যুক্তরাষ্ট্রে ৪৫ দিনে গুলিতে নিহত ১১৭

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শিক্ষাঙ্গণ, জনপদ, সড়ক-মহাসড়ক, সুপার মার্কেট ইত্যাদি স্থানে চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪৫ দিনে ‘নির্বিচার গুলিতে গণহত্যা’র ঘটনা ঘটেছে ৭২টি। এতে মারা গেছে ১১৭ জন। আহত হয়েছে ২৯৩ জন। দৈনিক গড়ে দেড়টির অধিক বন্দুক হামলার ঘটনায় আমেরিকানরা চরম নিরাপত্তাহীনতায় দিনাতিপাত করছেন।

এমন অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ১৪ ফেব্রুয়ারি মঙ্গলবার ‘ন্যাশনাল এসোসিয়েশন অব কাউন্টিজ’র উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন গভীর উদ্বেগের সাথে বলেন, ‘আমি এমন কিছু বলতে যাচ্ছি যা সবসময়ই বিতর্ক তৈরি করে। ৫০ অথবা ৭০টি বুলেট ধারণ করে এমন ম্যাগাজিনের ‘অ্যাসোল্ট অস্ত্র’র প্রয়োজন নেই। এর কোনো যুক্তিও থাকতে পারে না।’

মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটির ক্যাম্পাসে সোমবার রাতে এক বন্দুকধারির নির্বিচার গুলিতে ৩ ছাত্র নিহত এবং আরো ৫ জন আহত হবার ঘটনা প্রসঙ্গে বাইডেন আরো বলেন, আমি আবারো সকলের প্রতি উদাত্ত আহবান জানাচ্ছি বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইন কঠোর করার জন্যে।
উল্লেখ্য, এই বন্দুক হামলার নৃশংসতার ঘটনা ঘটেছে ফ্লোরিডার পার্কল্যান্ডে মারজোরি স্টোনম্যান ডগলাস হাইস্কুলে নির্বিচার গুলিতে শিক্ষার্থীসহ ১৭ জনকে হত্যার ঘটনার পঞ্চম বর্ষপূর্তির দিনে। প্রেসিডেন্ট সোমবার রাতেই মিশিগান স্টেটের গভর্ণর গ্রিচেন হুইটমারের সাথেও কথা বলেছেন। তিনি হতাহতদের পরিবার-পরিজনের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। উল্লেখ্য, মঙ্গলবারও নির্বিচার গুলিবর্ষণের ঘটনায় পেনসিলভেনিয়ায় ৪ জন আহত হবার সংবাদ এসেছে।

যুক্তরাষ্ট্রে নির্বিচার গুলিবর্ষণে হামলাকারি ছাড়া যদি ৪ জন হতাহত হবার ঘটনা ঘটে তাহলে সেই বর্বরতাকে ‘ম্যাস শ্যুটিং’ (নির্বিচার গুলিতে হত্যা) হিসেবে চিহ্নিত করা হয় এবং এমন হত্যাযজ্ঞের তালিকা সংরক্ষণ করে ‘গান ভায়োলেন্স আর্কাইভ’ (জিভিএ) নামক একটি সংস্থা।

জানা গেছে, ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাতে সক্ষম আগ্নেয়াস্ত্র সর্বসাধাণের জন্যে নিষিদ্ধের একটি বিধির মেয়াদ ২০০৪ সালে সমাপ্ত হয়েছে। সেই বিধি পুনরায় চালুর জন্যে প্রেসিডেন্ট বাইডেন হোয়াইট হাউজে অধিষ্ঠিত হবার পর থেকেই চেষ্টা করছেন। কিন্তু কংগ্রেস এ ব্যাপারে ঐক্যমত হতে পারেনি। কারণ হিসেবে জানা গেছে, অস্ত্র ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘ন্যাশনাল রাইফেল্স এসোসিয়েশন’ প্রতিটি নির্বাচনেই গুরুত্বপূর্ণ প্রার্থীগণকে মোটা চাঁদা দিয়ে আসছে। কংগ্রেসের নির্বাচনেও তারা চাঁদা দেয়। বেশির ভাগ পেয়ে থাকে রিপাবলিকানরা। এজন্যে ডেমক্র্যাটরা আন্তরিক অর্থে চেষ্টা করলেও রিপাবলিকানদের সমর্থন না পাওয়ায় কোন বিলই পাশ করা সম্ভব হচ্ছে না। এ অবস্থায় সর্বশেষ গণহত্যার পর প্রেসিডেন্ট বাইডেন রিপাবলিকানদেরও সমর্থন চেয়েছেন বন্দুক নিয়ন্ত্রণ আইনকে কঠোর করতে। মানবতার স্বার্থে এটি জরুরী বলে উল্লেখ করেছেন ডেমক্র্যাটরা।

গতবছরের শেষার্ধে টেক্সাসের ইউভেল্ড এবং নিউইয়র্কের বাফেলোতে নির্বিচার বন্দুক হামলার পর কংগ্রেস একটি বিল পাশ করে। সেখানে ইয়ং ক্রেতাদের ব্যাকস গ্রাউন্ড চেক করার কথা রয়েছে। তবে অন্য সকল ক্রেতার ক্ষেত্রে সেটি প্রযোজ্য না হওয়ায় বন্দুক হামলার ঘটনা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে।

বন্দুক হামলার ঘটনায় গোটা কম্যুনিটি সন্ত্রস্ত। ঘর থেকে বের হবার পর কেউই অক্ষত অবস্থায় ঘরে ফেরার ব্যাপারে নিশ্চিত থাকতে পারছেন না। বিভিন্ন স্থানে পুলিশের টহল বাড়ানো হলেও নির্বিচার গুলির ঘটনা কমানো সম্ভব হচ্ছে না।

 

আইএনবি/বিভূঁইয়া