পাহাড়ে তীব্র পানি সংকট, নেই উদ্যোগ

আসাদুজ্জামান আজম :

প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর গোটা রাঙামাটি জেলা। পাহাড় মেঘ আর সবুজের অভয়ারন্য। মেঘ-পাহাড়ের রাজ্যের প্রকৃতির রুপ মনভরে উপভোগ করতে দেশ-বিদেশের ভ্রমনপ্রেমিরা আসেন রাঙামাটিতে। অপরুপ সৌন্দর্যের রাঙামাটিতে সুপেয় পানির তীব্র সংকট। পানির জন্য জেলাটির দুর্গম পাহাড়ি গ্রামগুলোর বাসিন্দারা মানবেতর জীবন যাপন করছেন। প্রায় ১৮শ’ ফুট নিচ হতে খোলা জীপে পানি তুলে জীবন যাপন করতে হয় সাজেকের বাসিন্দাদের। একমাত্র সেখানে গেলেই তাদের এ দুর্দশা দেখা যায়। এক বালতি পানি যেন সেখানে সোনার হরিন।
স্থানীয় বাসিন্দা প্রজেশ চাকমা বলেন, সাজেকে সারা বছর পানি সংকট। কমপক্ষে ১৮ শ; ফুট নিচ হতে পানি তুলতে হয়। এখন বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় এ বছর পানি সংকট আরো বেশি। আমরা জন্ম থেকেই এই পানির কষ্ট নিয়ে বেঁচে আছি।
জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগের তথ্যমতে, পার্বত্য রাঙ্গামাটি জেলার ৩৭ ভাগ মানুষ সুপেয় পানির আওতার বাইরে রয়েছে। বাস্তবে সেটা আরো অনেক বেশি হবে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। সারা বছর স্থানীয় ঝিরি বা ঝর্ণার পানির ওপর নির্ভর করে জীবনধারণ করতে হয় তাদের। প্রতি বছর এপ্রিল থেকে মধ্য জুন পর্যন্ত পাহাড়ে সুপেয় পানির তীব্র সঙ্কট দেখা দেয়। এ বছর অধিক পরিমাণ ঝিরি ঝর্ণা শুকিয়ে যাওয়ায় তা আরও তীব্র আকার ধারণ করেছে।
সাধারণত বর্ষার সময় থেকে শীত মৌসুম পর্যন্ত ঝিরি-ঝরনা থেকে পানি সংগ্রহ করা গেলেও মাঘ-ফাল্গুন থেকে পাহাড়ে সুপেয় পানির সঙ্কট দেখা দেয়। সরকারের উদ্যোগে দুর্গম কিছু কিছু পাহাড়ি গ্রামে রিংওয়েল ও টিউবওয়েল স্থাপন করা হলেও শুকনো মৌসুমে এসব থেকে পানি পাওয়া যায় না।
দুর্গম বাঘাইছড়ি উপজেলার বঙ্গলতলী গ্রাম। ছড়া থেকে পানি নিয়ে পাহাড় পাড়ি দিয়ে এক কলসি পানির জন্য হাঁটতে হয় ঘণ্টার পর ঘণ্টা। এই পানি দিয়ে চলে পান করা থেকে ঘরের রান্না-বান্না ও ব্যবহারের কাজে। ফলে পানীয় ও ব্যবহার্য পানির তীব্র কষ্টে ভুগে এই গ্রামের মানুষ। শুধু বঙ্গলতলীরই নয়, জেলার লংগদু, বিলাইছড়ি, কাপ্তাই, জুরাছড়ির উপজেলারও বেশ কিছু গ্রামের। ছড়া শুকিয়ে যাওয়ায় তার তলদেশ গর্ত করে পানি সংগ্রহ করতে হচ্ছে এসব এলাকার বাসিন্দাদের। বাটি কেটে কেটে এক কলসি পানি সংগ্রহ করতে সময় লাগছে ১৫ থেকে ২০ মিনিট। কোথাও কোথাও সেসব কুয়াও শুকিয়ে যাচ্ছে।
কাউখালীর বাসিন্দা বিথী রাণী চাকমা বলেন, পানির অভাবে আমরা ঠিকমত গোসল পর্যন্ত করতে পারি না। আমাদের খুব কষ্ট হয়। সরকারের কাছে বিনীত অনুরোধ আমাদের এম সমস্যার স্থায়ী সমাধান করুন।
আপতত প্রাকৃতিক উৎস থেকে সমস্যার সমাধান খুঁজছে জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ। রাঙ্গামাটি জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ নির্বাহী প্রকৌশলী পরাগ বড়ুয়া বলেন, রাঙ্গামাটির বেশ কয়েকটি উপজেলার দুর্গম গ্রামগুলোতে পানির সমস্যা রয়েছে। এর প্রধান কারণ হচ্ছে পাথরের কারণে নলকূপ স্থাপন করা যায় না। আগে বাসিন্দারা ঝিরি ঝর্ণা থেকে পানি পেতেন। বর্তমানে জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবে পানি পাওয়া যাচ্ছে না। আপতত প্রাকৃতিক উৎস থেকেই এই সমস্যার সমাধান খুঁজছি।
রাঙ্গামাটি পার্বত্য জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রম্ন চৌধুরী বলেন, পানির সমস্যা স্থায়ী সমাধানের জন্য একটি প্রকল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এটি পাশ হয়ে আসলে আমাদের পানির সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, মূলত সমতলের পদ্ধতি ব্যবহার করে পাহাড়ে সুপেয় পানির সংকট নিরসন করা সম্ভব না। পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় ভূগর্ভস্থ পানির স্তর সঠিক মতো পাওয়া যায় না। যার কারণে পার্বত্য চট্টগ্রামে গভীর ও অগভীর নলকূপ স্থাপনের মধ্য দিয়েও পুরোপুরি পানি সঙ্কট সমাধান সম্ভব নয়। এজন্য গবেষণার প্রয়োজন বলে মনে করছেন তারা।