ইরানে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে লেখককে মৃত্যুদণ্ড

আন্তর্জাতিক ডেস্ক: টাইমস নাও নিউজের এক প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে যে, ইরানের ভিন্নমতাবলম্বী লেখক ও চিত্রশিল্পী মেহেদি বাহমানকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তেহরানের একটি ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, গত এপ্রিলে ইসরায়েলি টেলিভিশন ‘চ্যানেল ১৩’ এ একটি সাক্ষাৎকার দেন মেহেদি। ওই সাক্ষাৎকারে তিনি তেহরান সরকারের সমালোচনা করেন এবং ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার আহ্বান জানান।

গত সেপ্টেম্বরে পুলিশ হেফাজতে কুর্দি তরুণী মাহশা আমিনির মৃত্যুর পর ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয়। সরকার বিরোধী এই বিক্ষোভ ক্রমেই ব্যাপক আকার ধারণ করেছে। এরই মধ্যে মেহেদির মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি সামনে এসেছে।

মেহেদি তার সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন, গ্রেফতার হওয়ার ভয় নেই তার। কিন্তু তার সাক্ষাৎকার প্রচারের পর গত অক্টোবরের শেষের দিকে ইরানি কর্তৃপক্ষ তাকে গ্রেফতার করে।

ইরানের ভিন্নমতাবলম্বী লেখক ও চিত্রশিল্পী মেহেদি বাহমানকে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগে তেহরানের একটি ট্রাইব্যুনাল মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে।

চলমান বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার জন্য তেহরান ইতোমধ্যে ১১ বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড দিয়েছে। ইতোমধ্যেই দুই বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। গত ডিসেম্বরে মহসেন সেকারি ও মজিদ রেজা রহনাওয়ার্দ নামে দুই প্রতিবাদীকে ফাঁসি দেওয়া হয়।

এছাড়া তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এই বিক্ষোভে অংশ নেওয়ায় শতাধিক আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। শতাধিক বিক্ষোভকারীর মৃত্যুদণ্ড হতে পারে বলে আশঙ্কা করছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো।

ইরানের মানবাধিকার সংস্থা এইচআরএএন এর তথ্য অনুযায়ী, ইরানের বিক্ষোভে ৬৯ শিশুসহ ৫০০ জনের বেশি বিক্ষোভকারী নিহত হয়েছেন। হাজার হাজার বিক্ষোভকারীকে গ্রেফতার করা হয়।

ইরানের রাজধানী তেহরানের আশেপাশে ৪০০ বিক্ষোভকারীকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেককে ১০ বছরের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। দেশটির তেহরান প্রদেশের বিচার বিভাগের প্রধান আলী আলঘাসি মেহর জানান, বিচারকরা দাঙ্গাকারীদের শাস্তি দেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয় জানিয়েছে, ইরানের বিক্ষোভে ৪০ শিশুসহ ৩০০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছেন। সম্প্রতি ভিন্নমত দমনে আদালত কর্তৃক প্রতিবাদকারীদের ফাঁসি কার্যকর করা হয়েছে।

মেহেদি প্রায়ই তার লেখায় ধর্মীয় সহাবস্থানের কথা বলেন। তিনি শিয়া ধর্মগুরু মাসুমি তেহরানির সঙ্গে বিভিন্ন ধর্মীয় চিত্রকর্ম তৈরি করতে কাজ করেছিলেন। মাসুমি তেহরানিকেও গ্রেফতার করেছে ইরানি কর্তৃপক্ষ। ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর এটিই ইরানে দীর্ঘতম সরকার বিরোধী বিক্ষোভ।

হিজাব নীতি অনুসরণ না করার জন্য ২২ বছর বয়সী মাহশা আমিনিকে ইরানের নীতি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। পরে পুলিশ হেফাজতে তার মৃত্যু হয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর থেকে ইরানে বিক্ষোভ শুরু হয়। এর নেতৃত্বে রয়েছে নারীরা।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলা হচ্ছে, দেশে ১৯৭৯ সালের ইসলামী বিপ্লবের পর দীর্ঘদিন ধরে চলা সরকার বিরোধী বিক্ষোভ দেশটির শাসন ব্যবস্থাকে নাড়া দিয়েছে। ইরানের শাসক গোষ্ঠী বিক্ষোভকে ‘দাঙ্গা’ বলে অভিহিত করেছে।

আইএনবি/বিভূঁইয়া