মানবিক কার্যক্রমে নজর কেড়েছেন তরুন নেতারা

 

নিজস্ব প্রতিবেদক
গত ৮ মার্চ দেশে করোনা ভাইরা শনাক্ত হওয়ার পর সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা অনেকটাই স্থবির হয়ে পড়ে। হতদরিদ্র, ছিন্নমূল, দিনমজুর ও অসহায় মানুষের পাশাপাশি নিম্ন-মধ্যবিত্ত আয়ের মানুষও অসহায় হয়ে পড়েছে। খাদ্য ও চিকিৎসা সংকটে দিশাহারা মানুষের পাশে জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলগুলো সেভাবে দাঁড়াতে পারেনি। রাজনৈতিক নেতাদের অনেকেই স্বেচ্ছায় কোয়ারিন্টাইনে ছিলেন।

কারণ হিসেবে দেখানো হয় বয়োজ্যেষ্ঠ। তবে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক সংগঠন, ব্যক্তি এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনেকে সারা দেশে অসহায় হয়ে পড়া এসব মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে।

এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের বেশকিছু নেতা ও তরুণ জনপ্রতিনিধি জীবনের ঝুঁকি নিয়ে শুরু থেকেই মাঠে আছেন। একইসঙ্গে দলীয় ও রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব যাচ্ছেন তারা। করোনা মোকাবিলায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে একজন করোনা যোদ্ধা হিসেবে জনগণের কাছে স্বীকৃতি পেয়েছেন তারা।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সরকারের একাধিক গোয়েন্দা সংস্থার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের নেতাদের কার্যক্রমের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। নিষ্ক্রিয় ও সক্রিয় নেতাদের কাজের তথ্য সংগ্রহ করে ভবিষ্যতে বিভিন্নপর্যায়ে দলীয় মনোনয়ন এবং পদ দেয়ার ক্ষেত্রে তাদের মূল্যায়ন করা হবে।
এরই মধ্যে জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও এসব তরুণ নেতার প্রসংশা করেছেন। করোনা পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ আর জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মাঠে কাজ করে সাধারণ মানুষের মধ্যেও আলোচিত হচ্ছেন সরকারের বেশকজন মন্ত্রী ও সাংসদ।

বিশেষ করে বেশকজন বর্ষিয়ান নেতার মৃত্যুতে আওয়ামী লীগে শোকের ছায়া নেমে এলেও এসব নেতার মধ্যে আগামী দিনের নেতৃত্বের সম্ভাবনা দেখছেন দলের সিনিয়র নেতারা। তাই তাদের উৎসাহিত করতে মাঝে মধ্যেই দলের পক্ষ থেকে ফোন করে ধন্যবাদ দেয়া হচ্ছে বলে জানা গেছে।

তাজুল ইসলাম : স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই তৃণমূল জনপ্রতিনিধিদের স্বচ্ছতা ও জবাদিহিতার আওতায় আনতে বেশ তৎপর রয়েছেন তাজুল ইসলাম।

করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরু হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে নগদ অর্থ সহায়তা, হতদরিদ্র জনসাধারণের জন্য বরাদ্দকৃত চাল আত্মসাৎ এবং স্বজনপ্রীতির মাধ্যমে উপকারভোগীদের তালিকা প্রণয়নে অনিয়মসহ বিভিন্ন অভিযোগে একশজন প্রতিনিধিকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।

এদের বিরুদ্ধে পৃথক পৃথক অভিযোগ ছিলো। অনিয়মকারী এসব জনপ্রতিনিধিকে দ্রুত বরখাস্ত করতে মন্ত্রী সর্বদাই তৎপর ছিলেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে করোনা মহামারির সময়ে সাধারণ ছুটি ছাড়াও শুক্রবার এবং শনিবার অফিস করেছেন।

শুধু তাই নয়, করোনা মহামারি শুরু হওয়ার পর থেকে তাজুল ইসলাম ঢাকা ওয়াসাকে পুরো শহরে জীবাণুনাশক পানি ছিটানোর জন্য নির্দেশ ও অসহায় মানুষের মাঝে ত্রাণ বিতরণের নির্দেশ দেন।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) ও জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরসহ অধীন সংস্থাগুলোকে ত্রাণ বিতরণের তাগিদ দেন। এসব কার্যক্রম সরেজমিন পরিদর্শনও করেন।

নির্বাচনি এলকা কুমিল্লার লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৫০ হাজার পরিবারকে নিজ অর্থে ত্রাণ সহায়তা দিয়েছেন। এলাকার ৫ হাজার অস্বচ্ছল পরিবারের মধ্যে বিকাশের মাধ্যমে ১ হাজার করে মোট ৫০ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন।

তাছাড়া নিজ এলকা ও মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, পুলিশ, সাংবাদিক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের মধ্যে পিপিইসহ ২০ লাখ টাকার সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

জাহিদ আহসান রাসেল : করোনা ভাইরাস শুরু হওয়ার পর দেশের সবকিছু থমকে গেলেও থেমে থাকেননি যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী জাহিদ আহসান রাসেল। কখনো ঢাকা আবার কখনো গাজীপুর ছোটাছুটি করে ক্রীড়াঙ্গনের সমস্যা সমাধন ও নিজ এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।

করোনার শুরু থেকেই ব্যক্তিগতভাবে লক্ষাধিক অসহায় মানুষকে খাদ্য সহায়তা প্রদান, হিজড়া সমপ্রদায়, সেলুন কর্মচারী, ফুটপাত ও রেলওয়ে স্টেশনের অসহায় ছিন্নমূল মানুষ, ইমাম-মুয়াজ্জিন এবং প্রতিবন্ধিসহ দলমত নির্বিশেষে সবাইকে প্রয়োজন অনুযায়ী সহায়তা করেছেন।

নিজ জেলা গাজীপুরের সকল সরকারি অফিস, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা, ডাক্তার ও সাংবাদিকসহ যারা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পেশাগত দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের কয়েক দফায় সুরক্ষাসামগ্রী দিয়েছেন।

চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের যাতায়াতের সুবিধার্থে গাজীপুর সিভিল সার্জন অফিস ও বঙ্গতাজ তাজউদ্দীন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ২টি মাইক্রোবাস দিয়েছেন। ডাক্তার ও নার্সদের সমন্বয়ে মোবাইল টিম গঠন করেছেন। যা মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে।

তাছাড়া করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এক হাজার ক্রীড়াবিদের জন্য ১ কোটি টাকা অনুদানের ব্যবস্থা করেছেন। দফায় দফায় সে অর্থ ক্রীড়াবিদদের হাতে তুলে দিয়েছেন তিনি। আরও তিন কোটি টাকা অসহায় ক্রীড়াবিদদের জন্য বরাদ্দ করেছে যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়।

গাজীপুরে পিসিআর ল্যাব স্থাপন, মন্ত্রণালয় ও অধিদপ্তরের মাধ্যমে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি মোকাবিলার আগাম বিভিন্ন পদক্ষেপ (প্রকল্প) গ্রহণ ও স্বেচ্ছাসেবী যুব সংগঠকদের অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। করোনায় অসহায় গরিব কৃষকদের ধান কাটাতে স্থানীয় ছাত্র ও যুব সংগঠনকে সঙ্গে নিয়ে কাজ করেছেন।

রাসেলের নির্দেশনায় গাজীপুরের টঙ্গীতে শহীদ আহসান উল্লাহ মাস্টার স্মৃতি ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে ‘রক্ত হলো স্রষ্টার দান, রক্তদানে জীবন বাঁচান’— স্লোগানে দুদিনব্যাপী রক্তদান কর্মসূচির মাধ্যমে পাওয়া ৫০০ ব্যাগ রক্ত হাসপাতাল এবং ব্লাড ব্যাংকে দিয়েছেন।

ফরহাদ হোসেন : করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরই সবচে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। ভাইরাসটির সংক্রমণ শুরুর আগে থেকেই পূর্ব প্রস্তুতি মোতাবেক কার্যক্রম করেছে মন্ত্রণালয়টি।

গোটা প্রশাসনব্যবস্থায় শৃঙ্খলা, সরকারি সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছাতে সার্বক্ষণিক একজন করোনাযোদ্ধা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছেন জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন এমপি।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, সরকারের সব মন্ত্রণালয়, বিভাগ, অধিদপ্তরের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রশাসনের কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত প্রতিটি কর্মকর্তাকে পরিস্থিতি মোকাবিলায় মাঠে নামাতে দিন-রাত কাজ করছেন মেহেরপুর-১ আসনের এ সাংসদ।

গত ৮ মার্চ করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর মাঠ প্রশাসনকে সময়ে সময়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দিয়েছেন। জুমঅ্যাপ ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত মাঠ প্রশাসনকে এলাকাভিত্তিক সমস্যা নিরূপণ ও সমাধানের উদ্যোগ নিচ্ছেন।

ভাইরাসে আক্রান্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উন্নত চিকিৎসা ও প্রণোদনার ব্যবস্থাও করেছেন। ডেঙ্গুর প্রকোপ বাড়ার শঙ্কায় সরকারি সব অফিস ও প্রতিষ্ঠান পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার নির্দেশনা দিয়েছেন।

শত ব্যস্ততার মাঝেও নিজ নির্বাচনি এলাকা ভুলে যাননি ফরহাদ হোসেন। জাতীয় স্বার্থে এলাকায় যেতে না পারলেও তার নির্দেশনায় দলীয় নেতাকর্মী ও প্রশাসনের কর্মকর্তাদের মাধ্যমে নিয়মিত খাদ্যসামগ্রী, সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

একেএম এনামুল হক শামীম : মরণ ঘাতক করোনা ভাইরাসের সংক্রমণে গোটা দেশ অবরুদ্ধ, আতঙ্কিত, তখন জীবনের সর্বোচ্চ ঝুঁকি নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন পানিসম্পদ উপমন্ত্রী ও শরীয়তপুর-২ আসনের সাংসদ একেএম এনামুল হক শামীম। তিনি একমাত্র সাংসদ, যিনি করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে সর্বোচ্চবার নিজ নির্বাচনি এলাকা সফর করেছেন এবং অবস্থানও করেছেন বেশি সময়।

গত ২৬ মার্চ অঘোষিত লকডাউন শুরুর পর থেকেই নড়িয়া-সখিপুর তথা গোটা শরীয়তপুরকে সুরক্ষিত রাখতে জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, দলীয় নেতাকর্মী, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে সমন্বিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছেন। করোনার মধ্যেই মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা হিসেবে দেখা দেয় ঘূর্ণিঝড় আম্ফান।

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানের প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত উপকূলীয় এলাকাবাসীর কাছেও ছুটে গেছেন। বেড়িবাঁধ দ্রুত মেরামতসহ ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তা করেছেন। বর্ষার আগমনকে মাথায় রেখে করোনা ঝুঁকি নিয়ে সারা দেশের ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলো পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ দিয়েছেন এবং সে অনুযায়ী কাজও চলছে।

তথ্য মতে, করোনা শুরুর পর প্রতি সপ্তাহে অন্তত দুদিন নিজের নির্বাচনি এলাকায় অবস্থান করছেন একেএম এনামুল হক শামীম। এ পর্যন্ত ২২ বার নির্বাচনি এলাকা সফর করেছেন। ব্যক্তিগতভাবে নির্বাচনি এলাকার ২৫টি ইউনিয়নে ৮ ধাপে ৫৭ হাজার পরিবারের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

নড়িয়া উপজেলা ও সখিপুর থানায় ইমাম, মুয়াজ্জিন, অস্বচ্ছল আলেম, জেলে সমপ্রদায়, চরের ভাসমান মানুষ, স্কুল-কলেজের শিক্ষক, দিনমজুর, প্রতিবন্ধী, মুচি, বেদে সম্পদ্রায় এবং ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীদের মাঝে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পক্ষে মানবিক সহায়তা হিসেবে নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাবেক এ সাংগঠনিক সম্পাদক।

তার প্রতিটি কর্মকাণ্ডে স্থানীয় আওয়ামী লীগ, সহযোগী সংগঠন ও প্রশাসনকে সম্পৃক্ত রাখা হয়। এছাড়া জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে পরিচালিতি প্রতিটি মানবিক কর্মসূচি নিজে উপস্থিত হয়ে সফল করেছেন।

জেলার ৬টি হাসপাতালে প্রায় ১২ হাজার মাস্ক ও ৩শ পিপিই বিতরণ করেছেন। নিয়মিত হাসপাতালগুলোতে অক্সিজেন সিলিন্ডার আপডেট করা, আইসোলেশন সেন্টার ঠিক রাখাসহ চিকিৎসকদের খোঁজখবর রাখছেন।

সাবেক এ ছাত্রনেতার ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক ব্রিগেড : ‘ডাক্তারের কাছে রোগী নয় রোগীর কাছে ডাক্তার’ কর্মসূচি সারা দেশে সাড়া জাগিয়েছে। প্রায় আড়াই মাস অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিসের মাধ্যমে নড়িয়া ও সখিপুরের করোনা দুর্যোগে ঘরবন্দি মানুষকে চিকিৎসাসেবা দিয়েছেন। নিজস্ব তহবিল থেকে দুটি চিকিৎসক টিম গঠন করে ঘরবন্দি মানুষকে বাড়িতে গিয়েই চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করেছেন।

ভ্রাম্যমাণ চিকিৎসক ব্রিগেড নামে পরিচালিত এ কর্মসূচির আওতায় রোগী দেখার পর ওষুধ দেয়া হচ্ছে। ভ্রাম্যমাণ দলের কাছে রোগীর জন্য প্রয়োজনীয় ওষুধ না থাকলে দেয়া হয় ওষুধ কেনার জন্য নগদ টাকা।

জানতে চাইলে পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম এমপি বলেন, আমি বঙ্গবন্ধুর আদর্শে মানবতার জননী দেশরত্ম শেখ হাসিনার কর্মী।

নেত্রীর নির্দেশনায় আমরা নির্বাচনি এলাকা নড়িয়া-সখিপুরসহ গোটা শরীয়তপুরবাসীর জন্য কাজ করছি। কতটা ঝুঁকি নিয়েছি, সেটা বুঝি না, শেখ হাসিনার কর্মী হিসেবে এটা আমার দায়িত্ব, সেটাই বুঝি। যতদিন সুস্থ আছি, জনগণের পাশে থাকবো— ইনশাল্লাহ।

মির্জা আজম : করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় নিজ নির্বাচনি এলাকা জামালপুর-৩ (মেলান্দহ-মাদারগঞ্জ) আসনের আশ্রয়স্থল হিসেবে নিজেকে মেলে ধরেছেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম এমপি।

করোনা ভাইরাসের প্রকোপ শুরুর পর প্রায় দুমাস টানা এলাকায় অবস্থান করে সর্বোচ্চ দিয়ে এলাকার অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন। অসহায় দুঃস্থদের খাদ্যসামগ্রী বিতরণ, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা, কৃষকদের ফসল ঘরে তোলা, চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিতদের সুরক্ষা নিশ্চিত করেছেন।

সরকারি ও ব্যক্তিগতভাবে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীদের মাধ্যমে প্রতিটি ওয়ার্ডে তালিকা করে নগদ অর্থ, খাদ্যসামগ্রী (ডাল, তেল, আলু, পেঁয়াজ, সাবান) করোনার সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

করোনা দুর্যোগে কর্মহীন মানুষদের সরকারি ও ব্যক্তিগত অর্থ, খাদ্য, কৃষি যন্ত্রপাতি সহায়তা ছাড়াও করোনা শনাক্তকরণের আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন নিশ্চিত করেছেন তিনি।

মায়ের নামে প্রতিষ্ঠিত নুরুন্নাহার মির্জা কাশেম মেমোরিয়াল ট্রাস্টের মাধ্যমে মাদারগঞ্জ উপজেলার ৫০০ দুঃস্থ পরিবারের মাঝে নগদ ৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছেন।

ব্যক্তিগত অর্থায়নে মাদারগঞ্জ উপজেলার ৬০৮ এবং মেলান্দহ উপজেলার ৬০৫টি মসজিদের ৩ হাজার ইমাম, মুয়াজ্জিন ও আলেমদের মাঝে ঈদ উপহার বিতরণ করেছেন।

করোনার কারণে মাঠে ফসল নিয়ে কৃষকদের বিপদে পাশে দাঁড়ান মির্জা আজম। দলীয় নেতাকর্মীদের মাধ্যমে কৃষকের ফসল ঘরে তোলাসহ কৃষি যন্ত্রপাতি বিতরণ করেন।

নির্মাণাধীন শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজে দেড় কোটি টাকা ব্যয়ে আরটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে দিয়েছেন গোটা জামালপুরবাসীকে করোনা পরীক্ষার জটিলতা থেকে মুক্ত করেছেন। আইসোলেশন সেন্টারে থাকা প্রতিটি রোগীর সাথে ব্যক্তিগতভাবে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা করেছেন।

আতিকুল ইসলাম : দেশে যখন করোনা ভাইরাস প্রথম শনাক্ত হয় তখনও দায়িত্ব গ্রহণ করেননি ঢাকার নব নির্বাচিত দুই মেয়র। তবে করোনা ভাইরাসের শুরুর দিকে ঢাকার মানুষ যখন দিশাহারা ঠিক সেই সময়ে মেয়রের চেয়ারে না থেকেও নাগরিকদের কাছে ছুটে গেছেন আতিকুল ইসলাম। প্রথম লকডাউনের সময় তার ব্যক্তিগত উদ্যোগে কর্মহীন ৬৭ হাজার পরিবারের কাছে খাদ্যসামগ্রী পৌঁছে দিয়ে প্রসংশিত হয়েছেন।

তাছাড়া ডিএনসিসির পক্ষ থেকে পাঁচ লক্ষাধিক পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন। পাশপাশি ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত মেয়র জামাল মোস্তফার সঙ্গে সমন্বয় করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেছেন।

জীবাণুনাশক স্প্রে, জনসচেতনতা তৈরি, সামাজিত দূরত্ব নিশ্চিত করা, ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রমসহ কর্পোরেশনের সার্বিক কাজ পরোক্ষভাবে তদারক করেছেন।

দায়িত্ব গ্রহণ করে নগর পরিচ্ছকদের স্বাস্থ্য সুরক্ষার কথা চিন্তা করে প্রথমেই পরিচ্ছন্নতাকর্মী ও মশককর্মীদের মধ্যে ১ হাজার জোড়া গামবুট, ৫ হাজার জোড়া উন্নত মানের লম্বা গ্লাভস, ৮ হাজার মাস্ক, ৫ হাজার স্মার্ট জ্যাকেট (স্বাস্থ্যকর্মী ও হাসপাতালসমূহের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কাজে নিয়োজিত পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের জন্য) বিতরণ করেন আতিকুল।

গত ১৮ থেকে ২৪ এপ্রিল প্রতিটি ওয়ার্ডকে ৭ ভাগে ভাগ করে সপ্তাহব্যাপী পরিচ্ছন্ন কার্যক্রম পরিচালনা করা হচ্ছে। জলবদ্ধতা নিরসনে বিশেষ ড্রেন পরিষ্কার কার্যক্রম চলছে। যেখানে ১২ জন ক্লিনার নিয়মিত কাজ করছেন।

২২ এপ্রিল থেকে ডিএনসিসির এলাকার সকল সরকারি হাসপাতাল পরিচ্ছন্নতার আওতায় আনা হয়েছে। কড়াইল, ভাষানটেক, বাউনিয়া বাঁধ ও ধামাল কোট বস্তির মোট ২৩০টি স্থানে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

করোনা সংক্রান্ত তথ্য ও পরামর্শের জন্য ডিএনসিসির নগর ভবনে একটি সার্বক্ষণিক নিয়ন্ত্রণ কক্ষ চালু করা হয়েছে। অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের কাছে ত্রাণ সহায়তা প্রেরণের জন্য ২টি হটলাইন চালু করা হয়েছে।

এছাড়া ৫টি অঞ্চলে করোনা ভাইরাসসংক্রান্ত চিকিৎসা-তথ্য ও পরামর্শসেবা চালু করা হয়েছে। করোনা ভাইরাস আক্রান্ত হয়েও উপসর্গ নিয়ে মৃত ব্যক্তির দাফনের জন্য প্রথমে ডিএনসিসির আওতাধীন খিলগাঁও-তালতলা কবরস্থান বরাদ্দ করলেও বর্তমানে রায়েরবাজার কবরস্থানে দাফন করা হচ্ছে। এখানে প্রায় ১ লাখ কবর দেয়ার ব্যবস্থা আছে।

শেখ তন্ময় : করোনার কঠিন পরিস্থিতিতে ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে নজর কেড়েছেন বাগেরহাট-২ আসনের সাংসদ শেখ তন্ময়।

সর্বশেষ তথ্য মতে, তার ব্যক্তিগত সহকারীর করোনা রিপোর্ট পজেটিভ আসার পর চিকিৎসকের পরামর্শে আইসোলেশনে রয়েছেন তিনি। করোনা ভাইরাসের প্রাদুর্ভাব শুরুর পর থেকেই নির্বাচনি এলাকার মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন তিনি। অসহায় হয়ে পড়া মানুষের মধ্যে নিয়মিত খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেছেন।

হটলাইনের মাধ্যমে ‘ডাক্তারের কাছে রোগী নয়, রোগীর কাছে ডাক্তার’ স্লোগানে নিজের সংসদীয় আসনে চিকিৎসাসেবা চালু করেন তিনি।

‘গর্ভবতী মায়েদের ঘরে পুষ্টিকর খাবার, ভবিষ্যতের কাছে বর্তমানের অঙ্গীকার’— এ স্লোগানে এক হাজার ৭০৪ জন সন্তান সম্ভবা মায়ের জন্য পুষ্টিকর খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন।

করোনার সম্মুখ যোদ্ধা চিকিৎসদের জন্য সেফটি চেম্বারও স্থাপন করেছেন। গত দুই সপ্তাহ ধরে আইসোলেশনে থাকলেও মুঠোফোনের মাধ্যমে এলাকার সার্বিক কর্মকান্ড মনিটরিং করছেন এবং সব ধরনের সেবা অব্যাহত রেখেছেন।

মাশরাফি বিন মুর্তজা : বাংলাদেশ জাীতয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা খুব অল্প সময়ে ক্রিকেট তারকা থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে জনপ্রিয়তা অর্জন করেছেন। সরকার দলীয় সাংসদ হয়েও পাক্কা রাজনীতিবিদরা যা করতে পারেননি তাই করে দেখিয়েছেন রাজনীতিতে নবীন মাশরাফি।

বিশেষ করে করোনাকালে নড়াইল-২ আসনের মানুষের জন্য তার ভূমিকা সর্বমহলে প্রসংশিত হয়েছে। সবশেষে মানুষের সেবা করতে গিয়ে নিজেই করোনা আক্রান্ত হয়েছেন। নিজ এলাকার দরিদ্র মানুষের খাদ্য, চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে নিরলসভাবে কাজ করেছেন মাশরাফি।

করোনার সময় সারা দেশে যখন বিনা চিকিৎসায় রোগীরা ফিরে যাচ্ছেন তখন তিনি ‘কাপ্তান’ নামের একটি ভ্রাম্যমাণ মেডিকেল টিম গঠন করেছেন। এর মাধ্যমে প্রত্যন্ত অঞ্চলে চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে। সদর হাসপাতালে একটি জীবাণুনাশক কক্ষ স্থাপন করেছেন। চিকিৎসকদের জন্য তৈরি করে দিয়েছেন সেফটি চেম্বারও।

এলাকার কৃষকদের জন্য ধানকাটার মেশিনের ব্যবস্থা করেছেন। জানতে চাইলে আলাপকালে আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান বলেন, তরুণ অনেক জনপ্রতিনিধিই ভালো কাজ করছেন। আবার অনেকেই এই করোনায় মানুষের পাশে ছিলেন না।

রাজনীতি যেহেতু মানুষের জন্য তাই মানুষই তাদের ভূমিকা মূল্যায়ণ করবে। করোনার এই সংকটকালে যারা মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে, গণমানুষের দল হিসাবে আওয়ামী লীগ তাদের কথা মনে রাখবে এবং অবশ্যই মূল্যায়ণ করবে।