লোকসানের পরেও বিদেশে কোম্পানি খুলছে সিটি ব্যাংক

আইএনবি ডেস্ক: জাপানের হংকংয়ে যাত্রা শুরু করা সিটি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি সিটি হংকং লিমিটেড এখনো লাভের মুখ না দেখলেও নতুন করে সিঙ্গাপুরে আরেকটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি স্থাপনের উদ্যোগ নিয়েছে বেসরকারিখাতের এই ব্যাংকটি।

মুদ্রা বিনিময় ও ঋণ উপদেশ প্রদানে কৌশলগত ভৌগলিক সম্প্রসারণের উদ্যোগ হিসেবে ২০১৯ সালে হংকংয়ে সিটি হংকং লিমিটেড নামে একটি সাবসিডিয়ারি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছে সিটি ব্যাংক। ব্যাংকটির বার্ষিক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সাল থেকে এই সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে।

জাপানের হংকংয়ে সিটি ব্যাংকের এই সাবসিডিয়ারি কোম্পানিটি লাভের মুখ দেখার আগেই সিঙ্গাপুরে আরেকটি কোম্পানি খোলার উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংকটি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তারা বলেছেন, বিদেশে অবস্থিত সিটি ব্যাংকের সবগুলো সাবসিডিয়ারি কোম্পানির কার্যক্রম ও আয়-ব্যয় মূল্যায়ন করেই নতুন সাবসিডিয়ারি কোম্পানির অনুমোদন দেওয়া হবে।

জানা গেছে, সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশি শ্রমিকদের কাছ রেমিটেন্স সংগ্রহের লক্ষ্যে নতুন এই সাবসিডিয়ারি স্থাপন করতে যাচ্ছে সিটি ব্যাংক। সিঙ্গাপুরে ব্যবসা সম্প্রসারণ করার জন্য সিটি ব্যাংক ২০ লাখ সিঙ্গাপুর ডলার বা ১২ কোটি ৫৫লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে।

এই বিনিয়োগের মাধ্যমে সিঙ্গাপুরে কর্মরত বাংলাদেশিদের উপার্জিত আয়ের অর্থ দেশে পাঠানোর সেবা প্রদানের জন্য একটি সহায়ক কোম্পানি স্থাপন করবে বেসরকারীখাতের এই বাণিজ্যিক ব্যাংক।

পুঁজিবাজারে তালিকাভূক্ত ব্যাংকটি সম্প্রতি ঢাকা স্টক একচেঞ্জের ওয়েবসাইটে বিনিয়োগের ঘোষণা দিয়েছে।

ঢাকা স্টক একচেঞ্জের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যমতে সিটি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ইতিমধ্যে বিনিয়োগ পরিকল্পনা অনুমোদন করেছে। এখন বাংলাদেশ ব্যাংক এবং সিঙ্গাপুরের মুদ্রা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য অপেক্ষায় রয়েছে।

ব্যাংকের তথ্যমতে, নতুন সাবসিডিয়ারিটির প্রাথমিক ভাবে নজর থাকবে বাংলাদেশিদের রেমিটেন্সের উপর।

এবিষয়ে ব্যাংকটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাশরুর আরেফিন বলেন, ‘মালয়েশিয়ায় রেমিটেন্স ব্যবসায় ব্যাংকটি খুব ভালো করছে। এই অভিজ্ঞতা থেকেই আমরা সিঙ্গাপুরে ব্যবসা সম্প্রসারণের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা রেমিটেন্স ব্যবসায় দক্ষতা অর্জন করেছি এবং এখন সিঙ্গাপুরে রেমিটেন্স সংগ্রহের দৃশ্যপট পরিবর্তন করতে চাই।’

ঢাকা স্টক একচেঞ্জ সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের প্রথম ৯ মাসে সিটি ব্যাংকের শেয়ার প্রতি আয় বেড়েছে ২ দশমিক ৯৭ টাকা। ২০২০ সালের একই সময়ে আয় বেড়েছিল ২ দশমিক ৮৯ টাকা।

গত বছরে ব্যাংকটি ৪০১ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে এবং ওই বছরে বিনিয়োগকারীদের জন্য ১৭ দশমিক ৫শতাংশ নগদ লভ্যাংশ এবং ৫ শতাংশ শেয়ার লভ্যাংশ দিয়েছে।

২০২১ সালের ২১ ডিসেম্বর দিন সিটি ব্যাংকের প্রতিটি শেয়ারের দাম ১ দশমিক ৪৮ টাকা কমে ঢাকা স্টক একচেঞ্জে লেনদেন হয়েছে ২৬ দশমিক ৬০ টাকায়।

ঢাকা স্টক একচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে জানা গেছে, ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে জুড়ে ব্যাংকটির শেয়ার দর নিম্নমুখী ছিল।

প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় সুত্রে জানা গেছে, বর্তমানে সিঙ্গাপুরে ৮ লাখ ১৪ হাজার বাংলাদেশী শ্রমিক বসবাস করছেন। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্যমতে গত অর্থবছরে সিঙ্গাপুর থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা মোট ৫৭৮ মিলিয়ন ডলারের রেমিটেন্স পাঠিয়েছেন। এ বছর বাংলাদেশ থেকে সিঙ্গাপুরে গেছেন ২১ হাজার অভিবাসী শ্রমিক।

সিঙ্গাপুরে সিটি ব্যাংকের সাবসিডিয়ারি কোম্পানি খোলার বিষয়ে জানতে চাইল বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম বলেন, কোন ব্যাংক বিদেশে কোম্পানি খোলার অনুমোদন চাইলেই দেওয়া হয় বিষয়টি এমন না। ব্যবসার অনুকুল পরিবেশ সংশ্লিষ্ট দেশের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবসায়ীক সম্পর্ক, অভিবাসন ও মুনাফার বিষয়টি বিবেচনা করেই অনুমোদন দেওয়া হয়।

বার্তা২৪

আইএনবি/বিভূঁইয়া