রাজনৈতিক দলগুলোর সমঝোতার পথ আছে কি না, জানতে চেয়েছেন কংগ্রেস সদস্যরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশ সফররত মার্কিন কংগ্রেসের দুই সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সরকারের পরিকল্পনা জানতে চেয়েছেন। নির্বাচনের বিষয়ে প্রধান দুই রাজনৈতিক দলের সমঝোতার পথ আছে কি না সেটাও জানতে চেয়েছেন তাঁরা।

রোববার (১৩ আগস্ট) রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠক করেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান এড কেইস ও রিচার্ড ম্যাকরমিক। বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন মন্ত্রী।

প্রথমবারের মত বাংলাদেশ সফরে আসা মার্কিন কংগ্রেসের সদস্য এড কেইস ও রিচার্ড ম্যাকরমিক আজ রোববার দুপুরে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন। মার্কিন কংগ্রেসের সদস্যদের সঙ্গে মধ্যাহ্নভোজসভার পর পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ চীনের খপ্পড়ে পড়েছে কি না তাও মার্কিন কংগ্রেসের দুই সদস্য জানতে চেয়েছেন।

বৈঠকে আলোচনায় ছিল নির্বাচন প্রসঙ্গ। এ প্রসঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ওরা (কংগ্রেসম্যানরা) নির্বাচনের কথা বলেছে। আমরা বললাম, সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। নিজের তাগিদে আমরা একটা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করতে চাই। এটা আমাদের প্রধানমন্ত্রী অঙ্গীকার করেছেন, আমরাও চাই। কারণ আমরা জনগণের সমর্থনে আছি। আওয়ামী লীগ সবসময় নির্বাচনে বিশ্বাস করে, নির্বাচনমুখী দল।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার কোনো সুযোগ আছে কি না তা কংগ্রেসম্যানরা জানতে চেয়েছেন জানিয়ে মোমেন বলেন, তারা (কংগ্রেসম্যান) বলেছে, তোমাদের কোনো সমঝোতার পথ আছে কি না ওদের (বিএনপি) সঙ্গে। আমরা বলেছি, তাদের যে দাবি, সরকারের পদত্যাগ, ওটাতে সমঝোতার কোনো স্কোপ নেই।

মার্কিন কংগ্রেসম্যানদের কাছে তাদের দেশে নির্বাচনে সরকারের পতন হয় কি না– প্রশ্ন রেখেছেন ড. মোমেন। তিনি বলেন, নির্বাচনের সময় তোমাদের দেশে (যুক্তরাষ্ট্র) কি সরকারের পতন হয়? নিশ্চয়ই না। এরকম ডিমান্ড (বিএনপির যে চাওয়া) থাকলে তোমরা কি আলোচনায় বসবে? ওগুলোর প্রশ্নই উঠতে পারে না। আমরা আমাদের শাসনতন্ত্র অনুযায়ী নির্বাচন করব।

মোমেন বলেন, সেটাতে সবাই অংশগ্রহণ করুক, সেটাই আমরা চাই। কে জিতবে না জিতবে, সেটা জনগণের ওপর নির্ভর করবে। আমরা বিশ্বাস করি, আমরা অনেক ভালো কাজ করেছি।

দেশের রাজনৈতিক দলগুলোর আন্তরিকতা থাকলে সুষ্ঠু এবং সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন সম্ভব বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তিনি বলেন, যতগুলো দল আছে সব দল যদি নির্বাচনে যোগদান করে, তারা যদি আন্তরিকভাবে সিদ্ধান্ত নেয়, অবাধ, সুষ্ঠু ও সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন চায়, তাহলে নির্বাচন সহিংসতা ছাড়া হবে। সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে সহিংসতা ছাড়া নির্বাচন হবে। সরকার বা নির্বাচন কমিশন চাইলে সহিংসতা ছাড়া নির্বাচনের বিষয়ে গ্যারান্টি দেওয়া যায় না।

মোমেন বলেন, আমরা বলেছি, এখানে নির্বাচন তোমাদের (যুক্তরাষ্ট্র) ওখানের চেয়ে ভালো হয়। তোমাদের ওখানে লোকে ভোট দেয় না। আমাদের এখানে অধিকাংশ লোক ভোট দেয়। ৭ ভাগ লোকে ভোট দেয়। তোমাদের ওখানে লোক নির্বাচনে দাঁড়ায় না। এখানে একটা নির্বাচনে কয়েকশ লোক দাঁড়ায়। ওটা নিয়ে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। শুধু সব দলের মতের লোকের আন্তরিকতা দরকার।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সমঝোতার বিষয়ে কোনো বার্তা দিয়েছেন কি না কংগ্রেসম্যানরা– জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, রিপাবলিক একজন বলল, আমরা সবসময় সমঝোতায় যাই। আমরা বলেছি, সমঝোতা করার মতো দাবি-দাওয়া তো এখানে নেই। আমরা চাই অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। আমাদের উল্টা দল (বিএনপি) তো নির্বাচনের খবরই রাখে না। তারা চায় সরকারের পতন। সরকার পতনের ইস্যু সংলাপে যাওয়ার মতো কোনো টপিক নয়।

যুক্তরাষ্ট্র নির্বাচন নিয়ে কোনো ফর্মুলা দিচ্ছে কি না বা নির্বাচন সুষ্ঠু হবে এ ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র আশ্বস্ত কি না– জানতে চাইলে মোমেন বলেন, না। সেটা তাদের জিজ্ঞাসা করুন।

এনএ/জেডআর