নারী দিবস অথবা নববর্ষে..

বিনোদন ডেস্ক: নারী পোশাক শ্রমিকদের নিয়ে চলচ্চিত্র ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। গত বছর টরন্টো ইন্টারন্যাশনাল ফিল্ম ফেস্টিভ্যাল দিয়ে শুরু হয় ছবিটির আন্তর্জাতিক প্রদর্শন পর্ব।
বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় হোম ভিডিও প্ল্যাটফর্ম ক্রাইটেরিয়ন কালেকশনের চলচ্চিত্র সাময়িকী ‘দ্য কারেন্ট’-এর তালিকার শীর্ষ দশে স্থান পেয়েছে বাংলাদেশের ছবি ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’। ইতোমধ্যে পেয়েছে পাঁচটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার। গত বছর ৪ ডিসেম্বর ফ্রান্সে মুক্তির পর এ পর্যন্ত ৬৪টি প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়েছে ছবিটি। এরইমধ্যে ডেনমার্ক ও পর্তুগালে মুক্তি পেয়েছে। সামনে মুক্তি পাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, পোল্যান্ড ও জাপানে।

সুখবর হলো, বিদেশে তুমুল প্রশংসিত ছবিটি এবার মুক্তি পাচ্ছে নিজ দেশে। খবরটি নিশ্চিত করেছেন এর নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেন। যিনি আগেও নিজের জাত চিনিয়েছেন ‘মেহেরজান’ আর ‘আন্ডার কনস্ট্রাকশন’ ছবিতে।

নতুন ছবিটি দেশে মুক্তি দেওয়া প্রসঙ্গে রুবাইয়াত হোসেন বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ (১৪ এপ্রিল) উপলক্ষে ছবিটি মুক্তির পরিকল্পনা করছি আমরা। তবে এখনও চূড়ান্ত নয়। কারণ, তার আগেই আরেকটি বিশেষ দিবস আছে। ৮ মার্চ, নারী দিবস। আমি মূলত এই দিবসে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করছি। কারণ, ছবিটা নারীর ক্ষমতায়ন নিয়ে। সেটি না পারলে, পহেলা বৈশাখে চলে যাবো।’

ছবিটির প্রেক্ষাপট খুঁজে পাওয়া প্রসঙ্গে নির্মাতা জানান, ডালিয়া আক্তার নামের একজন নারী পোশাক শ্রমিক নেতার জীবন থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে নির্মিত হয়েছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’।
নির্মাতা রুবাইয়াত হোসেনরুবাইয়াত বলেন, ‘বাংলাদেশ এখন মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এর পেছনে বাংলাদেশের নারী পোশাক শ্রমিকদের অবদান অন্যতম। সে কারণেই পর পর দুটি ছবিতে আমি সেই নারী শ্রমিকদের সংগ্রাম আর ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প বলার চেষ্টা করেছি। শ্রমিকদের ওপর বৈশ্বিক শোষণের বাস্তবতায় বাংলাদেশের নারী পোশাক শ্রমিকদের এই গল্প অনুপ্রেরণার, পরিবর্তনের, অগ্রসরের। ছবিটির মাধ্যমে বাংলাদেশকে ইতিবাচকভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি।’

ফ্রান্স, ডেনমার্ক, পর্তুগাল ও বাংলাদেশের যৌথ প্রযোজনায় নির্মিত এই চলচ্চিত্রের মূল অর্থায়ন এসেছে ফ্রান্স সরকারের সিএনসি ফান্ড, নরওয়ে সরকার প্রদত্ত সোরফন্ড প্লাস, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন প্রদত্ত ইউরিমাজ ফান্ড ও ডেনমার্কের ড্যানিশ ফিল্ম ইনস্টিটিউট ফান্ড থেকে। এছাড়াও লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবের ওপেন ডোরস-এ অংশ নিয়ে এই ছবি চিত্রনাট্যের জন্য জিতে নিয়েছে আর্টে ইন্টারন্যাশনালের নগদ পুরস্কার।

অনুদান ছাড়াও ছবিটির পরিবেশক ও আন্তর্জাতিক বিক্রয় প্রতিনিধি ফ্রান্সের শীর্ষস্থানীয় পরিবেশক পিরামিড ফিল্মস অর্থ বিনিয়োগ করেছে এতে।

নির্মাতা জানান, ২০১৬ সালের লোকার্নো চলচ্চিত্র উৎসবে ওপেন ডোরস ল্যাবে অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে শুরু হয় ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’-এর স্ক্রিপ্ট ডেভেলপমেন্টের কাজ। এরপর ২০১৭ সালে বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবের স্ক্রিপ্ট স্টেশন, হংকং ফিল্ম ফাইন্যানসিং ফোরাম ও লোকার্নো ওপেন ডোরস হাবে অংশগ্রহণ করে চিত্রনাট্যের কাজ চূড়ান্ত করার পাশাপাশি চলে অর্থায়নের কাজ।

‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ সিনেমার মূল চরিত্রে অভিনয় করেছেন রিকিতা নন্দিনী শিমু, দীপান্বিতা মার্টিন, মায়াবী মায়া, নভেরা রহমান ও পারভীন পারু। আরও রয়েছেন মুস্তাফা মনোয়ার, শতাব্দী ওয়াদুদ, জয়রাজ, মোমেনা চৌধুরী, ওয়াহিদা মল্লিক জলি ও সামিনা লুৎফা। এছাড়া দুটি অতিথি চরিত্রে অভিনয় করেছেন মিতা চৌধুরী ও ভারতের শাহানা গোস্বামী।

ছবিটির আরেকটি দৃশ্যছবিটির মূল কুশলীদের মধ্যে রয়েছে চিত্রগ্রহণে ফরাসি চিত্রগ্রাহক সাবিন ল্যাঞ্চেলিন ও বারাকাত হোসেন পলাশ, শব্দগ্রহণে এলিশা আলবার্ট, শিল্প নির্দেশনায় ভারতের জোনাকি ভট্টাচার্য ও গ্যাফার হিসাবে পাওলো ডি সিলভা। সহকারী পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন রাজিব রাফি ও মাহদি হাসান এবং এক্সিকিউটিভ প্রোডিউসার আদনান ইমতিয়াজ আহমেদ ও অং রাখাইন।

ছবিটির মূল প্রযোজক ফ্রঁসোয়া দ্যা’ আক্তেমেয়ার (ফ্রান্স) ও আশিক মোস্তফা (বাংলাদেশ) এবং যৌথ প্রযোজক হিসাবে আছেন পিটার হায়েল্ডাল (ডেনমার্ক) ও পেদ্রো বোর্হেস (পর্তুগাল)।

বাংলাদেশের খনা টকিজ ও ফ্রান্সের লা ফিল্মস দি এপ্রেস-মিডি-এর ব্যানারে নির্মিত হয়েছে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’।
বাংলা ট্রিবিউন

আইএনবি/বিভূঁইয়া