পুলিশ ছাত্রলীগের হামলায় গুরুত্বর আহত ঢাকাপোস্টের নূর মোহাম্মদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে কোটা সংষ্কার নিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে পুলিশ, বিজিবি ও সরকার দলীয় ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের হামলায় গুরুত্বর আহত হয়েছেন ঢাকাপোস্টের সিনিয়র রিপোর্টার নূর মোহাম্মদ। তার বাম চোখে অপারেশন করতে হয়েছে।

গত ১৯ জুলাই শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী এলাকায় সংবাদ সংগ্রহের সময় তিনি পুলিশের ছোড়া গুলিতে আহত হন। পরে সেখান থেকে তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ পরে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হয়।

রাজধানীর যাত্রাবাড়ীতে পুলিশ-ছাত্রলীগের হামলায় আহত সাংবাদিক

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলে রিপোর্টার নূর মোহাম্মদ বলেন, গত তিনদিন ধরে সেখানে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ, ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন সংগঠনের সংঘর্ষ চলছিল। এরমধ্যে শুক্রবার দুপুরে সেখানে সংবাদ সংগ্রহ করতে যাই। বিকালে হঠাৎ ছাত্রলীগ ও পুলিশ ছাত্রদের ওপর ছড়াও হয়। ছাত্ররাও পাল্টা প্রতিরোধ গড়ে তুলে। এ সময় হঠাৎ পুলিশ কাঁদানে গ্যাস ছররা গুলি মারা শুরু করে। এ দৃশ্য ধারণ করতে ছাত্রলীগ আমাকে বাধা দেয়। কিন্তু পেশাগত কারণে সেটি ধারণ করতে গিলে প্রথম ছাত্রলীগ লাঠিসোটা দিয়ে আঘাথ করে আহত করে। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে মারধর শুরু করে। ধারন করা ভিডিও মুছে ফেলার জন্য চাপ দিলে আমি সেখানে থেকে কোন রকম উদ্ধার করে আসি।

এর কিছুক্ষণ পর ফের সংঘর্ষ শুরু হলে পুলিশ উপযুপরি কাঁদানে গ্যাস ছররা গুলি মারা শুরু করে। হঠাৎ একটি ছররা গুলি আমার চোখে এসে লাগে। তাৎক্ষণিক আমি রাস্তা পরে যায়। এরপর ছাত্রলীগ এসে আমার ওপর ফের হামলা করে। সেখানে থাকা কয়েকজন ব্যক্তি আমাকে উদ্ধার করে একটি রিক্সায় ঢাকা  মেডিকেলে পাঠায়। প্রাথমিক চিকিৎসা নেওয়ার পর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি হলে মঙ্গলবার ( ২৩ জুলাই) আমার চোখে অপারেশন হয়।

শুধু নূর মোহাম্মদ নয়, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে কাঁদানে গ্যাস ও ছররা গুলিতে চোখে আঘাত পেয়ে রাজধানীর আগারগাঁওয়ের জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন ৪২৪ জন। এর মধ্যে চোখের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ২৭৮ জনের। অস্ত্রোপচার করা বেশির ভাগ রোগীর চোখে ছররা গুলির আঘাত ছিল।

সাংবাদিক নূর মোহাম্মদ বড় ভাই শাহ জাহান বলেন, গত শুক্রবার হঠাৎ অপরিচিত একটি নাম্বার থেকে ফোনে জানানো হয়, তার ছোট ভাই পুলিশের গুলিতে আহত হয়েছেন। তারপর দ্রুত ঢাকা মেডিকেল গিয়ে তার চিকিৎসার ব্যবস্থা করি।

তার চোখের অপারেশন করেছেন ডাক্তার মহিবুল রহমান বলেন, তার চোখে দুটি গুলির ছররা এসে লেগেছিল। বাম পাশের চোখের অপারেশন করার পর মুটামুটি ভাল। তবে বাম চোখে সমস্যা দীর্ঘদিন বহন করতে হবে।

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের পরিচালক গোলাম মোস্তাফা বলেন, চোখে বিভিন্ন ধরনের আঘাত নিয়ে যাঁরা এসেছিলেন তাদের মধ্যে একজন সাংবাদিক ছিল। তার নাম নূর মোহাম্মদ। তিনিসহ যারা এসেছেন বেশির ভাগই ছররা গুলিতে আহত। তাঁদের প্রাথমিক অস্ত্রোপচার যেটা প্রয়োজন, সেটা দেওয়া হয়েছে। অনেকে অস্ত্রোপচারের পর ছাড়পত্র নিয়ে চলেও গেছেন। ওই রোগীরা প্রতি সপ্তাহে ফলোআপের জন্য আসবেন। তবে আস্তে আস্তে বোঝা যাবে দৃষ্টি কতটুকু ফিরছে।

জানতে চাইলে ঢাকাপোস্টের প্রধান প্রতিবেদন আদনান রহমান বলেন, কোটা আন্দোলনের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে আমাদের সিনিয়র প্রতিবেদক নূর মোহাম্মদ গুরুত্বর আহত হয়েছে। তিনি এখন রাজধানীর জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে ভর্তি আছেন।

 

পুলিশের গুলি লাগার পর চোখের অপারেশন করা হয়েছে সাংবাদিকের

জাতীয় চক্ষুবিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, আন্দোলন চলাকালে বুধবার থেকে গত শনিবার (১৭ থেকে ২২ জুলাই) পর্যন্ত ছয় দিনে ৪২৪ জন। এর মধ্যে চোখের অস্ত্রোপচার করতে হয়েছে ২৭৮ জনের। অস্ত্রোপচার করা বেশির ভাগ রোগীর চোখে ছররা গুলির আঘাত ছিল। এর মধ্যে চোখে আঘাতপ্রাপ্ত ৩১৮ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। প্রয়োজন অনুযায়ী কারও কারও চোখে একাধিকবার অস্ত্রোপচার করতে হচ্ছে। চোখের আলো ফিরবে কি না—এমন শঙ্কায় দিন কাটাচ্ছেন অনেক রোগী ও তাঁদের স্বজনেরা।

এএএম/