আঙুলের ছাপ লাগতো সম্রাটের গোপন কক্ষে ঢুকতে

আইএনবি নিউজঃ
ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট দলীয় ক্ষমতা ব্যবহার করে জুয়ার আসর, চাঁদাবাজি এমন কোন কাজ নেই যা সম্রাট করতেন না। তিনি হেঁটে চললে সামনে-পেছনে থাকত শত শত সহযোগী। আর গাড়িতে চড়লে সেই ভিড় পরিণত হতো বহরে। সূত্র কালের কন্ঠ

ঢাকা নগরীর দক্ষিণাঞ্চলের কয়েকটি এলাকায় রয়েছে তার কয়েকটি কার্যালয়। এছাড়া আছে কয়েকটি বাসা। কার্যালয়ে সিংহাসনের মতো চেয়ারে বসে করতেন বিচার সেখানেও ঘিরে থাকত শত শত অনুসারী। ক্যাসিনো কারবার আর অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ কবজা করে সম্রাট হয়ে ওঠেন গডফাদার। যার কারনে পরিচিতি পান ক্যাসিনো সম্রাট হিসেবে।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রবিবার গ্রেপ্তারের পর যুবলীগ থেকে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁর অপকর্মের অভিযোগ ও তথ্য খতিয়ে দেখা শুরু হয়েছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।শুরু হয় ছাত্রলীগের ওয়ার্ড রাজনীতি দিয়ে যুবলীগের দক্ষিণের সভাপতি হয়েছেন সম্রাট। রাজনৈতিক প্রভাবে তিনি গড়ে তুলেছেন অপকর্মের সাম্রাজ্য, গত ছয় বছরে যা বিস্তৃত হয়েছে। কিন্তু গত দুই দশকে ক্যাসিনো কারবার, ভবন নির্মাণে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, শীর্ষ সন্ত্রাসীদের নেটওয়ার্ক নিয়ন্ত্রণ, জমি দখলসহ নানা অপকর্মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

র‌্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশনস) কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার সাংবাদিকদের বলেন, ‘ক্যাসিনোর হোতা ছিলেন সম্রাট। ক্যাসিনো পরিচালনাসহ তাঁর বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ আছে। এসব তথ্যের সূত্রে অভিযান চলছে।’

ঢাকায় বড় হন তিনি, পরিবারের সঙ্গে থাকতেন কাকরাইলে সার্কিট হাউস সড়কের সরকারি কোয়ার্টারে। সম্রাটের গ্রামের বাড়ি ফেনীর পরশুরাম উপজেলার মির্জানগর ইউনিয়নের পূর্ব সাহেবনগরে। তার বাবা ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী ছিলেন রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) লিফটম্যান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ১৯৯০ সালে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে যুক্ত হন সম্রাট। এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় তিনি রমনা অঞ্চলে সংগঠকের দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময় জেলও খাটেন তিনি। পরবর্তী সময়ে বিএনপি সরকারের আমলেও তাঁর বিরুদ্ধে মামলা হয়।

জানা গেছে, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ যুবলীগের নিজস্ব কোনো কার্যালয় না থাকলেও সম্রাট দায়িত্ব নেওয়ার পর কাকরাইলে রাজমনি সিনেমা হলের উল্টোদিকে ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টার নামের ৯ তলা ভবনের পুরোটাতেই কার্যালয় করেন। ওই ভবনে কার্যালয় করার পর ধীরে ধীরে পুরোটাই দখলে নেন তিনি। সাংগঠনিক কাজের কথা বলা হলেও এখানে বসেই সম্রাট ক্যাসিনো ব্যবসা থেকে শুরু করে সব কিছু নিয়ন্ত্রণ করতেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে থাকত তাঁর কর্মী ও অপকর্মের সঙ্গীদের আনাগোনা। সম্রাট যুবলীগ ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতাদের দৃষ্টি কাড়েন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ‘লোকবল’ সরবরাহ ও অর্থ দিয়ে। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে বড় ধরনের শোডাউন দেখাতেন তিনি। কর্মী বাহিনীকে একেক কর্মসূচিতে একেক ধরনের পোশাক পরিয়ে দৃষ্টি কাড়তেন সবার। এ জন্য যুবলীগ চেয়ারম্যান সম্রাটকে শ্রেষ্ঠ সংগঠক বলে আখ্যায়িত করেন।

সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমিন চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, শান্তিনগরের শেলটেক টাওয়ারের ফ্ল্যাট, মহাখালীর বাসা, যেখানে তিনি থাকেন এবং কাকরাইলে কার্যালয়ের ফ্লোরটি সম্রাটের। তাঁর আর কোনো বাড়ি বা ফ্ল্যাটের খবর তাঁর জানা নেই।

ভূঁইয়া ট্রেড সেন্টার ভবনটি সম্রাটের কি না তা জানতে চাইলে শারমিন বলেন, ‘না। চতুর্থ তলায় অফিসের ফ্লোরটি শুধু তার। ওই ভবনে ঢুকতে গেটে যে কড়া চেক হতো, সে কারণে বিল্ডিংয়ে আর কেউ উঠত না।’

শারমিন দাবি করেন, ‘ক্যাসিনোসহ সব চাঁদাবাজির টাকা নেতাকর্মীদের পেছনে আর জুয়া খেলায় ব্যয় করতেন সম্রাট। তার তেমন কোনো সম্পদ নেই।’

র‌্যাবের একাধিক সূত্র জানায়, সম্রাটের কাকরাইল কার্যালয়ে তার একটি গোপন কক্ষ আছে। ওই কক্ষে ঢুকতে হলে তার আঙুলের ছাপ দিতে হতো। গোপন কক্ষে টাকা ও মদ থাকতো। এছাড়া তার কার্যালয়ের কম্পিউটার সহযোগিরা চালালেও পাসওয়ার্ড জানত না। সম্রাট কম্পিউটার খুলে দিতেন। কম্পিউটারে গোপন তথ্য আছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এসব আলামত খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে সূত্র।

আইএনবি/বিভূঁইয়া