টেকনাফে দুই লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার

আইএনবি ডেস্ক: বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে পার্শ্ববর্তী দেশ মিয়ানমার থেকে আসছে ইয়াবার বড় চালান। ইয়াবার এসব বড় চালানগুলো মাছ ধরার ট্রলারে করে টেকনাফের শাহপরীর দ্বীপ, সাবরাং, শামলাপুর, মহেষখালীয়া পাড়া ঘাট, উখিয়ার ইনানী সৈকত পয়েন্ট এবং কক্সবাজারে ঢুকে যাচ্ছে। সম্প্রতি কোস্টগার্ড সাগরে অভিযান চালিয়ে ইয়াবার বেশ কয়েকটি বড় চালান উদ্ধার করেছে। বিজিবিও সীমান্তে ঢুকে পড়ার সময় ইয়াবার কয়েকটি বড় চালান জব্দ করেছে।

গতকাল বুধবার সেন্ট মার্টিনস ছেড়াদ্বীপের অদূরে বঙ্গোপসাগরে অভিযান চালিয়ে ২ লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে কোস্ট গার্ড। এ সময় ইয়াবা পাচারে জড়িত একটি মাছ ধরার ট্রলারও জব্দ করা হয়েছে। পাচারকারীরা সাগরে ঝাঁপ দিয়ে সাঁতরে মিয়ানমারের দিকে পালিয়ে যাওয়ায় তাদের আটক করা সম্ভব হয়নি বলে জানান কোস্টগার্ড।

কোস্ট গার্ড সূত্রে জানা যায়, মিয়ানমার থেকে সাগরপথে ইয়াবার একটি বড় চালান বাংলাদেশে আসতে পারে এমন গোপন সংবাদে কোস্টগার্ড সেন্ট মার্টিনস ছেড়াদ্বীপ সংলগ্ন সাগরে টহল জোরদার করে। এ সময় মিয়ানমারের দিক থেকে আসা একটি ট্রলার কোস্টগার্ডের টহল লক্ষ্য করে দ্রুত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে। কোস্টগার্ড সন্দেহজনক ওই ট্রলারটি ধাওয়া করে আটক করতে সক্ষম হয়। পরে ট্রলারে তল্লাশি চালিয়ে দুই লাখ ৭০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে।

সাগর ও নদীপথে ইয়াবা পাচার বন্ধে গত চার বছর ধরে টেকনাফের নাফনদে জেলেদের মাছধরা বন্ধ থাকলেও তাতে কোনো ধরনের সুফল মিলছে না। ইয়াবা পাচারকারীরা এখন নাফনদ বাদ দিয়ে বঙ্গোপসাগর হয়ে ইয়াবার চালান পাচার করছে। এক্ষেত্রে ইয়াবা পাচারকারীরা সেন্ট মার্টিনস সংলগ্ন দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর রৌট টি ইয়াবার পাচারের প্রধান পথ হিসেবে ব্যবহার করে আসছে।

মিয়ানমার থেকে এই রৌট দিয়ে ছোট ইঞ্জিনচালিত কাঠের নৌকা বা মাছ ধরার ছোট ট্রলারে ইয়াবার বড় চালান ঢুকে। এরপর সাগরে অবস্থান নেওয়া ইয়াবা পাচারে জড়িত বাংলাদেশি মাছ ধরার ট্রলারে ইয়াবার চালানগুলো হাতবদল করে তারা মিয়ানমারে ফিরে যায়। ইয়াবার চালান নিয়ে বাংলাদেশি ওইসব মাছ ধরার ট্রলারগুলো স্বাভাবিক গতিতে ঢুকে যায় বিভিন্ন পয়েন্টে।

টেকনাফ শামলাপুর এলাকার জেলে নুরুল ইসলাম জানান, সাগরে অনেক ট্রলারে করে জেলেরা মাছ ধরতে যায়। তবে কে প্রকৃত জেলে, কে ইয়াবা কারবারি তা বুঝা বেশ মুশকিল। তবে বাংলাদেশি জেলেদের চেয়ে রোহিঙ্গারা এখন জেলে হয়ে সাগরে নামছে। তারা মাছ ধরার ট্রলারে জেলে ছদ্মবেশে সাগরে গিয়ে ইয়াবা পাচারে যুক্ত হচ্ছে।

এছাড়া অনেক মাছ ধরার ট্রলার মালিকও ইয়াবা পাচারে তাদের ট্রলারগুলো ব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে। অনেক জেলে আবার ট্রলার মালিকের অজান্তে ট্রলারে ইয়াবা পাচার করে আসছে। সাগরে রোহিঙ্গা নাগরিকদের নামার সুযোগ বন্ধ করা গেলে ইয়াবা পাচার অনেকটা কমে যাবে।

টেকনাফের স্থানীয় জেলেরা জানান, সাগরে শত শত মাছ ধরার ট্রলারের ভিড়ে ইয়াবা পাচারকারীদের ট্রলারও সুযোগ বুঝে ওঁৎ পেতে থাকে। মিয়ানমার থেকে ছোট নৌকায় বা কাঠের ট্রলারে ইয়াবার চালান এনে তুলে দেওয়া হয় সাগরে মাছ ধরার বেশে অবস্থান নেওয়া ট্রলারে। পরে ইয়াবার চালান পাচারকারী এসব ট্রলারও মাছ ধরার ট্রলারের সঙ্গে ঢুকে পড়ে নৌ-ঘাটে। সুযোগ বুঝে খালাস করা হয় ইয়াবার চালানগুলো।

কোস্ট গার্ড টেকনাফ স্টেশন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কমান্ডার আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ আরো বলেন, এ মাসে কোস্টগার্ড সাগরে অভিযান চালিয়ে সাড়ে চার লাখ ও সাড়ে তিন লাখ পিস ইয়াবার দুটি চালান জব্দ করেছে। পৃথক দুটি অভিযানে ইয়াবা পাচারে জড়িত সাতজন রোহিঙ্গা নাগরিককে আটক করা হয়েছে। সাগরপথে ইয়াবা পাচারকারীদের ধরতে সাগরে কোস্টগার্ডের তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে বলেও জানান তিনি।

টেকনাফ উপজেলা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সভাপতি মাস্টার জাহেদ হোসেন বলেন, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সাগরে অভিযান চালিয়ে বেশ কয়েকটি বড় চালান জব্দ করতে সক্ষম হলেও ইয়াবার আরো বড় চালান আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর অগোচরে দেশে ঢুকে যেতে পারে। আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার একার পক্ষে ইয়াবা ধরা বা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়, জনগণকে সবচেয়ে বেশি সচেতন এবং সজাগ থাকতে হবে। কালেরকন্ঠ

আইএনবি/বি.ভূঁইয়া