লকডাউনে আমার দিন লিপি

আইএনবি ডেস্ক: করোনা পরিস্থিতি ভালো না।লকডাউন চলছে দেশ জুরে।বাসার বাইরে যাওয়া নিষেধ। মেয়েটাটা বাসায়।নিয়মিত অফিসে যায়।তাকে দেখাশুনা করি,গান শুনি,কিছু লেখাপড়া করি,ফোনে বন্ধুদের সাথে কথা বলি,বোনদের সাথে কথা বলি,টিভিতে খবর দেখি।আর ঘুমাই।
এই হচ্ছে আমার দিনলিপি। সময় কেটেই যাচ্ছে।ভাবনাহীন জীবন।কোন উদ্দেশ্য নেই। কোন উচ্চ আশা ও নেই।কোন উচ্চ বিলাসও নেই।
আমি আমার মাঝে সব সময় ব্যস্ত থাকি।
তবে দুদিন ধরে আমাকে একটা বিষয় খুব ভাবাচ্ছে।টিভির খবরে দেখলাম,আমেরিকায় এক রাজ্যে বাংলাদেশী বংশ ভূত এক পরিবারে দুই ভাই মিলে তাদের পরিবারের ৬জনকে হত্যা করে নিজেরাও আত্মহত্যা করেছে।নিজেকে হত্যা করার আগে তাদের সন্তান একটা ফেসবুক নোট লিখে গেছে। এই হত্যাকান্ডের মুল কারন নিজেদের পারিবারিক বিষন্নতা আর হতাশা।খবর টা বার বার টিভিতে দেখাচ্ছে। আর বিশেষজ্ঞদের মতামত নিচ্ছে। বিভিন্ন জন বিভিন্ন রকম কথা বলছে।তবে সবার কথার সারাংশ হচ্ছে,ছেলে মেয়েদের প্রতি আরো যত্নশীল হতে হবে,ভালোবাসতে হবে,সময় দিতে হবে।
বিষয় টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আসলে এই ডিজিটাল যুগে আমরা কি এদের সময় দিচ্ছি, না তাদের পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করে দিতে পারছি।এখন তো পরিবার মানে একটা পাখির খাঁচা। স্বামী স্ত্রী আর একটা সন্তান। তিনটে প্রানী।যে যার মতো ব্যস্ত।বাবা অফিসে, মাও তাই, তা না হলে সংসার,বন্ধু বান্ধবী, না হলে ফেসবুক, টিভি সিরিয়াল,আরো কতকিছু। বাকী সব নাই বললাম।
সন্তান আর কোথায় পরিবারিক পরিবেশ পাবে?
আমার ছেলেবেলার কথা মনে পড়ে। আমরা ৯বোন,দুই ভাই। মানে ১১জন।একটা ফুটবল টিম।গ্রামের বাড়িতে দুটো চকি একসাথে করে সবাই ঘুমাতাম।কত গল্প, কত কাহিনী, কত মারামারি, কত মান অভিমান ছিল।
আর ছিল ভালোবাসার বন্ধন।আমার বোনেরা আমাকে এখনো পাগলের মতে ভালোবাসে।ওরা একে অন্যকে এখনো আগের মতোই ভালোবাসে।নয় বোন এখন ভিন্ন ভিন্ন শহরে বসবাস করে।তাদের সন্তানরাও সন্তানের বাবা মা হয়ে গেছে।তবুও বোনেরা একসাথে মিলিত হলে এরা ৫০বছর আগের জীবনে ফিরে যায়।হাসি, আড্ডা আর গল্পে মেতে উঠে।আমার মা-বাবার মৃত্যু বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আমরা বছরে একবার মিলিত হই।তখন বোনদের এই কর্মকাণ্ড দেখি।আমার খুব ভালো লাগে।আমি কেবলি ভাবি, আমাদের সন্তানদের এই পারিবারিক পরিবেশ তৈরি করে আমরা দিতে পারিনি।এই জন্যই আমেরিকায় বাংলাদেশী পরিবারে এই হত্যা কান্ড ঘটেছে।এই বিষন্নতা, এই হতাশার কারনেই এইসব হয়েছে।
আসুন আমরা আরো বেশী বেশী ভাবে পরিবারে প্রতি যত্নশীল হই।
পরিবারকে সময় দেই।সন্তান কে সময় দেই।ভালোবাসার বন্ধন আরো লোহার মতো শক্ত করি।
পরিশেষে বলি এবং সন্তোষ আনন্দএর লেখা সেই কালজয়ী গানটা শুনি,
“এক পেয়ার কা নাগমা হে
মজ উড়তি রাউয়ানি হে
জিন্দেগী অর কুছভি নেহি
তেরি মেরি কাহানি হে”।
আসলেই জীবন তো তোমার আমার কাহিনী মাএ।


তারিক মাহমুদ।