মানবিকতায় যুবলীগের এক বছর

মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্ব দিচ্ছেন পরশ-নিখিল

আসাদুজ্জামান আজম
বাংলাদেশ আওয়ামী যুবলীগ। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই বাংলাদেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলন এবং শোষিত নির্যাতিত মানুষের কল্যাণে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছে ক্ষমতাসীন দলের এ যুব সংগঠন। নানা সময়ে কিছু ক্ষমতালোভী রাজনীতিবিদের কারণে বিতর্কের মুখে পড়েছে সংগঠনটি। বিতর্কের কালিমা মুছে প্রতিষ্ঠাকালীন আদর্শে ফিরেছে যুবলীগ। অন্যের স্বার্থ ছিনিয়ে নেয়া থেকে বেরিয়ে মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে এসেছে যুবলীগ।

সাধারণ মানুষের স্বার্থ রক্ষা করাকেই এখন যুবলীগের আদর্শ হিসেবে দেখছে সংগঠনটি। অর্থাৎ অতীতের সকল বিতর্ক পেছনে ফেলে জাতির পিতার আদর্শ বাস্তবায়নে শেখ মনির কাঙ্খিত যুবলীগ প্রতিষ্ঠা লাভের আলোর ঝলকানি এখন সংগঠনটিজুড়ে।

গত বছরের ২৩ নভেম্বর সপ্তম কংগ্রেসে যুবলীগের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন প্রতিষ্ঠাতা শেখ ফজলুল হক মনির জ্যেষ্ঠপুত্র, পরিচ্ছন্ন ও সজ্জন ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত শেখ ফজলে শামস পরশ। সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন যুবলীগের মাঠের রাজনীতির দীর্ঘ সময়ের ত্যাগী নেতা মাইনুল হোসেন খান নিখিল।

দায়িত্ব গ্রহণের পর যুবলীগের প্রতিষ্ঠাকালীন মূল উদ্দেশ্যে বাস্তবায়ণে গত ১ বছরে মানবিক রাজনীতিকে সবোর্চ্চ গুরুত্ব দিয়েছেন পরশ-নিখিল। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে যুবলীগ। বিশেষ করে বৈশ্বিক মহামারি করোনা সংকটে সারা দেশে যুবলীগের মানবিক কর্মকাণ্ড সকলের নজর কেড়েছে।

চেয়ারম্যান শেখ পরশের নির্দেশনায় মাঠপর্যায়ে সকল কর্মসূচি বাস্তবায়নে নিরলস কাজ করেছেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল। মানবিক কাজে সন্তুষ্ট হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় সংসদে যুবলীগের ভূয়সী প্রশংসা করেন।

দায়িত্ব গহণের পর যুবলীগকে আদর্শিক জায়গায় ফেরানোর দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন শীর্ষ দুই নেতা। সম্মেলনের মধ্য দিয়ে দায়িত্ব পাওয়ার পর প্রথমে দুস্থ মানুষের পাশে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন তারা। শীতবস্ত্র নিয়ে ছুটে যান শীতার্ত ও বস্তিতে পোড়া অসহায়দের পাশে।

শীতার্ত মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দিচ্ছেন যুবলীগ চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক ।

করোনা সংকটে মানবিকতার সর্বোচ্চ দৃষ্টান্ত দেখিয়েছে যুবলীগ। সারা দেশে করোনায় অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে মানবিক যুবলীগ। কেন্দ্রীয়, ঢাকা উত্তর-দক্ষিণ মহানগরসহ সব মহানগর, জেলা-উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড যুবলীগের প্রতিটি ইউনিট অসহায় মানুষকে সহায়তা করে আসছে। করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ মোকাবেলায় প্রতিটি স্তরের নেতাকর্মীদের প্রস্তুতি থাকার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

যুবলীগের মাধ্যমে সরাসরি সাড়ে ৪৩ লাখ মানুষ খাদ্যসহায়তা পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে দেয়া রমজান ও ঈদ সামগ্রী এবং ভাইরাসের সুরক্ষা সামগ্রী পেয়েছে অন্তত এক কোটি মানুষ।

দুর্যোগকালীন সময়ে মানুষের পাশে দাঁড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা আসার পরপরই সারা দেশে যুবলীগকে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে মাঠে নামার আহ্বান জানান যুবলীগ চেয়ারম্যান । মাঠপর্যায়ে কর্মসূচি বাস্তবায়নে দিনরাত জীবন ঝুঁকি নিয়ে মাঠে নামেন সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল।বেশ কয়েকবার ভিডিও বার্তার মাধ্যমে যুবলীগসহ দেশবাসীকে সচেতন করাসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার অনুরোধ করেন শেখ ফজলে শামস পরশ।

করোনা সংকটের মধ্যেই বন্যা বাংলাদেশের জন্য নতুন দুর্যোগ হয়ে দাঁড়ায়।কেন্দ্রের নির্দেশনার পর সারা দেশে বনার্তদের পাশে দাঁড়ান যুবলীগের নেতাকর্মীরা। নৌকা, ট্রলারসহ বিভিন্ন মাধ্যমে বনার্তদের সহায়তা পৌঁছে দেন যুবলীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা।

করোনা ভাইরাসের শুরুতেই সারা দেশে জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম চালায় যুবলীগ। প্রতিটি ইউনিটে মাইকিং এবং রাস্তার মোড়ে মোড়ে সচেতনতামূলক লিফলেট বিতরণ করা হয়। গত ৮ মার্চ করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে সুরক্ষাসামগ্রী মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, হেক্সিসল ও সাবান বিতরণ শুরু হয়।

২৬ মার্চ অঘোষিত লকডাউন শুরুর দিন হতেই শুরু হয় খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি। করোনার কারণে কর্মহীন হয়ে পড়া মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্ত ও হতদরিদ্র মানুষের মাঝে সারা দেশে খাদ্যসামগ্রী তুলে দেয়া হয়। শ্রমজীবী, গার্মেন্টস শ্রমিক, বিভিন্ন কারখানা শ্রমিক, রিকশা-ভ্যান চালক, প্রতিবন্ধী, অন্ধ, মুচি, হিজড়া, বেদে সম্প্রদায়সহ অসহায় মানুষকে খাদ্যসামগ্রী (চাল, ডাল, তেল, আলু, লবণ, সবজি, দুধ) ও নগদ অর্থ মানবিক সহায়তা দেয়া হয়। ট্রাক ও রিকসা ও ভ্যানে করে বস্ত্রিবাসীদের ঘরে ঘরে খাবার পৌছে দেয় যুবলীগের নেতাকর্মীরা।

শ্রমিক সংকটে অসহায় হয়ে পড়ে কৃষক। সারা দেশে কৃষকদের ধান কেটে বাড়ি তুলে দিয়ে মানবিকতার আরেক নিদর্শন দেখিয়েছে যুবলীগ।

এপ্রিলের শুরুতেই ঢাকা মহানগরের রোগীদের যাতায়াত সংকট বিবেচনা করে যুবলীগ ২৪ ঘণ্টা ফ্রি অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু করে। এরপর বিভিন্ন মহানগর ও জেলা-উপজেলা পর্যায়ে অ্যাম্বুলেন্স সার্ভিস চালু হয়।

একই সঙ্গে করোনা ভাইরাসসহ অন্যান্য রোগের নির্বিঘ্নে জরুরি চিকিৎসাসেবা পেতে সাধারণ মানুষের জন্য ২৪ ঘণ্টা টেলিমেডিসিন সেবাও চালু করে যুবলীগ। চিকিৎসাসেবায় নিয়োজিত চিকিৎসক-নার্সসহ স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্য রাজধানীর হাসপাতাল, জেলা উপজেলা হাসপাতাল, ক্লিনিক, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে সুরক্ষাসামগ্রী বিতরণ করেছে যুবলীগ।

রমজান মাসে জুড়ে কর্মসূচিতে ভিন্ন আনে যুবলীগের হাইকমান্ড। খাদ্য সামগ্রির পাশাপাশি শুরু হয় ইফতার সামগ্রি ও রান্না করা খাবার বিতরণ । পুরো মাস ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনউস্থ কেন্দ্রীয় কাযালয়, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও পান্থপথ মাঠে রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।

গত ২৮ অক্টোবর যুবলীগের সাংগঠনিক নেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭৪তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে কয়েক শতাধিক দৃষ্টিপ্রতিবন্ধি অসহায় মানুষকে নতুন কাপড়, খাবার ও নগদ অর্থ বিতরণ করা হয়। এসময় এসব অসহায় মানুষকে নিয়ে শেখ হাসিনার দীর্ঘায়ু ও সুস্বাস্থ্য কামনা করে মিলাদ ও দোয়া করা হয়।

এছাড়া মুজিববর্ষ উপলক্ষে বছরব্যাপী যুবলীগের বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে। কর্মসূটি কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যন্ত পালিত হয়েছে।

গত আগস্ট মাস জুড়ে বঙ্গবন্ধুসহ ১৫ আগস্ট নিহত সকল শহীদদের আত্মার মা্গফেরাত কামনায় মানবিক কর্মসূচি পালিত হয়। পুরো মাস কেন্দ্রীয় কাযালয়ে কোরআন খতম ও রান্না করা খাবার বিতরণ করা হয়।  মূলত হাল ধরার পর থেকেই যুবলীগকে মানবিক কর্মকাণ্ডের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে মেলে ধরেছেন বর্তমান চেয়ারম্যান ও সাধারণ সম্পাদক। 

কারোনা ভাইরাসের কঠিন পরিস্থিতিতে এক মুহূর্তও বসে থাকেননি শেখ পরশ। ভার্চুয়াল মাধ্যম ব্যবহার করে প্রতিনিয়ত মাঠপর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। কর্মসূচি বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা এবং অর্থ-সহায়তা দিচ্ছেন। ওয়ার্ড পর্যায়ের নেতাদেরও খোঁজ খবর নিচ্ছেন।

ক্যাসিনোকাণ্ডের পর অতি সতর্কতা অবলম্বন করে প্রতিটি কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছেন শীর্ষ দুই নেতা। অথচ যুবলীগের পেছনে লেগে থাকা অপশক্তি এখনো যুবলীগকে বিভ্রান্ত করার অপচেস্টা করছেন বলে সূত্র জানা গেছে। কোন ধরণের ইস্যু না পেয়ে নাম স্বর্বস অনলাইনে উদ্দেশ্যে মূলত সংবাদ পরিবেশন করাচ্ছেন।

যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হোসেন খান নিখিল বলেন, জাতির পিতার কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়তে আমরা মানবিক কর্মকাণ্ডকে গুরুত্ব দিয়েছি। গত এক বছর মানবিক কাজে প্রতিটি নেতাকর্মীকে সম্পৃক্ত করার চেস্টা করেছি।