মহানন্দায় ড্রেজিং-রাবার ড্যাম প্রকল্প দেড় বছরেও শুরু হয়নি নির্মাণকাজ

আসাদুজ্জামান আজম

মহানন্দায় ড্রেজিং-রাবার ড্যাম প্রকল্প দেড় বছরেও শুরু হয়নি নির্মাণকাজ
অনুমোদনের পর দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও এখনো শুরু হয়নি চাঁপাইনবাবগঞ্জের মহানন্দায় ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম নির্মাণ। যার কারণে প্রকল্পটি ঘিরে নতুন স্বপ্ন বুনতে শুরু করলেও অঞ্চলটির হাজারো পরিবার এখনো অন্ধকারে। তবে বিভিন্ন প্রক্রিয়া শেষে খুব শিগগিরই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন শুরু হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

তথ্য মতে, ফারাক্কা বাঁধের বিরূপ প্রভাব, ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার, বার্ষিক বৃষ্টির পরিমাণ কমে যাওয়া ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বরেন্দ্র অঞ্চলসহ বিভিন্ন এলাকা পানিশূন্য থাকে বছরের বেশির ভাগ সময়। এ কারণে অঞ্চলটির কৃষিকাজ বাধাগ্রস্ত হয়। সমস্যা কাটিয়ে উঠতে নদীতে পানিপ্রবাহ ও সেচকাজে পানি ব্যবহার নিশ্চিত করতে মহানন্দার ওপর রাবার ড্যাম নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল দীর্ঘ দিনের। এর প্রেক্ষিতে ২০১১ সালের ২৩ এপ্রিল চাঁপাইনবাবগঞ্জ সফরে এসে মহানন্দা নদীতে রাবার ড্যাম নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পর প্রকল্প হাতে নেয় পানি উন্নয়ন বোর্ড। এরপর সম্ভাব্যতা সমীক্ষার জন্য দায়িত্ব দেয়া হয় ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার মডেলিং (আইডাব্লিউএম)। প্রায় আড়াই বছর ধরে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা শেষে প্রায় ১৫১ কোটি টাকার একটি খসড়া নকশা প্রণয়ন করে আইডাব্লিউএম।

পরবর্তীতে গত ২০১৭ সালের আগস্ট মাসে প্রকল্প মূল্যায়ন কমিটির (পিইসি) সভায় ১৬০ কোটি টাকা ব্যয়ে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সুপারিশ করে। গত বছরের ১৬ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রীর সভাপতিত্বে একনেকে প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়।

প্রকল্প অনুযায়ী, রাবার ড্যাম নির্মাণের জন্য চাঁপাইনবাবগঞ্জ শহরের উপকণ্ঠ রেহাইচর এলাকায় অবস্থিত বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতুর আধা কিলোমিটার ভাটিতে স্থান নির্বাচন করে আইডাব্লিউএম। ৩৫৩ মিটার দৈর্ঘ্যের এ রাবার ড্যামের উজান ও ভাটিতে ৩৬ কিলোমিটার এলাকায় ড্রেজিং করে নদী খনন করার কথা রয়েছে। এর মধ্যে উজানে ১০ কিলোমিটার ও ভাটি এলাকায় ২৬ কিলোমিটার নদী ড্রেজিং করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে এটাই হবে দেশের সবচেয়ে বড় রাবার ড্যাম। এর ফলে নদী তীরবর্তী আট হাজার হেক্টর জমি সেচের আওতায় আসবে। যা জাতীয় অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখবে।

এদিকে, প্রকল্প অনুমোদনের পর প্রায় দেড় বছর পেরিয়ে গেলেও র্যাবার ড্যাম প্রকল্প এখনো কাগজেই রয়ে গেছে। বেশ কয়েকবার খসড়া নকশার ছোটখাটো পরিবর্তন শেষে ২০১৭ সালের শুরুর দিকে অনুমোদন পায় রাবার ড্যাম প্রকল্প। এরপর বিগত হয়েছে দেড় বছরেরও বেশি সময়। এ সময়ে প্রকল্প পরিচালক, নকশা পরিবর্তনসহ নানা কারণে শুরু করা যায়নি কাজ।

চাঁপাইনবাগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র মতে, প্রকল্পটি পাস হওয়ার পর অর্থ কোর্ডসহ আনুষাঙ্গিক কাজে দুইমাস পার হয়েছে। প্রকল্প পরিচালক পরিবর্তন হলে থমকে যায় কিছু দিন। এরপর নতুন পরিচালক আসার পর ডিপিএম হবে না ওটিএম হবে, এ সিদ্ধান্ত এসেছে আরও দুমাস পরে। মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী নদী ড্রেজিং কাজ সরাসরি ক্রয় পদ্ধতির (ডিপিএম) এবং রাবার ড্যাম নির্মাণে ওপেন টেন্ডার নোটিস (ওটিএম) পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়।

বাপউবো সূত্র মতে, প্রকল্পটি ডিজাউনে আবারো বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। নদীর নাব্যর কারণে নতুন করে প্রকল্পটি তৈরি করা হয়েছে, যার কারণে সিডিউল পরিবর্তন হয়েছে। এখন প্রকল্পটির টেন্ডার আহ্বান করা হয়েছে। ঠিকাদার নিয়োগ সংক্রান্ত কাজ শেষ করে, চূড়ান্ত অনুমোদনের জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।

চাঁপাইনবাগঞ্জ জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী সৈয়দ সাহিদুল আলম বলেন, নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে নদী ড্রেজিং কাজ শুরু হয়েছে। এখন ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়াধীন, আশা করছি শিগগিরই রাবার ড্যাম নির্মাণের মূল কাজ দৃশ্যমান হবে।

মহানন্দায় ড্রেজিং ও রাবার ড্যাম নির্মাণ প্রকল্প পরিচালক আমিরুল ইসলাম  বলেন, রাবার ড্যাম একটা বড় কাজ। গত ১৯ ডিসেম্বর টেন্ডার আহ্বান করা হয়। বাছাই প্রক্রিয়া শেষে ঠিকাদার নিয়োগের কাজ চূড়ান্ত করার জন্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এখন সিসিডিপি হয়ে সিদ্ধান্ত আসবে। সিসিডিপি থেকে সিদ্ধান্ত আসার পর দ্রুত নির্মাণকাজ শুরু হবে বলে আশা করছি।