ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় দুই কোটি টাকার আখের লালি গুড় বিক্রির প্রত্যাশা

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি:আখের রস থেকে তৈরি হচ্ছে সুস্বাদু রসালো তরল গুড় লালি। পিঠা, পুলি তৈরিতে যার জুড়ি মেলা ভার।

শীত মৌসুমকে ঘিরে প্রতি বছরের মত এবারও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিজয়নগরে চলছে লালি তৈরির ধুম। উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে ১০/১২ জন উদ্যোক্তা বছরের কার্তিক মাস থেকে ফাল্গুন পর্যন্ত ব্যস্ত সময় পার করেন লালি উৎপাদনে। চলতি মৌসুমে জেলায় প্রায় ৭০ হেক্টর জমিতে আখের আবাদ হয়েছে। যার বেশির ভাগ ব্যবহৃত হয় লালি উৎপাদনে।

প্রথমে আখ সংগ্রহের পর মহিষ দিয়ে মাড়াই শেষে রস সংগ্রহ করা হয়। মাড়াই করা রস বড় পাত্রে আগুনের তাপে তিন/চার ঘণ্টা জ্বাল দেওয়ার পর তেরি হয় এ লালি গুড়।

উদ্যোক্তা জামাল খান বলেন, আমরা প্রতি বছর লালি তৈরি করি। লালি তৈরি করতে আট-১০ কানি জমির প্রয়োজন হয়। যার ফলে উৎপাদন ব্যয় অনেক বেড়ে যায়। এক কানি জমির আখ দিয়ে ১৭/১৮ মণ লালি তৈরি হয়। প্রতি লিটার লালি বিক্রি হয় ১৫০ টাকা দরে। নির্ভেজাল এবং স্বাদে ও গুণে অনন্য হওয়ায় জেলাসহ আশপাশের বিভিন্ন উপজেলা থেকে লালি কিনতে ছুটে আসেন অনেকে। কৃষি অধিদপ্তর যদি আমাদের সহজ শর্তে কিছু ঋণ দেয়, তাহলে আমরা এ পেশাকে ধরে রাখতে পারব।

উদ্যোক্তা তাজুল ইসলাম বলেন, আখ চাষ করার এক বছর পর ফলন হয়। আখের ফলন আশার পর সেই আখ সংগ্রহ করে শুরু হয় লালি তৈরির কাজ। প্রথমে মহিষ দিয়ে আখ মারাই করে বের করা হয় আখের রস। সেই রস তিন-চার ঘণ্টা চুলায় জ্বাল দেওয়ার পর তৈরি হয় সুস্বাদু লালি গুড়। পরে এ লালি গুড় জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষজন এসে কিনে নিয়ে যান।

ক্রেতা খাইরুল ইসলাম বলেন, আমাদের ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঐতিহ্যবাহী একটি গুড় লালি গুড়। প্রত্যেক শীতে আমরা লালি গুড় দিয়ে বিভিন্ন পিঠা বানাই। কৃষকদের উন্নত প্রশিক্ষণের পাশাপাশি উন্নত জাতের আখ যদি উৎপাদন করা যায়, তাহলে আমাদের এ আখের লালির ব্যবসা আরও বড় করা যাবে।

বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ক্রেতারা জানান, বাজার থেকে লালি গুড় কিনতে গেলে ভালো পাওয়া যায় না। তাই একেবারে যেখানে তৈরি হয়, সেখান থেকে গুড় নিই। এখানকার লালি গুড়ের মান অনেক ভালো এবং স্বাস্থ্যসম্মত। তাই এর চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সুশান্ত সাহা জানান, চলতি মৌসুমে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রায় দুই কোটি টাকার লালি গুড় কেনাবেচা হবে। লালির উৎপাদন বাড়াতে উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ঋণসহ আখের নতুন জাত ও প্রযুক্তি সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ।

আইএনবি/বিভূঁইয়া