রেমিট্যান্সে রেকর্ড

 

আইএনবি নিউজ:  গেল বছরে রেকর্ড পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশীরা। সদ্যসমাপ্ত ২০১৯ সালে ব্যাংকিং চ্যানেলে এক হাজার ৮৩৩ কোটি ডলার রেমিট্যান্স দেশে এসেছে; যা আগের অর্থবছরের তুলনায় ২৭৮ কোটি ডলার বা প্রায় ১৭ দশমিক ৮৯ শতাংশ বেশি। এর আগে ২০১৮ সালে রেমিট্যান্স এসেছিল এক হাজার ৫৫৫ কোটি ডলার। কেন্দ্রীয় ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য বলছে, বিদায়ী বছরের শেষ মাস ডিসেম্বরে প্রবাসীরা ১৬৯ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছেন। আগের মাস নভেম্বরে ১৫৫ কোটি ডলার রেমিট্যান্স এসেছিল। যেখানে গত বছরের ডিসেম্বরে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল ১২০ কোটি ডলার। অর্থাৎ শুধু বছর হিসাবেই নয়, একক মাসের হিসাবেও রেমিট্যান্স বেড়েছে।

ব্যাংকার ও খাত সংশ্লিষ্টরা বলছেন, রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়ছে মূলত দুটি কারণে। একটি হলো সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী দুই শতাংশ প্রণোদনা দেয়া শুরু হয়েছে। অন্যটি হচ্ছে ডলারের দাম বেড়েছে। অর্থাৎ এখন ডলারের বিপরীতে বেশি টাকা পাওয়া যাচ্ছে। এসব কারণে প্রবাসীরা দেশে বৈধ পথে টাকা পাঠাতে উৎসাহিত হচ্ছেন। এ ধারা অব্যাহত থাকবে এ বছরও বৈধ চ্যানেলে রেকর্ড পরিমাণ রেমিট্যান্স আসবে বলে প্রত্যাশা করছেন তারা।

২০১৯ সালের শুরুতে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দর নির্ধারণ ছিল ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। অর্থাৎ পণ্য আমদানিতে প্রতি ডলারে ব্যয় করতে হয় ৮৩ টাকা ৯০ পয়সা। চলতি বছরের দফায় দফায় দাম বেড়ে ডলার ৮৪ টাকা ৯০ পয়সা দাড়িয়েছে। এ হিসাবে গত এক বছরে আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে ডলারের দাম বেড়েছে এক টাকা।

এদিকে রেমিট্যান্সের প্রণোদনার অর্থ যেন সহজে প্রবাসীরা পায় সেজন্য বিভিন্ন শর্ত শিথিল করছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
সম্প্রতি এক সার্কুলারে বলা হয়েছে দেড় লাখ টাকার রেমিট্যান্সে ২ শতাংশ হারে প্রণোদনা পাওয়ার ক্ষেত্রে কোনো প্রকার কাগজপত্র লাগবে না। আগে ১৫০০ মার্কিন ডলার বা সমমূল্যের অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রা পাঠালে বিনা প্রশ্নে প্রণোদনার কথা বলা হয়েছিল। কিন্ত প্রবাসীদের বোঝার সুবিধার্ধে টাকার পরিমাণ উল্লেখ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পাশাপাশি দেড় লাখ টাকার ওপরে রেমিট্যান্সের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিলের সময়সীমাও বাড়ানো হয়েছে।

এদিকে দেড় লাখ টাকা বা দেড় হাজার ডলারের বেশি রেমিট্যান্স প্রেরণকারীকে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র দাখিল করতে হয়। আগে পাঁচ কার্যদিবসের মধ্যে রেমিট্যান্স কাগজপত্রাদি দাখিলের সময়সীমা ছিল। এটি বাড়িয়ে ১৫ কার্যদিবস করা হয়েছে।

জানা গেছে, দেড় লাখ টাকার বেশি রেমিট্যান্সের নগদ প্রণোদনা পাওয়ার জন্য রেমিট্যান্স প্রদানকারী ব্যাংকের শাখায় পাসপোর্টের কপি এবং বিদেশি নিয়োগদাতার দেওয়া নিয়োগপত্রের কপি জমা দিতে হয়। রেমিট্যান্স প্রেরণকারী ব্যক্তি ব্যবসায় নিয়োজিত হলে ব্যবসার লাইসেন্সের দিতে হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭ সালে এক হাজার ৩৫৩ কোটি ডলারের সমপরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠিয়েছিলেন প্রবাসীরা। এর আগের বছর ২০১৬ সালে ছিল এক হাজার ৩৬১ কোটি ডলার। ২০১৫ সালে আসে এক হাজার ৫৩১ কোটি ডলার। আর ২০১৪ সালে রেমিট্যান্সের পরিমাণ ছিল এক হাজার ৪৯২ কোটি ডলার।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে রেমিট্যান্স আহরণে রেকর্ড হয়। ওই সময়ে প্রবাসীরা ১ হাজার ৬৪২ কোটি ডলার রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। যা অর্থবছর হিসাবে বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স আহরণ। তারও আগে বিগত চার বছরের মধ্যে দেশে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে সর্বোচ্চ রেমিট্যান্স এসেছিল। সে সময় রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ মার্কিন ডলার। এরপর ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আসে এক হাজার ৪৯৩ কোটি ১১ লাখ মার্কিন ডলার, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে প্রবাসীদের রেমিটেন্স পাঠানোর পরিমাণ ছিল এক হাজার ২৭৬ কোটি ৯৪ লাখ মার্কিন ডলার। আর ২০১৭-১৮ অর্থবছরের রেমিট্যান্স আসে এক হাজার ৪৯৮ কোটি ডলার; যা তার আগের অর্থবছরের চেয়ে ১৭ দশমিক ৩ শতাংশ বেশি।