যতদিন বাঁচব নেত্রীর আর্দশ হতে বিচ্যুত হব না : রেজাউল করিম

নিজস্ব প্রতিবেদক

আলহাজ্ব রেজাউল করিম। রাজনীতির সুতিকাগার রাজধানী ঢাকার পুরানা পল্টন, গুলিস্থান, শাহবাগ, সেগুনবাগিচা, বিজয়নগর এলাকার আওয়ামী লীগ সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সিপাহসালার বিশ্বস্ত, ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা।

দীর্ঘ ৪০ বছরেরও অধিক সময় ধরে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে জড়িত তিনি। স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলন, ২০০১ পরবর্তী বিএনপি-জামায়াত সরকারের দু:সময়, এক-এগোরা সময়ে শেখ হাসিনা মুক্তি আন্দোলনসহ দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলনে অকুতোভয় সৈনিক হিসেবে ছিলেন সামনের সারিতে।

গুলিস্থান, পল্টন, শাহবাগসহ আশপাশের প্রতিটি আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন রেজাউল করিম। বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে বহুবার কারা নির্যাতনের শিকার হন। বহুবার পুলিশের নির্যাতনের শিকার হন, এখনো নির্যাতনের চিহৃ বয়ে বেড়াচ্ছেন।

২০০১ সালে বিএনপি জামায়াত ক্ষমতায় আসার পর পুলিশি বাধা উপেক্ষা করে রাজপথে ছিলেন তিনি। তৎকালীন সরকারের সংসদে প্রথম অধিবেশনের দিন ১০ অক্টোবর আওয়ামী লীগের ডাকা অর্ধদিবস হরতালে যখন পুলিশি বাঁধায় কেউ রাস্তায় নামতে পারছিলো না, তখন তিনিই প্রথম বঙ্গবন্ধু এভিনিউস্থ কেন্দ্রীয় কার্যালয় হতে ৩০-৩৫ জন নেতাকর্মী নিয়ে রাজপথে নামেন এবং ব্যাপক পুলিশি নির্যাতনের শিকার হন।

ঐ মিছিল থেকে পুলিশ ১০-১২জনকে আটক করে নিয়ে যান। ঐ সময়ে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার ডাকা প্রতিটি হরতাল ও কর্মসূচিতে শত শত নেতাকর্মী নিয়ে অংশ নেন রেজাউল করিম। ২০০৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি হরতালের মিছিল হতে রেজাউলকে গ্রেপ্তার করে পুালিশ। পরে কারাভোগ শেষে জামিনে মুক্তিপান।

দলের চরম দু:সময়ে ২০০৫ সালে বৃহত্তর রমনা থানার ৫৬ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন রেজাউল করিম। ২০০৬ সালের লগি/বৈঠা আন্দোলনে কারণে শেখ হাসিনার সঙ্গে দ্রুত বিচার মামলার আসামী হন তিনি।

যার মামলা নং-৬৯। জোট সরকারের সময়ে ১২ টি রাজনৈতিক মামলায় কারাভোগ করেন এ নেতা। তৎকালীন সময়ে প্রতিদিনই পত্রপত্রিকায় রেজাউল করিমে আন্দোলনরহ ছবি ছাপা হতো।

এক-এগারো সময়ে বিশেষ বন্দি থাকাকালীন সময়ে শেখ হাসিনার মুক্তির দাবিতে রেজাউল করিমের নেতৃত্বে ৬১ হাজার ৯১৭ জনের গণস্বাক্ষর সংগ্রহ ও দলীয় দফতরে জমা দেন। বন্দি শেখ হাসিনার বিশেষ কারাগারের আশপাশে প্রতিদিন ৬০ জনের মতো নেতাকর্মী নিয়ে পাহারা দিতেন রেজাউল করিম।

তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক, প্রয়াত রাষ্ট্রতি জিল্লুর রহমান, মতিয়া চৌধুরীর সঙ্গে প্রতিটি আন্দোলনে অগ্রনি ভূমিকা রাখেন তিনি। সেনা সরকারের সময়ে আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি হিসেবে ৫৬ নং ওয়ার্ডে ভোটার কার্ড প্রস্তুতে ভূমিকা রাখেন।

২০০১ সাল হতে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দলীয় কর্মসূচি পালন ও আইনি লড়াই চালাতে গিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ হর্কাস মাকের্টেরে ৬টি দোকান ও গ্রামের প্রচুর সম্পক্তি বিক্রি করতে বাধ্য জন তিনি। যা আওয়ামী লীগের মহানগর ও কেন্দ্রীয় নেতারা অবগত আছেন।

২০০৮ সালে দল ক্ষমতায় আসার পর সিটি কর্পোরেশনের প্রতিটি নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীকে বিজয়ী করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। তৎকালীন সময়ে ৫৬ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে মনোনয়ন পত্র দাখিল করলেও শেখ হাসিনার নির্দেশে প্রত্যাহার করে নেন।

এরপর থেকেই নিজ দলের অভ্যন্তরীন রাজনীতিতে পিছিয়ে পড়েন তিনি। সুবিধাবাদী আর নব্য আওয়ামী লীগের দাপটে কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন রেজাউল করিম ও তার অনুসারীরা। দু:সময়ে মাঠ দাপড়িয়ে বেড়ানো রেজাউল করিম আস্তে আস্তে নিজ এলাকায় পরগাছা হয়ে পড়েন। প্রতিহিংসা আর ক্ষমতামুখি রাজনীতিবিদদের কবলে পড়ে ছিটকে পড়েন।

শেখ হাসিনার সিপাহসালার বিশ্বস্ত-আস্থাভাজন ও কর্মী বান্ধব এ নেতা এখন অনেকটা নিভূতে সময় কাটান। বয়সের জৌলুস না থাকলেও ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগের প্রতিটি কর্মসূচিতে অংশ নেন। কিন্তু যোগ্য মর্যাদা পাননি।

২০০৮ সালে দলে ভিড়ে অনেকে বড় নেতা হলেও রেজাউল করিম এখন পদশূণ্য। দু:সময়ে ৫৬ নং ওয়ার্ডের মতো গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটের দায়িত্ব পালন করলেও এখন তার স্থান নেই দলে। যা নিয়ে তার অনুসারীদের বুক ভরা আর্তনাত ও দীর্ঘশ্বাস।

যুবলীগ নেতা মাসুদুর রহমান বলেন, শেখ হাসিনার মুক্তি আন্দোলনে যখন কেউ নামেনি, রেজাউল ভাই আমাদের নিয়ে রাজপথে ছিলেন। প্রতিদিন আমরা পল্টন ও আশপাশে জড়ো হতাম। আজ নেতার অভাব নাই, কিন্তু রেজাউল ভাইকে প্রাপ্য সম্মান দেয়া হচ্ছে না।

বুকের ভেতরে ক্ষোভ থাকলেও থেমে নেই মুজিবপ্রেমি রেজাউল করিম। একদিনের জন্য আওয়ামী লীগের রাজনীতির বাইরে যাননি। বর্তমানে রাজনীতির পাশাপাশি সামাজিক কর্মকান্ড ও শিক্ষার উন্নয়ন কাজ করে যাচ্ছেন তিনি।

বিভিন্ন সামাজিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করছেন তিনি।পাশাপাশি ব্যবসা করছেন। করোনা সংকটে ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায় মানুষের মাঝে সুরক্ষা ও খাদ্য সামগ্রি বিতরণ করেছেন।

জানতে চাইলে মো. রেজাউল করিম বলেন, আমার নেত্রী শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করতে আজীবন কাজ করেছি। যতদিন বাঁচব নেত্রীর আর্দশ হতে বিচ্যুত হব না।

আইএনবি/এএ/জেএম