সে আমার ছোট

বিনোদন ডেস্ক: কয়েকদিন  দিন আগে সে আমাকে অনেকগুলো ছবি পাঠিয়েছে।চমৎকার সব ছবি। সমুদ্রের তীরে বসে মুগ্ধতা নিয়ে সমুদ্র দেখছে। সমুদ্রের বিশালতা অনুভব করছে।উপরে নীল আকাশ,পাশে ওর ভালোবাসার মানুষ।ছেলেটা ছিল না। হয়তো অন্য কোন কাজে,অন্য কোন খানে ব্যস্ত।জীবন উপলব্ধি করছে। জীবনের সুখের মুহুর্তগুলো নিংড়ে নিংড়ে উপভোগ করছে সবসময়।তার হাসিখুশী মুখটা দেখেই মনটা খুশীতে ভরে যায়।বাপ মা হারা ছোট বোনটা আমার হাজার প্রতিকুল অবস্থা পেরিয়ে সবশেষে সুখের ঠিকানা খুঁজে পেয়েছে। 

সে আর আমাকে লিখেছে,” জীবন বড় ছোট ভাই।খুব অল্প সময়েই ফুরিয়ে যাচ্ছে। যদি আরো কিছু কাল এই সুন্দর পৃথিবীতে কাটিয়ে যেতে পারতাম।’

 

এবার তার পরিচয় দেই। সে আমার ছোট বোন। থাকে কানাডায়।তার নাম লুৎফুন নাহার। ডাক নাম কচি।ছোটবেলায় ফুটফুটে সুন্দর ছিল খুব। বাবা ও তাকে খুব ভালো বাসতেন।সাথে আমরাও।কিন্ত বেশী দিন বাবার ভালোবাসা আমাদের ভাগ্যে সইল না। একদিন বাবাও আমাদের রেখে ওপারে চলে গেলেন। তখন কচির বয়স ১৪/১৫ হবে।আমরা তখন ভাইবোন মিলে মোট ১১জন।বোনদের মধ্যে কচি সবার ছোট ছিল। তার সিরিয়াল ছিল ৯ নম্বরে।বাবা মারা যাবার পর আমাদের চার ভাইবোনকে নিয়ে মা তখন অকুল পাথারে পড়লেন। হাজারো ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্যে দিয়ে আমরা সেই কঠিন সময় পার করলাম। সেইসব দুঃখের কথা আজ নাই বলি।কচির জীবন সংগ্রামের কথাই বলি।মামা বোনের বাসায় থেকে কচি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অর্থনীতিতে মাস্টার্স ডিগ্রী শেষ করে। তারপর একদিন ভালোবেসে কবিরকে বিয়েও করে ফেলে। চট্টগ্রামে ইপসা নামের একটা এনজিওতে চাকরি জীবন শুরু করে। জীবনের লড়াই সেখান থেকেই শুরু।পরিশ্রম করে টিকে থাকার মন্তটা কচি ভালোই রপ্ত করতে পেরেছিল।তাই আজ স্হায়ী ভাবে কানাডায় চাকুরী নিয়ে বসবাস করতে পারছে।

বাংলাদেশে থাকাকালীন মাঝখানে একবার এ্যাকশন এইড নামের একটা এনজিওতে চাকুরী নিয়ে ঢাকা এসেছিল।তখনও কঠিন সময় পার করেছে কচি।স্বামী সন্তান চট্টগ্রামে, সে ঢাকায়,শরীর অসুস্থ, বাসায় কাজের লোক নেই, মাসের ১৫ দিন দেশের বিভিন্ন উপজেলায় কাজ করতে যেতে হতো।সে কঠিন সময় পার করেছে কচি।

 

কচি আমাকে এইসব শেয়ার করতো।বড় ভাই হিসাবে তাকে যতটুকু সাহায্য, সাহস দিতে পেরেছি, দিয়েছি।আর যা দিতে পারিনি সে আমার ব্যর্থতা।

তবে কচির দৃঢ মনোবলের কারনেই তার আজ এই সাফলতা। তাকে আমার অভিনন্দন। শুভ কামনা।

হাজারে কজন পারে এমন।আমার জানামতে খুব অল্প কজনকেই দেখেছি।

 

এভাবে ই লড়াই করতে করতে একদিন কচি কানাডা যাওয়ার সব ব্যবস্হা করে ফেলে।ছেলে, স্বামী নিয়ে উড়াল দেয়। কানাডা যাওয়ার ।সব লড়াই কচি একাই করেছে বলেই জানি।তার এই লড়ে যাওয়ার মনোভাব ই তাকে বিজয় এনে দিয়েছে।

 

আজ ৭ বছর হতে চললো কচি কানাডায়।দুবছর আগে একবার দেশে বেড়াতে এসেছিল।এখন প্রায়ই ফোনে কথা হয়।ভালো আছে।অনেক গল্প করে এখানকার।

 

আমাকে প্রায়ই বলে,”ভাই একদিন আপনি চলে আসেন কানাডায় বেড়াতে।আপনার তো শীত প্রধান দেশে বেড়াতে খুব সখ।একবার এসে বেড়িয়ে যান।’

 

আমারও ইচ্ছে আছে,একবার বেড়াতে যাবো।

কবে যে সে সময় হবে,তা আমি জানি না।তবে একদিন ঠিকই যাবো।

 

আইএনবি/তারিক মাহমুদ