ভাঙন কবলে তিস্তার দু’পাড়, ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ

আসাদুজ্জামান আজম
প্রতিনিয়ত ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে তিস্তা নদীর উপর বাসিন্দারা। নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে নতুন নতুন এলাকা ভাঙ্গনের হুমকিতে পড়েছে স্থানীয়দের বসতভিটা, মসজিদ-মন্দির, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, ক্লিনিকসহ বিভিন্ন স্থাপনা নদীতে বিলীন হচ্ছে। এ অবস্থায় তিস্তা ব্যারাজ ও নদীর দুইপাড় ভাঙনের কবল থেকে সুরক্ষার জন্য পানিপ্রবাহের চ্যানেল তৈরি, জমা হওয়া বালুর পরিমাণ ও উত্তোলনের জন্য উপযুক্ত স্থান ব্লকভিত্তিক নির্ধারণ করে বালুমহাল ঘোষণার উদ্যোগ নিতে নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। সম্প্রতি লালমনিরহাট জেলা প্রশাসককে মন্ত্রিপরিষদের উপসচিব মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম ভূঁইয়া স্বাক্ষরিত চিঠিতে এই নির্দেশনা দেয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, মন্ত্রিপরিষদ সচিব লালমনিরহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজ ও তৎসংলগ্ন এলাকা পরিদর্শন করেন। পরিদর্শনকালে তিস্তার ভাঙন রোধ, পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা এবং জমাকৃত বালি-পলি অপসারণের বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য এবং পানি উন্নয়ন বোর্ড ও স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
পরিদর্শনে দেখা যায় যে, তিস্তার বিস্তীর্ণ এলাকায় পলি পড়ে নদীর স্বাভাবিক গতিপথ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। বর্ষা মৌসুমে অতিবর্ষণ ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে নদীর দুই কূলের বিশাল এলাকায় ভাঙনসহ প্লাবিত হয়। স্থানীয় অধিবাসীরা প্রায়ই বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হয়ে দুর্ভোগের কবলে পতিত হন। এই ভাঙন রোধে তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে জমে উঠা বিশাল চর সার্ভে করাসহ নদীতে চ্যানেল তৈরি করে পানিপ্রবাহ স্বাভাবিক রাখা প্রয়োজন।

এ ছাড়া তিস্তা ব্যারাজ ও নদীর দুইপাড় ভাঙন থেকে সুরক্ষার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রকৌশলগত সহায়তা নিয়ে নদীতে পানিপ্রবাহের জন্য চ্যানেল তৈরি, জমাকৃত বালু পরিমাপ ও উত্তোলনের জন্য উপযুক্ত স্থানসমূহ ব্লকভিত্তিক নির্ধারণ করে বালুমহাল ঘোষণার কার্যকর উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন।
পানি সম্পদ মন্ত্রনালয়ের তথ্য মতে, ভারতের সিকিম ও পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার পর লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার দহগ্রাম দিয়ে প্রবেশ করেছে তিস্তা নদী। যা লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে কুড়িগ্রামের চিলমারী বন্দর হয়ে ব্রহ্মপুত্র নদের সঙ্গে মিশে যায়। দৈর্ঘ্য প্রায় ৩১৫ কিলোমিটার হলেও বাংলাদেশ অংশে রয়েছে প্রায় ১২৫ কিলোমিটার। তবে ভারতের গজলডোবায় বাঁধ নির্মাণের মাধ্যমে ভারত সরকার একতরফা তিস্তার পানি নিয়ন্ত্রণ করায় শীতের আগেই বাংলাদেশ অংশে তিস্তা মরুভূমিতে পরিণত হয়। অপর দিকে বর্ষা মৌসুমে অতিরিক্ত পানিপ্রবাহের ফলে বাংলাদেশ অংশে ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। বন্যায় সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় তিস্তার বাম তীরের জেলা লালমনিরহাট।
তিস্তা নদী জন্মলগ্ন থেকে খনন না করায় পলি পড়ে ভরাট হয়েছে নদীর তলদেশ। ফলে পানি প্রবাহের পথ না পেয়ে বর্ষাকালে উজানের ঢেউয়ে লালমনিরহাটসহ ৫টি জেলায় ভয়াবহ বন্যার সৃষ্টি হয়। এ সময় নদীভাঙনও বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এর মধ্যে প্রতি বছরই নদী পরিবর্তন করছে তার গতিপথ। ফলে লালমনিরহাটে বিস্তীর্ণ জমি বালুময় চরাঞ্চলে পরিণত হচ্ছে। বর্ষায় ভয়াবহ বন্যার ধকল কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই ভাঙন আতঙ্কে পড়ে তিস্তাপাড়ের বাসিন্দারা।
জানতে চাইলে লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মো: আবু জাফর আইএনবিকে বলেন,মন্ত্রিপরিষদের চিঠি পাবার পর পানি উন্নয়নে বোর্ডের সঙ্গে কথা বলছি। ভাঙন রোধে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা চিহ্নিত এবং প্রবাহ ঠিক রাখতে কোথায় বালু মহাল ঘোষনা করা হবে। পরে বালু কিভাবে বিক্রি করা হবে। মুল কথা চিঠির নির্দেশনা মোতাবেক কাজ করা হচ্ছে।