‘বিপজ্জনক হয়ে উঠছেন পুতিন

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:ইউক্রেনে চলতি বছরের গত ২৪ ফেব্রুয়ারি সামরিক অভিযানের ঘোষণা দেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এরপর আজ বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত টানা দেশ দুইটির মধ্যে চলছে সংঘাত। এতে দুই পক্ষের বহু হতাহতের খবর পাওয়া যাচ্ছে। শিগগিরই কিয়েভ দখল ও সেখানে পুতুল সরকার বসানোর প্রয়াস নিয়ে পুতিন ইউক্রেনে যে আগ্রাসন শুরু করেছিলেন তা এখন পর্যন্ত অধরা। ইউক্রেনের বেশ কিছু দখল করে নিলেও সম্প্রতি ইউক্রেনের বাহিনীর তীব্র পাল্টা আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হচ্ছে রুশ বাহিনী। এছাড়া ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া প্রবল সেনা সংকটে ভুগছে বলে দাবি পশ্চিমা বিশ্বের।

সম্প্রতি ব্রিটিশ সংবাদ মাধ্যম বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়া দেশটির কয়েদিদের পাঠানোর জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। রিপোর্ট, রাশিয়ার কারাগারগুলোতে আটক অপরাধীদের ইউক্রেন যুদ্ধে পাঠনোর বিষয়টিকে সমর্থন করেছেন দেশটির একটি ভাড়াটে গ্রুপের প্রধান ইয়েভগেনি প্রিগোজিন। রাশিয়ায় ওয়াগনার গ্রুপ নামে একটি ভাড়াটে সৈন্য দলের প্রধান হচ্ছে ইয়েভগেনি প্রিগোজিন।

সম্প্রতি প্রকাশিত হওয়া এক ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, তিনি সৈন্য ভাড়া করার জন্য রাশিয়ার একটি কারাগারে যান। সেখানে তিনি বলেছেন, যারা যুদ্ধে যেতে চায় না, তাদের উচিত হবে তাদের সন্তানদের যুদ্ধে পাঠানো।

ফাঁস হয়ে যাওয়া ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, কারাগারে গিয়ে ইয়েভগেনি প্রিগোজিন বন্দিদের উদ্দেশে বলছেন, যারা তার গ্রুপের জন্য ছয়মাস কাজ করবে তাদের মুক্ত করে দেওয়া হবে।

এছাড়া আল-জাজিরা ও রয়টার্স জানিয়েছে, রাশিয়া নতুন করে চুক্তিতে সেনা নিয়োগ দিচ্ছে। এতে বিদেশিরাও যোগ দিতে পারবেন। খবরে বলা হয়েছে, রাশিয়া ইউক্রেনে বিশেষ অভিযানের জন্য চুক্তিতে সেনা নিয়োগ দিচ্ছে। বেতন হিসেবে প্রতিমাসে নিয়োগপ্রাপ্ত সেনারা পাবেন অন্তত তিন হাজার মার্কিন ডলার যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় তিন লাখ টাকা।

রাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, গ্রেফতার হাজারেরও বেশিরাশিয়ায় যুদ্ধবিরোধী বিক্ষোভ, গ্রেফতার হাজারেরও বেশি নিয়োগের শর্ত হিসেবে বলা হয়, ১৮ থেকে ৬০ বছর বয়সী রুশ ও বিদেশিরা যারা অন্তত উচ্চ-মাধ্যমিক পাশ তারা এই নিয়োগের জন্য প্রযোজ্য হবেন।

রাশিয়ার এমন কার্যকলাপে ইউক্রেনে দেশটি যে সেনা সংকটে ভুগছে তা ক্রমেই প্রতীয়মান হয়ে উঠছে বলে দাবি বিশেষজ্ঞদের। তবে পুতিন যে সহজে ইউক্রেনে তার ব্যর্থতা মেনে নেবেন না-এটা তাকে আরও বিপজ্জনক করে তুলবে বলে শঙ্কা।

এরই মধ্যে পুতিন গতকাল বুধবার দেশটিতে ‘আংশিক সেনা সমাবেশ’ করার ঘোষণা দিয়েছেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এই প্রথম রাশিয়া এ ধরনের সেনা সমাবেশ করতে যাচ্ছে।

টেলিভিশনে দেওয়া ভাষণে পুতিন বলেছেন, ইউক্রেন যুদ্ধ ও তার পশ্চিমা সমর্থকদের বিরুদ্ধে জিততে অতিরিক্ত জনবল দরকার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আংশিক সেনা সমাবেশে তিন লাখ রিজার্ভ সেনাকে ডাকা হবে।

পুতিন বলেন, আমাদের মাতৃভূমি, এর সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষা করতে, নাগরিকদের ও স্বাধীন অঞ্চলে আমাদের জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই সেনা সমাবেশ।

সেনা সমাবেশের নির্দেশ পুতিনেরসেনা সমাবেশের নির্দেশ পুতিনের পুতিনের এই নির্দেশনায় ইউক্রেনে যুদ্ধ আরও তীব্র হয়ে উঠবে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষকরা। গতকাল পুতিন পশ্চিমাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেছেন, তারা (পশ্চিমারা) যদি ‘পারমাণবিক ব্ল্যাকমেল’ অব্যাহত রাখে, তাহলে রাশিয়া তাদের অস্ত্রের বিশাল মজুতের শক্তি দিয়েই তার জবাব দেবে।

রুশ প্রেসিডেন্টের এমন ঘোষণার পর অনেক দেশই এর কড়া সমালোচনা ও শঙ্কা প্রকাশ করেছেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, তার বিশ্বাস হয় না বিশ্ব পুতিনকে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে দেবে।

মার্কিন নেতৃত্বাধীন পশ্চিমাদের সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান প্রধান ইয়েনস স্টলটেনবার্গ বলেন, পুতিনের সেনা সমাবেশ একটি বিপজ্জনক ও বেপরোয়া পারমাণবিক বাগাড়ম্বরপূর্ণ উক্তি।

যুক্তরাজ্যের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, পুতিনের এমন ভাষণ ইউক্রেনের যুদ্ধে সহিংসতা উদ্বেগজনকভাবে বৃদ্ধির ইঙ্গিত। পুতিনের এই হুমকি গুরুত্বসহকারে নেওয়া উচিত।

এদিকে মার্কিন সিনিয়র এক কর্মকর্তা বলেছেন, রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের পরমাণু অস্ত্র ব্যবহার করার ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ হুমকি গুরুত্ব সহকারে নিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

পুতিনের এমন হুমকির পর আলোচনার মাধ্যমের ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে চীন। একইসঙ্গে জার্মানি পুতিনের এই ভাষণের কড়া সমালোচনা করেছে। জার্মানির ভাইস চ্যান্সেলর রবার্ট হেবেক বলেছেন, রাশিয়ার থেকে আরও একটি খারাপ ও ভুল পদক্ষেপ।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের নির্বাহী বলেন, পুতিনের আংশিক সেনা সমাবেশের ডিক্রি প্রমাণ করেছে তিনি মরিয়া ও বেপরোয়া হয়ে আছেন এবং শুধুমাত্র সংকট বাড়াতে চাইছেন।

এছাড়া এস্তোনিয়া, নেদারল্যান্ডস, লাটভিয়া, চেক প্রজাতন্ত্র, মলদোভা, লিথুয়ানিয়া, রোমানিয়া পুতিনের এই ভাষণের সমালোচনা করেছেন এবং ইউক্রেনে যুদ্ধ বৃদ্ধির শঙ্কা জানিয়েছে। বিবিসি, সিএনএন, আল-জাজিরা

আইএনবি/বিভূঁইয়া