চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা কাফনের কাপড়ে সচিবালয়ে

আইএনবি ডেস্ক: ঢাকার পিলখানায় ২০০৯ সালে বিদ্রোহের অভিযোগে চাকরিচ্যুত ও মামলার আসামি হয়ে কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের মুক্তি এবং চাকরিতে পুনর্বহালসহ ৮ দফা দাবিতে সচিবালয় ঘেরাওয়ের কর্মসূচি উপলক্ষে খাদ্য অধিদপ্তরের সামনে সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন চাকরিচ্যুত বিডিআর (বর্তমান বিজিবি) সদস্য ও তাদের পরিবারের সদস্যরা।

চাকরিতে পুনর্বহালসহ ৬ দফা দাবি জানিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি পালন করে আসছিলেন তারা। গত মঙ্গলবার সকাল থেকে ছয় দফা দাবিতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে লাগাতার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করে বিডিআর কল্যাণ পরিষদ। পূর্বঘোষিত আলটিমেটাম শেষ হওয়ার পর গতকাল বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে সচিবালয় ঘেরাও করার কর্মসূচি ঘোষণা করেন বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক মাহিন সরকার। এরপর আন্দোলনরত বিডিআর সদস্যদের শপথও পাঠ করান তিনি। তাদের দাবি দ্রুত মেনে নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে গতকাল দুপুরে সচিবালয় অভিমুখে রওনা করেন চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা।

দুপুর ১টার দিকে সচিবালয়ের উদ্দেশে যাত্রাকালে পুলিশের বাধা পেয়ে সচিবালয়ের সামনে রাস্তায় কাফনের কাপড় পরে শুয়ে পড়েন আন্দোলনকারীরা। প্রথমে তারা খাদ্য অধিদপ্তরের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেন। এরপর সচিবালয় এলাকায় প্রবেশ করতে চাইলে পুলিশ জলকামান দিয়ে তাদের আটকানোর চেষ্টা করে। একপর্যায়ে পুলিশি ব্যারিকেড ও জলকামান উপেক্ষা করেই সচিবালয় এলাকায় ঢুকে পড়েন তারা। এ সময় ‘দিল্লি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা’, ‘তুমি কে আমি কে, বিডিআর বিডিআর’, ‘দিয়েছি তো রক্ত, আরও দেব রক্ত’, ‘রক্তের বন্যায়, ভেসে যাবে অন্যায়’, ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ ইত্যাদি স্লোগান ভেসে আসে। গতকাল আন্দোলনকারীদের সড়ক অবরোধের কারণে দুপুর থেকে বিকাল পর্যন্ত বন্ধ ছিল গুলিস্তান জিরো পয়েন্ট থেকে শিক্ষাভবন মোড় পর্যন্ত সড়কের উভয়পাশের যান চলাচল। এর জের পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতেও; সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট।

এদিকে চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যদের পুনর্বহালসহ তাদের সব দাবি নিয়ে চলতি সপ্তাহের মধ্যেই আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলের সঙ্গে বৈঠকের আশ্বাস দেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক হাসনাত আব্দুল্লাহ। বুধবার দুপুর ২টার দিকে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কথা বলতে আন্দোলনস্থলে যান তিনি। তবে তার আশ্বাসের পরও চাকরিচ্যুত বিডিআর সদস্যরা সড়কে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো বক্তব্য না পাওয়া পর্যন্ত তারা সড়ক ছাড়বেন না বলে সাফ জানিয়ে দেন।

এদিকে ২০০৯ সালে পিলখানায় বিডিআর বিদ্রোহের অভিযোগে চাকরিচ্যুত ও মামলার আসামি হয়ে কারাবন্দি বিডিআর সদস্যদের মুক্তি এবং চাকরি ফেরতের দাবিতে আন্দোলনরতদের ৮ সদস্যদের একটি প্রতিনিধি দল গতকাল সচিবালয়ে যান অন্যতম সমন্বয়ক রোকসেদ আলম প্রধান রিয়ালের নেতৃত্বে।

উল্লেখ্য, শুরু থেকে ৬ দফা দাবি আদায়ে আন্দোলন করলেও সর্বশেষ আরও ২ দফা যুক্ত হয়েছে আন্দোলনকারীদের। তাদের ৮ দফা দাবিগুলো হলোÑ পিলখানার ভেতরে ও বাইরে ১৮টি বিশেষ আদালত ও অধিনায়কের সামারি কোর্ট গঠন করে যেসব বিডিআর সদস্যদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে তাদের সবাইকে চাকরিতে পুনর্বহাল করা এবং ক্ষতিপূরণ ও রাষ্ট্রীয় সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করা; ইতিমধ্যে হত্যা মামলায় খালাসপ্রাপ্ত এবং সাজা শেষ হওয়া জেল বন্দি বিডিআর সদস্যদের অনতিবিলম্বে মুক্তি প্রদান এবং উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রহসনের বিস্ফোরক মামলা বাতিল করা; পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ হওয়া ৫৭ সেনা কর্মকর্তা, ১০ জন বিডিআর সদস্যসহ সর্বমোট ৭৪ জনের হত্যাকারীর বিচার নিশ্চিত করা। একই সঙ্গে জেলের ভেতর মারা যাওয়া প্রত্যেক বিডিআর সদস্যের মৃত্যুর সঠিক কারণ উন্মোচন করা; পিলখানা হত্যাকাণ্ডে অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুত সেনা কর্মকর্তাদের ফিরিয়ে আনা; সব শহীদ সেনা কর্মকর্তার লাশ পুনরায় তদন্তের মাধ্যমে সঠিকভাবে শনাক্তের ব্যবস্থা করা; স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাস ধারণকারী বিডিআর নাম ফিরিয়ে আনা; পিলখানা হত্যাকাণ্ডে সব শহীদের স্মরণে জাতীয় দিবস ঘোষণা করা এবং শহীদ পরিবারের সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

আইএনবি/বিভূঁইয়া