সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়া এবং অনলাইনের বিভিন্ন প্লাটফর্মে সরকারি বিরোধী লেখালেখির কারণে লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি নেতা জাহিদুর হক মোমেনের পরিবারকে হয়রানি করছে পুলিশ ও আইন শৃঙ্খলা বাহিনী। এই অভিযোগের ইতোমধ্যে তার বিরুদ্ধে আদালতে মামলা হয়েছে। এই মামলার সূত্রে ধরে প্রায় প্রতিদিন নংসিংদীর বাড়িতে নিয়মিত পুলিশসহ অন্যান্য আইন শৃঙ্খলা বাহিনী তল্লাশি চালায়। ভয়ে তার পরিবার প্রায় নিজের বাড়ি থেকে পালিয়ে থাকছে। শূধু মোমেন নয়, দেশের আরও কয়েকটি পরিবারকে একই অভিযোগে হয়রানির করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

ভূক্তভোগী পরিবারগুলো বলছে, নংসিংদীর রায়পুর উপজেলার হাসিমপুর সাহার খোলা গ্রামের বাসিন্দা জাহিদুল হক মোমেন। তিনি বর্তমানে ইংল্যান্ডের লন্ডনে অবস্থান করছে। সেখানে তিনি জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। সে দেশে সরকার বিরোধী বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সক্রিয় অংশ নিচ্ছে। এছাড়া সরকারি বিভিন্ন অনলাইন প্লার্টফর্মে সরকার বিরোধী লেখালেখি করছেন। বিষয়টি দেশের আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে আসার তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওযার জন্য নংসিংদীর রায়পুরা থানাকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়। এছাড়া তিনি বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে নিয়মিত সাক্ষাৎ ও কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার বিষয়টি জানাজানির পর চলতি বছর ২০২৩ সালের ১০ এপ্রিল ঢাকার একটি কোর্টে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন লালবাগের রেদওয়ান পাঠান নামে আওয়ামী ও সরকার সমর্থন এই ব্যক্তি। সিআর মামলা নাম্বর-১৫-২০২৩। সেই মামলা মোমেনকে ৭ নম্বর আসামী করা হয়েছে।

হয়রানির বিষয়ে জানতে চাইলে রায়পুরা থানা অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মোঃ আজিজুর রহমান আইএনবি২৪ কে বলেন, তার বিরুদ্ধে সরকার বিরোধী নানা তৎপরতার স্পষ্ট অভিযোগ রয়েছে। তিনি লন্ডনে পতাতক দন্ডপ্রাপ্ত বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠক করেছে বলে আমাদের কাছে অভিযোগ রয়েছে। তার নির্দেশে রায়পুরাসহ নংসিংদীর বিভিন্ন স্থানে গাড়ি ভাংচুর হচ্ছে। মোমেন লন্ডনে বসে বিএনপি ও তার অঙ্গসংগঠনের নেতা কর্মীরা সরকার বিরোধী কর্মকাণ্ড অংশ নেওয়ার ইন্ধন যোগাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন ওসি আজিজুর রহমান।

পরিবারকে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তার বড় ভাই মোহাম্মদ হারুন বলেন, আমার ছেলে সৌদি আরব বিএনপি যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। এখন সে লন্ডনে আছে। সেখানে সে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে সম্পূক্ত। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের সঙ্গে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় পর থেকেই আমার ছেলের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এখন আমাদের ওপর নানা ধরনের হয়রানি করা হচ্ছে। পুলিশ নিয়মিত আমার বাড়িতে আসে। ভয়ে পুরো পরিবার নিয়ে অন্যত্র থাকতে হচ্ছে।

জানতে চাইলে লন্ডন বিএনপির নেতা জাহিদুল হক মোমেন বলেন, আমি বাংলাদেশে থাকা অবস্থায় বিএনপি রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলাম। ছাত্র জীবন অবস্থায় বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের রাজনীতিতে যুক্ত হই। এরপর রায়পুরা উপজেলা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। এরপর দীর্ঘ ১৮ বছর সৌদি আরবে মক্কা শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক পদে ছিলাম। ২০২২ সালের ১৮ মে লন্ডন আসার পর বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এখানে সরাসরি বিএনপির রাজনীতিতে যুক্ত হয়ে। সম্প্রতি তারেক রহমানের কপালে চুমা দেওয়া ছবি দেখার পর থেকেই আমার বিরুদ্ধে মামলা ও পরিবারকে হয়রানি করছে সরকার দলীয় লোকজন ও আইন শৃঙ্খরা বাহিনী। রাজনীতি করার কারণে নিজের পরিবার ও দেশে থাকতে পারেনি। এখন বিদেশে এসেও পরিবারকে হয়রানি করার আমার পরিবার নিয়ে আমি উদ্বিগ্ন।

জানা গেছে, মোমেন ছাড়াও লন্ডনে রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ায় ঢাকা বাসিন্দা রোহান তারিক, মোহাম্মদ মেহেদী হাসান রুবেল, লন্ডনে অবস্থানরত সাংবাদিক কাফি কামাল, আসাদ শফিকসহ একই ধরনের হয়রানির অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কেএম/বিভূইয়া/ওএফ