শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি

আইএনবি ডেস্ক: ক্ষমতাচ্যুত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ফেরত চেয়ে ভারতকে চিঠি পাঠিয়েছে বাংলাদেশ। পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন গতকাল সোমবার দুপুরে সাংবাদিকদের এ কথা জানিয়েছেন।

এর আগে গতকাল সকালে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেছিলেন, শেখ হাসিনাকে ফেরাতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি পাঠিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।

শেখ হাসিনাকে ফেরানোর বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘এরই মধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছি।

কোন উপায়ে শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠানো হবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে ভারতের বন্দি বিনিময় চুক্তি আছে। ওই চুক্তি অনুযায়ী হবে।’

এরপর চিঠির বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কী করছে জানতে চান সাংবাদিকরা।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমরা জানিয়েছি ভারতকে।’
কী জানিয়েছেন জানতে চাইলে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘তাঁকে (শেখ হাসিনাকে) বিচারব্যবস্থার জন্য চাওয়া হয়েছে, তা আমরা জানিয়েছি।’

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘নোট ভারবাল’ (কূটনৈতিক বার্তা) দিয়ে ভারত সরকারকে বাংলাদেশ জানিয়েছে।

এদিকে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল গতকাল ভারতীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমরা নিশ্চিত করছি, প্রত্যর্পণের অনুরোধ সংক্রান্ত একটি কূটনৈতিক বার্তা আজ (গতকাল সোমবার) নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশন থেকে পেয়েছি।

ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গত ৫ আগস্ট ক্ষমতাচ্যুত হয় আওয়ামী লীগ সরকার। সেদিন দুপুরেই ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। এরপর একাধিকবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রণধীর জয়সোয়াল বলেছেন, নিরাপত্তাজনিত কারণে শেখ হাসিনা ভারতে গেছেন। একই কারণে শেখ হাসিনা সেখানে আছেন।

এদিকে সরকারের পতনের পর শেখ হাসিনাসহ তাঁর সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রী-সংসদ সদস্য, রাজনৈতিক মিত্রদের বিরুদ্ধে গুম, খুন, আটক, নির্যাতন, হত্যা, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে সারা দেশে মামলা দায়েরের হিড়িক পড়ে। অন্তর্বর্তী সরকার এসব অপরাধের বিচার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে করার সিদ্ধান্ত নিলে সেখানেও অভিযোগ জমা পড়ে।

প্রসিকিউটর বি এম সুলতান মাহমুদ কালের বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও প্রসিকিউশন মিলিয়ে এখন পর্যন্ত ১৬৮টি অভিযোগ জমা পড়েছে। তার মধ্যে গুমের অভিযোগ রয়েছে ৩১টি।

বেশির ভাগ অভিযোগে শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। এর মধ্যে গত ১৭ অক্টোবর প্রসিকিউশনের আবেদনে শেখ হাসিনাসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২৭ অক্টোবর সেনা ও পুলিশের সাবেক ১৭ কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির পর শেখ হাসিনাকে ধরতে ‘ন্যাশনাল সেন্ট্রাল ব্যুরোর (এনসিবি)’ মাধ্যমে ইন্টারপোলকে চিঠি দেয় চিফ প্রসিকিউটরের কার্যালয়।

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস গত মাসে ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম দ্য হিন্দুকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, বিচারের সম্মুখীন করতে শেখ হাসিনাকে ভারত থেকে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া চালাবে তাঁর সরকার।

বাংলাদেশ-ভারত বন্দি প্রত্যর্পণ চুক্তি অনুযায়ী শেখ হাসিনাকে ফেরত পাওয়ার আশা করছে বাংলাদেশ। ২০১৩ সালে ওই চুক্তি করেছিল বাংলাদেশ ও ভারত। ওই চুক্তির আওতায় আসামের স্বাধীনতাকামী সংগঠন উলফার শীর্ষ নেতা অনুপ চেটিয়াসহ কয়েকজনকে বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রত্যর্পণ করা হয়েছিল।

চুক্তিতে বলা হয়েছে, ন্যূনতম এক বছরের সাজা হতে পারে এমন মামলায় আদালত গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলেই ভারত বা বাংলাদেশকে পলাতক বন্দি হস্তান্তর করতে পারবে। তবে যদি অপরাধ রাজনৈতিক হয়, তবে প্রত্যর্পণের অনুরোধ অপরপক্ষ প্রত্যাখ্যান করতে পারবে।

আইএনবি/বিভূঁইয়া