মেয়েদের তলপেটের ব্যথা কেন হয় এবং কী করণীয়

স্বাস্থ্য ডেস্ক: তলপেটে ব্যথা (Lower Abdominal Pain) মেয়েদের একটি পরিচিত সমস্যা। তবে এটা যে সব সময়ই মেয়েদের সমস্যা, তা নয়। কেননা জরায়ু, ডিম্বাশয় ছাড়াও এখানে আছে মূত্রথলি, বৃহদন্ত্রের কিছু অংশ, অ্যাপেনডিক্স। তলপেটের ব্যথা কখনো কখনো মামুলি ব্যাপার, আবার কখনো গুরুতর। তাই জেনেনিন তলপেটের ব্যথা কেন হয়, তলপেটের ব্যথা হলে কী করবেন ও তলপেট ব্যথার ট্যাবলেট বা ওষুধের নাম।

তলপেটে ব্যথা করার কারণ:
*মাসিকের সময় তলপেটে ব্যথা হওয়া স্বাভাবিক, ১০ জনে ১ জন নারীর এটা তীব্র হতে পারে। জরায়ুতে টিউমার, ফাইব্রয়েড বা এন্ডোমেট্রোসিস থাকলে ব্যথা হবে। ডিম্বাশয় থেকে ডিম্বাণু নির্গত হওয়ার সময় কারও কারও ব্যথা অনুভূত হয়।

*মেয়েদের প্রস্রাবে সংক্রমণ খুবই হয়। আর এতে তলপেটে ব্যথা হতে পারে। পাশাপাশি প্রস্রাবে জ্বালা, প্রস্রাবের সময় ব্যথা, জ্বর জ্বর ভাব থাকতে পারে।

* জরায়ু ও আশপাশে সংক্রমণ হলে তাকে পেলভিক ইনফ্লামাটরি ডিজিজ বলে। এতে তলপেটে ব্যথা, জ্বর, প্রস্রাব নির্গত হওয়া ইত্যাদি লক্ষণ দেখা যায়। অনেক সময় এ সংক্রমণ দীর্ঘমেয়াদি হতে পারে।

* অ্যাপেনডিসাইটিসের ব্যথা প্রথমে শুরু হয় নাভির চার দিকে, তারপর তা স্থায়ী হয় তলপেটের ডান দিকে। সঙ্গে বমিও হতে পারে।

*অনেক সময় ভ্রূণ জরায়ুতে স্থাপিত না হয়ে ডিম্বনালিতে স্থাপিত হয় এবং ডিম্বনালি ফেটে যায়। এটি একটি জরুরি অবস্থা। পেটে প্রচণ্ড ব্যথার পাশাপাশি পুরো তলপেটে রক্তক্ষরণের কারণে রক্তচাপ কমে যেতে পারে। কোনো কারণে ডিম্বাশয়ে রক্তপাত হলে বা সিস্ট বেঁকে গেলেও ব্যথা হয়।

এছাড়া কোষ্ঠকাঠিন্য, আইবিএস, মূত্রথলিতে পাথর ইত্যাদি নানা কারণে তলপেটে ব্যথা হতে পারে।

*তলপেটের দুই পাশে ব্যথার কারণ:
অ্যাপেন্ডিসাইটিস: সচরাচর পেটের ডানপাশে ব্যথা হওয়ার কারণ এই ‘অ্যাপেন্ডিসাইটিস’। অ্যাপেন্ডিক্স’ হল আঙ্গুলের মতো আকৃতির একটি থলে যা পেটের নিচের দিকের ডানপাশ থেকে শুরু হওয়া বৃহদান্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকে। আর এই ‘অ্যাপেন্ডিক্স’য়ের প্রদাহকেই বলা হয় ‘অ্যাপেন্ডিসাইটিস’। এই প্রদাহের সুত্রপাত হয় নাভির আশপাশে এবং ছড়িয়ে পড়তে থাকে পেটের ডান পাশের নিচের দিকে।

এই প্রদাহের কারণে বসা ও শোওয়া অবস্থায় প্রচণ্ড অস্বস্তি দেখা দেয়। আর ব্যথা শুরু হয়ে যেতে পারে কোনো কারণ ছাড়াই। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ‘অ্যাপেন্ডিক্স’ অপসারণ করাই এই সমস্যার একমাত্র সমাধান। আর তা-না করে ব্যথাকে উপেক্ষা করলে একসময় ‘অ্যাপেন্ডিক্স’ ফেটে যেতে পারে।

পেশি ব্যথা ও হার্নিয়া: প্রচণ্ড ভারী ব্যায়াম থেকেও পেটের ডানপাশে তীক্ষ্ণ ব্যথা দেখা দিতে পারে। মানুষ জোরে দৌড়ালে পেটের ‘ডায়াফ্রাম’ স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি নড়াচড়া করে, আর সেখান থেকেই ব্যথার সুত্রপাত। এছাড়াও পেশির অবসাদগ্রস্ততা, পানিশূন্যতা, ‘ইলেক্ট্রোলাইট’য়ের ভারসাম্যহীনতা ইত্যাদির কারণে পেশিতে টান পড়তে পারে এবং পেটব্যথা দেখা দিতে পারে। এই পরিস্থিতি এড়াতে প্রতিবার ব্যায়ামের আগে অবশ্যই ‘ওয়ার্ম-আপ’ করতে হবে এবং ব্যায়াম করতে হবে পরিমাণ মতো।

আবার ব্যায়ামাগারে ভারী ওজন তোলা থেকে দেখা দিতে পারে ‘হার্নিয়া’। এই রোগে শরীরের অভ্যন্তরীন একটি অঙ্গ যে পেশির সাহায্যে শরীরের সঙ্গে যুক্ত থাকে সেই পেশির উৎপত্তিস্থল দিয়ে বাইরের দিকে বেরিয়ে আসে। তাই ভারী ব্যায়াম করার সময় বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে সবসময়।

বৃক্কে পাথর: তলপেটের দুই পাশেই আছে বৃ্ক্ক। তাই বৃক্কে পাথর হলে পেটের ডানপাশে ব্যথা হবে। এছাড়াও একই কারণে ব্যথা হতে পারে পিঠের নিচের দিকে ও ‘গ্রোইন’ বা কুঁচকিতে। বৃক্কের এই পাথর মুত্রনালীর দিকে যেতে থাকলে ব্যথারও স্থান পরিবর্তন হয়। এসময় প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত আসতে পারে এবং বমিভাব হতে পারে। বৃক্কের পাথর ছোট হলে ওষুধের সাহায্যেই তা প্রস্রাবের সঙ্গে বের করে দেওয়া যায়। অন্যথায় বেছে নিতে হবে অস্ত্রোপচার।

*পেটব্যথা কমানোর উপায়
আদা বা আদা চা: প্রচীনকাল থেকেই ব্যথা কমাতে এবং বমি ভাব দূর করতে আদাকে প্রকৃতিক ওষুধ হিসেবে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এতে অ্যান্টিইনফ্লেমেটরি ও প্রদাহ বিরোধী গুণ থাকায় এটি ব্যথা কমাতে সহায়তা করে। তাই প্রকৃতিকভাবে পেটের ব্যথা কমাতে আদা কুঁচি করে অথবা চিবিয়ে খেতে পারেন।

কলা ও আপেল: কলা ও আপেলে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে। আর এ কারণে এগুলো পেটের ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে। এছাড়া এটি বমি ভাব ও ডায়রিয়াতেও উপকারী হিসেবে কাজ করে।

টোস্ট: টোস্ট বিস্কুট বা ওভারকুক করা রুটি পেট ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে। এতে তেমন কোনো তেল থাকে না। আর এ ছাড়া একটু পোড়া রুটি বা টোস্ট বমি ভাব কমাতেও সহায়তা করে।

পুদিনা পাতা: পেটের ব্যথা ও বমি ভাব কমাতে এবং পেট খারাপের জন্য অনেক সহায়ক একটি প্রাকৃতিক সমাধাণ হচ্ছে পুদিনা পাতা। এটির প্রকৃতিক ব্যথানাশক বৈশিষ্ট রয়েছে। তাই পেট ব্যথা কমানোর প্রাকৃতিক সমাধাণ হিসেবে চায়ের সঙ্গে বা চিবিয়ে পুদিনা পাতা খেতে পারেন।

অ্যাপেল সিডার ভিনেগার: অ্যাপেল সিডার ভিনেগারে অ্যাসিড স্টার্চ থাকায় তা হজম করতে সাহায্য করে অন্ত্রের ব্যকটেরিয়াকে সুস্থ রাখে। আর এ কারণে এটি পেটের ব্যথা কমাতে সহায়তা করতে পারে। এর জন্য এক কাপ পানিতে এক চামুচ অ্যাপল সিডার ভিনেগার ও এক চামুচ মধু মিশিয়ে পান করলে উপকার পাবেন।

*তলপেটে ব্যথা হলে কী করবেন
মেয়েদের তলপেটে তীব্র ব্যথাকে অবহেলা করা উচিত নয়। ব্যথার তীব্রতা ও স্থায়িত্ব বাড়তে থাকলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিন। হঠাৎ তীব্র ব্যথা হলে শেষ মাসিকের তারিখের সঙ্গে মিলিয়ে দেখুন। ডিম্বনালিতে ভ্রূণ বা গর্ভপাতের ব্যথা কি না, সচেতন হোন। প্রচুর পানি পান করবেন। প্রস্রাব আটকে রাখবেন না। রাতে ঘুমানোর আগে প্রস্রাব করে মূত্রথলি খালি করবেন। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা জরুরি।

তলপেট ব্যথার ট্যাবলেট বা ওষুধের নাম:
মাসিকের সময় প্রচণ্ড তলপেট ব্যথা হলে প্যাসিফিক ফার্মা লিমিটেডের HPR-DS Tablet-টি (500 mg) খেতে পারেন। তার সাথে গ্যাসের ট্যাবলেট খেতে হবে।

আইএনবি/বিভূঁইয়া