২২ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারকে মরণোত্তর সম্মাননা

আইএনবি ডেস্ক: ১৯৭১ সালের ১০ থেকে ১৬ ডিসেম্বর পর্যন্ত রংপুরের গঙ্গাচড়া সদর ও লক্ষ্মীটারী ইউনিয়নে ঘটেছিল নারকীয় হত্যাকাণ্ড। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকার-আলবদরদের সহযোগিতায় পাক হানাদার বাহিনীর বুলেটে নির্মমভাবে নিহত হন গ্রামের ২২ জন নিরীহ বাসিন্দা।

এদের মধ্যে মসজিদে নামাজপড়া চলাকালে পাক সেনারা ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে ছয়জনকে। আর চলতি পথে গুলি করে ও বেওনেট চার্জ করে বাকিদের হত্যা করা হয়। শিয়াল-শকুনে ঠুকরে ঠুকরে খেয়েছিল তাঁদের লাশ। স্বাধীনতার এত বছর পরও নিহতদের স্মরণে গড়ে ওঠেনি কোনো স্মৃতিসৌধ, আসেনি ইতিহাসের পাতায় তাঁদের নাম, পালিত হয় না গণহত্যা দিবস। ভয়াল সেই স্মৃতি আজও কাঁদায় গঙ্গাচড়ার মানুষকে।

দীঘদিন পর হলেও ‘চলো হাসি ছড়াই’ নামের স্থানীয় একটি সংগঠন মহান মুক্তিযুদ্ধে ওই ২২ শহীদ পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময়সহ তাঁদের মরণোত্তর সম্মাননা দিয়েছে। এ উপলক্ষে গত রবিবার (১৩ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় গঙ্গাচড়া উপজেলা পরিষদ চত্বরে আয়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ রুহুল আমিন।

গণহত্যার শিকার শহীদ পরিবার প্রতিনিধি ও শহীদ মৌলভী তৈয়ব আলীর ছেলে তোছাদ্দেক আলী নয়ার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিজুল ইসলাম, গঙ্গাচড়া প্রেসক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য এস এম কামরুজ্জামান বাদশা এবং কালের কণ্ঠের রংপুর ব্যুরোপ্রধান ও সিটি প্রেসক্লাব, রংপুরের সভাপতি স্বপন চৌধুরী।

জাকিউল আলম স্বপনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে শহীদ পরিবারগুলোর সদস্যরা সেই সময়ের স্মৃতিচারণ করে বলেন, সাংসারিক কাজ করাকালে অহেতুক নিরীহ এসব মানুষদের গুলি করে মেরে ফেলে পাক সেনারা। শিয়াল-শকুনে খেয়েছিল তাদের লাশ। অথচ স্বাধীনতার এত বছরেও কেউ তাঁদের খোঁজ নেয়নি। তবু তাঁদেরকে নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করায় কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তাঁরা।

এসময় স্মৃতিচারণ করেন গঙ্গাচড়ায় সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ওয়ারেছ আলী ও আজিজুল ইসলাম। তাঁরা এসব শহীদের স্মৃতি রক্ষায় গঙ্গাচড়ায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের দাবি তোলেন।

এখন থেকে শহীদ পরিবারগুলোর পাশে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে বক্তব্য দেন চলো হাসি ছড়াই এর আদনান সামী, গোলাম সারোয়ার উত্সব ও খালিদ হাসান মিলু। তাঁরা বলেন, স্বাধীনতার এত বছর পর অভাবি পরিবারগুলোর সন্ধান করতে তিন মাস সময় লেগেছে। অভাব এখনো তাদের পিছু ছাড়েনি। অনেকে এলাকা ছেড়ে অন্যত্র চলে গেছেন। সেই সময়ের প্রত্যক্ষদর্শী অনেক প্রবীণ ও ৭১-এর সম্মুখযুদ্ধে অংশ নেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের সহায়তায় ২২ পরিবারকে খুঁজে বের করে একত্রিত করা সম্ভব হয়েছে।

এসময় চলো হাসি ছড়াই-এর উদ্যোগে পরিবারগুলোকে নিয়ে একটি ভিডিও তথ্যচিত্র প্রদর্শন করা হয়।

পরে শহীদ পরিবারের সদস্যদের হাতে মরণোত্তর সম্মাননা স্মারক তুলে দেওয়া হয়। এসময় প্রধান অতিথি উপজেলা চেয়ারম্যান আলহাজ রুহুল আমিন বলেন, ‘আসলে ইতিহাস জানা থাকলেও তা ছিল বিক্ষিপ্ত-বিচ্ছিন্ন ঘটনা। দীর্ঘ সময় পর হলেও ২২জন নিরীহ-সাধারণ মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি এবং তাদের পরিবার-পরিজনের দুরবস্থার চিত্র উন্মোচন হয়েছে বিগত বছরগুলোতে প্রকাশিত কালের কণ্ঠের অনুসন্ধানী প্রতিবেদন এবং সর্বশেষ চলো হাসি ছড়াই এর মাধ্যমে।

গঙ্গাচড়ায় স্মৃতিসৌধ নির্মাণের উদ্যোগসহ শহীদ পরিবারগুলোর উন্নয়নে পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। কালেরকন্ঠ
আইএনবি/বিভূঁইয়া