়েছে। টয়লেট ও স্যানিটেশন ব্যবস্থার ব্যবহারকারীর চেয়ে বিশ্বে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেশি এবং ৮০ শতাংশবর্জ্য পরিবেশে নিঃসৃত হচ্ছে। আয়োজকেরা আশা প্রকাশ করেছেন, নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও নিরাপদ পানির পৃথিবী গড়ে তোলাএখনও সম্ভব। তবে এখনই নিতে হবে জরুরি পদক্ষেপ।